Image description

দরজায় কড়া নাড়ছে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ সময় আগামী ২৯ ডিসেম্বর। সে হিসাবে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার সময় আর মাত্র দু’দিন বাকি। এর মধ্যে বিএনপি তাদের সমমনা ও শরিকদলগুলোর সাথে আসন সমঝোতা চূড়ান্ত করে ফেলেছে। এরই মধ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঐতিহাসিক রাজসিক প্রত্যাবর্তনে দল এবং জোটের রাজনীতিতে এক নতুন উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছে। বিএনপি এবং তাদের জোটের সবাই এখন উজ্জীবিত।

অন্যদিকে আসন সমঝোতা নিয়ে জামায়াতে ইসলামীর সাথে তাদের ৮ দলীয় জোটের শরিকদের মধ্যে চলছে টানাপোড়েন। এ নিয়ে জামায়াতের সাথে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশের মধ্যে এখনো আলোচনা চলছে। সংশ্লিষ্ট লিয়াজোঁ কমিটি দফায় দফায় বৈঠক করছে। তবে দলগুলোর বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায় যে খুব শিগগিরই তারা একটি সমঝোতায় পৌঁছাতে পারবেন এবং তাদের জোটের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করবেন।

আসন সমঝোতা নিয়ে ৮ দলের জটিলতার মধ্যে নতুন করে আলোচনায় এসেছে এনসিপি। জামায়াতের সঙ্গে নির্বাচনী জোট করতে এনসিপিও অন্তত অর্ধশত আসনের দাবি করেছে। এ দলটির সাথে সমঝোতা হলে তাদের জন্য সবাইকে আরো ছাড় দিতে হবে।

এছাড়া আরো কিছু দল আসন সমঝোতার জন্য যোগাযোগ করছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এনসিপিতে যোগ না দিলেও সাবেক দুই উপদেষ্টা মাহফুজ আলম এবং আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়াও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। তাদের মধ্যে সাবেক তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের বিষয়টি বেশ আলোচিত হচ্ছে। তিনি হয়তো বিএনপির সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতায় যেতে পারেন এমন গুঞ্জন এখনো রাজনৈতিক অঙ্গনে শোনা যাচ্ছে। সব মিলিয়ে রাজনীতিতে একটি নতুন মেরুকরণের আভাস পাওয়া যাচ্ছে।আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসন সমঝোতার ভিত্তিতে অংশগ্রহণের জন্য দীর্ঘদিন ধরে প্রক্রিয়া চালাচ্ছে জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত আন্দোলন, নেজামে ইসলাম পার্টি, জাগপা ও বাংলাদেশ ডেভলেপমেন্ট পার্টি। ইসলামী দলগুলোর ভোট একবক্সে নিয়ে সরকার গঠনেরও টার্গেটে এগোতে চায় তারা। এর সাথে আবার নতুন করে যুক্ত করতে চাচ্ছে এনসিপিসহ আরো কয়েকটি দলকে।

নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ ডিসেম্বর রাতে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহেরের বাসায় এনসিপির কয়েক শীর্ষ নেতার এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সে এনসিপির নেতারা জামায়াতে ইসলামীর সাথে আসন সমঝোতার মাধ্যমে নির্বাচনে অংশ নেয়ার আলোচনা করে। সূত্র মতে, তারুণ্যের এই নতুন দলটি জামায়াতের কাছে ৫০টি আসন দাবি করেছে। জামায়াত তাদের সাথে ৩০টি আসনে সমঝোতা করতে রাজি হয়েছে। তবে তাদের এ আলোচনা এখনো চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছায়নি। এনসিপি এ বিষয়টি তাদের দলীয় ফোরামের আলোচনার পর ২৭ ডিসেম্বর চূড়ান্ত করার লক্ষে আবারো আলোচনায় বসতে পারে বলে সূত্র জানিয়েছে।বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের গতকাল বলেন, আমাদের ৮ দলের মধ্যে আসন সমঝোতার বিষয়টি প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। আগামী দু’-এক দিনের মধ্যে ৮ দলের শীর্ষ নেতারা বসে চূড়ান্ত তালিকা ঘোষণা করবেন।

এই ৮ দলের বাইরেও আরো কয়েকটি দলের সাথে নির্বাচনী জোটের আলোচনা হচ্ছে। এর মধ্যে এনসিপিও আছে। সব মিলিয়ে আশা করছি খুব শিগগির আমরা একটি বড় নির্বাচনী জোটের দিকে অগ্রসর হতে পারবো। যা আগামী নির্বাচনে একটি নতুন মেরুকরণ হয়ে দেখা দেবে।এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, নির্বাচনী জোট বা আসন সমঝোতার ব্যাপারে আমরা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে আলোচনা অব্যাহত রেখেছি। বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিষয়টিকে আমরা এখন গুরুত্ব দিচ্ছি। এ ক্ষেত্রে জামায়াতে ইসলামী বা ইসলামী ধারার দলগুলোর সাথেও আমাদের আলোচনা চলমান আছে। আগামী দু’-একদিনের মধ্যে সব বিষয় পরিষ্কার হবে বলে আশা করছি।ইসলামী আন্দোলনের সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রিন্সিপাল মাওলানা মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী গতকাল বলেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বাধীন আটদলীয় জোটে আছে এবং জোটের শরিক দল হিসেবে আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিবে। এ ব্যাপারে আসন বণ্টনের বিষয়টি ৮০ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। এনসিপিও জামায়াতের নেতৃত্বাধীন আটদলীয় জোটে আসছে। আজ-কালের মধ্যেই আট দলীয় জোটের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ আনুষ্ঠানিকভাবে আসন বণ্টের ঘোষণা দিবেন।আটদলীয় জোটের সাথে আসন বণ্টন নিয়ে সমঝোতার বিষয়ে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের শীর্ষ নেতা মাওলানা ফজলুর রহমান বলেন, জামায়াতে ইসলামের নেতৃত্বাধীন আটদলীয় জোট থেকে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস বেড়িয়ে আসার কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে আমাদের সাথে জামায়াতের মধ্যে নির্বাচনী আসন বণ্টন নিয়ে দফায় দফায় আলোচনা হচ্ছে।বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির শীর্ষ নেতা মাওলানা আব্দুল্লাহ মাসউদ খান বলেন, নেজামে ইসলাম পার্টির পক্ষ থেকে প্রায় ৪০টি আসনে ছাড় দেয়ার জন্য জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বাধীন আটদলীয় জোটে প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। গত রাতে এ ব্যাপারে হাই কমান্ডের মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত আসতে পারে। আশা করছি নেজামে ইসলাম পার্টিকে ১০ থেকে ১২টি আসনে ছাড় দিতে পারে আটদলীয় জোট।