রাজশাহীতে যানজট কমানোর লক্ষ্য নিয়ে নির্মিত ফ্লাইওভারগুলো এখন নগরবাসীর জন্য উলটো ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে নির্মাণকাজ বন্ধ ও ধীরগতির কারণে সড়কে বাড়ছে ঝুঁকি, দুর্ভোগ এবং দুর্ঘটনার আশঙ্কা। একই সঙ্গে প্রায় ৪৯২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন পাঁচটি ফ্লাইওভারের প্রয়োজনীয়তা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন নগরবাসীর একাংশ।
২০১৯ সালে রাজশাহী নগরীতে সাতটি ফ্লাইওভার নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সে সময় সমন্বিত নগর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় রাজশাহী সিটি করপোরেশন প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ পায়। কিন্তু প্রায় সাত বছরে কাজ হয়েছে সাকল্যে ৩০ শতাংশ। তবে জুলাই অভ্যুত্থানের পর নতুন প্রশাসক ২৩২ কোটি ১৬ লাখ টাকা ব্যয়ের দুটি ফ্লাইওভার প্রকল্প বাতিল করেন। আর গত জুলাই মাস ধরে কাজ পুরো বন্ধ রেখেছেন ঠিকাদার।
নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে দেখা গেছে, প্রশস্ত ও তুলনামূলক শান্ত সড়কের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে ফ্লাইওভারের পিলার। অসম্পূর্ণ নির্মাণকাজের নিচে ভাঙাচোরা রাস্তা, ধুলাবালি ও দীর্ঘ যানজটে স্থবির হয়ে পড়েছে ব্যস্ত সড়ক। কোথাও হঠাৎ সরু রাস্তা, কোথাও উঁচু-নিচু ঢাল ও ছোট-বড় খানাখন্দের মধ্যে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে যানবাহন ও পথচারীরা। নগরবাসীর অভিযোগ, রাজশাহীর মতো তুলনামূলক শান্ত ও প্রশস্ত শহরে একসঙ্গে পাঁচটি ফ্লাইওভার নির্মাণ অপ্রয়োজনীয়। এতে বিপুল অর্থ ব্যয় হলেও বাস্তব কোনো সুফল মিলছে না। বরং শহরের স্বাভাবিক পরিবেশ, সৌন্দর্য ও সড়ক ব্যবস্থাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। নগরীর ডিঙ্গাডোবার বাসিন্দা এহতেশাম রহমান বলেন, ‘রাজশাহীতে এমনিতেই খুব বেশি যানজট নেই। এখানে একটার পর একটা ফ্লাইওভার বানানো মানে শুধু টাকা নষ্ট করা। এতে শান্ত শহরের সৌন্দর্যও নষ্ট হচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, রাস্তায় যানজটের কারণে অনেক রোগী রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সহজে পৌঁছাতে পারছেন না। দূরদূরান্ত থেকে আসা মানুষকেও চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।’ সুপ্রিয়া সরকার নামের আরেক বাসিন্দা বলেন, ‘রাজশাহীতে আগে কোনো বড় যানজট ছিল না। ফ্লাইওভার নির্মাণের কাজ শুরু হওয়ার পর থেকেই যানজট শুরু হয়েছে। আমার মনে হয়, এসব ফ্লাইওভার অযথাই নির্মাণ করা হচ্ছে। দরকার হলে হয়তো আরও ৫০ বছর পরে করা যেত। কিন্তু এখনই নির্মাণ করতে গিয়ে মানুষের দুর্ভোগ বাড়ানো হয়েছে। কবে এ থেকে নিস্তার পাব, জানি না।’
সিটি করপোরেশন বলছে, ভবিষ্যতের যানজট বিবেচনায় এসব ফ্লাইওভার প্রয়োজনীয়। তবে নির্মাণকাজে ধীরগতির বিষয়টি স্বীকার করে দ্রুত কাজ শেষ করার আশ্বাস দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। রাজশাহী সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) আহমদ আল মঈন বলেন, ‘ভবিষ্যতে যানবাহনের চাপ বাড়বে, এই বিষয়টি মাথায় রেখেই ফ্লাইওভার প্রকল্পগুলো নেওয়া হয়েছে। কিছুটা ধীরগতি থাকলেও আমরা দ্রুত নির্মাণকাজ শেষ করার চেষ্টা করছি।’