Image description

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ডামাডোল শুরু হয়েছে। গত বছরের ৫ আগস্টের পর নতুন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এবারের নির্বাচনে অন্যতম আকর্ষণ ইসলামি দলগুলোর নির্বাচনি ঐক্য। দলগুলো পাঁচ দফা দাবি নিয়ে যুগপৎ আন্দোলনও করছে। নির্বাচন ঘিরে প্রতিটি দল প্রার্থীও প্রায় চূড়ান্ত করেছে। তবে নির্বাচনি সমঝোতায় জামায়াতসহ আটটি দল এখনো তাদের চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেনি।

যুগপৎ আন্দোলন করা আটটি দল হলো- বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত মজলিস, নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি ও জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি।

ডিসেম্বরের শুরুতেই চূড়ান্ত প্রার্থী দেবে ইসলামি দলগুলো

 

ইসলামি দলগুলোর নেতারা জানিয়েছেন, পাঁচ দফা দাবির আন্দোলনসহ প্রতিটি দলের প্রার্থী নির্বাচনের কার্যক্রমে থাকায় আট দলের প্রার্থী তালিকায় কিছু বিলম্ব হচ্ছে। তবে আগামী ডিসেম্বর মাসের শুরুতেই প্রার্থীদের নাম প্রকাশ করা হবে। এরই মধ্যে চলছে আসন ভাগাভাগির আলোচনা। বিভিন্ন দল নিজেদের সম্ভাব্য আসন চাহিদা তুলে ধরলেও সেটি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। কোন দল কত আসনে প্রার্থী দেবে—সে বিষয়ে আলোচনা ও দরকষাকষি অব্যাহত রয়েছে দলগুলোর শীর্ষ পর্যায়ে।

এর আগে নিশ্চিত ঐক্যের পর ইসলামি দলগুলো জানিয়েছে, আসন ভাগাভাগি হবে আলোচনার মাধ্যমে। সবার চাহিদা ও এলাকার অবস্থান অনুযায়ী সমঝোতা করে প্রার্থী দেওয়া হবে। যেসব দলের সঙ্গেই সমঝোতা হবে, আসন ছাড় কিংবা ত্যাগ ব্যতীত ঐক্য হবে না। ইসলামি দল যারা আমরা একযোগে চলছি, সবার ক্ষেত্রে একই কথা। যেখানে যে দলের প্রার্থীর অবস্থান ভালো, আমরা সেখানে তাকে বেশি গুরুত্ব দেব। প্রায় সব দলের ত্যাগের মানসিকতা থাকতে হবে।

 

আসন ভাগাভাগির লড়াইয়ে জামায়াত-ইসলামী আন্দোলন

নির্বাচনি সমঝোতায় আসা আট দলের মধ্যে নেতাকর্মীর দিক দিয়ে বড় দল জামায়াতে ইসলামী। এর আগেও দলটি থেকে একাধিক সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। অন্যদিকে দেশের কওমি ঘরানা ও তাবলিগের বৃহৎ অংশ নিয়ে সাংগঠনিক ও রাজনৈতিকভাবে কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।

ডিসেম্বরের শুরুতেই চূড়ান্ত প্রার্থী দেবে ইসলামি দলগুলো

দুল দুটির নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, দুটি দলের মধ্যেই আসন ভাগাভাগি নিয়ে প্রতিযোগিতা হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের একজন কেন্দ্রীয় নেতা জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা আর জামায়াত সমান সমান আসনে প্রার্থী দিতে চাইব। আমাদের সেই প্রত্যাশা রয়েছে। আবার কম-বেশিও হতে পারে। আমাদের ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি রয়েছে। ২০০ আসনে আমাদের অবস্থান ভালো। তবে সবকিছু সমঝোতার ওপর নির্ভর করবে। এখানে বড়-ছোট দলের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো প্রার্থী কতটা জনপ্রিয়।

এদিকে জামায়াতে ইসলামীর বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে, তারা ২০০’র বেশি আসনে নির্বাচন করতে চায়। সারাদেশেই তাদের ভালো অবস্থানের কথা জানিয়েছেন। এবারের নির্বাচনে তারা ‘ইনক্লুসিভ প্যানেল’ও দিচ্ছেন।

ডিসেম্বরের শুরুতেই চূড়ান্ত প্রার্থী দেবে ইসলামি দলগুলো

গত অক্টোবর মাসে খুলনা জেলায় জামায়াতের এক সমাবেশে দলটির সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, আসন সমঝোতা করতে করতে শেষ পর্যন্ত আমাদের ১০০ আসনও ছেড়ে দিতে হতে পারে। তবে কমপক্ষে ২০০ আসনে আমরা নির্বাচন করবো।

জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগর দক্ষিণের মজলিশে শুরার একজন সদস্য জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা শুরু থেকেই বলছি, ‘ইসলামি দলগুলো এক হলে আমরা সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করবো। আমাদের তো ৩০০ আসনে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি রয়েছে। যেহেতু সমঝোতা করছি হয়তো ২৩০ থেকে ২৪০ আসনে সমঝোতা করে নির্বাচন করবো।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে আরও কয়েকটি দল আসতে পারে। সেক্ষেত্রে আমরা হয়তো ২০০ আসনে প্রার্থী দেবো। এটা আমাদের সেক্রেটারি জেনারেলও বলেছেন।’

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যক্ষ ইউনুস আহমাদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘১৫০ আসনে আমাদের ভালো অবস্থান দেখেছি। আমরা কত আসনে পাবো, সেটা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। যেখানে প্রার্থী দেওয়া হবে, সেখানে অন্য সাত দলের কর্মীরা একই প্রার্থীর জন্য কাজ করবেন।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের দলে মিটিং করেছি, প্রার্থী প্রায় চূড়ান্ত। তবে সমঝোতার পর কত আসনে আমাদের প্রার্থী হবে, এটা এখনো নিশ্চিত নয়। আমাদের আট দলের একটা ভাষ্য হলো বেশি আসনে প্রার্থী দেওয়ার চেয়ে ঠিক কত আসনে জিতে আসতে পারবো সেটা গুরুত্বপূর্ণ।’

জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও প্রচার বিভাগের প্রধান এহসানুল মাহবুব জোবায়ের জাগো নিউজকে বলেন, ‘জামায়াত সর্বোচ্চ সমঝোতা করেই নির্বাচন করবে। ডিসেম্বরের শুরুতেই আশা করি সবাই মিলে প্রার্থী ঘোষণা করবো। কে কত বেশি আসনে নির্বাচন করবে, এর চেয়ে বেশি জরুরি কার কয়টি আসনে জিতে আসার আত্মবিশ্বাস, জনসমর্থন ও সামর্থ্য রয়েছে।’

তিনি বলেন, প্রত্যেক দলের যাকেই প্রার্থী দেওয়া হবে, সবাই জয়ের আত্মবিশ্বাস নিয়ে নির্বাচনি মাঠে থাকবে। প্রতিটি আসনে আমাদের জামায়াতের জেলা, উপজেলা পর্যায়ে ওই প্রার্থীর জন্য কাজ করবে। আমাদের সমঝোতায় টার্গেটই থাকবে প্রার্থীকে জিতিয়ে আনা। অন্য দলের হলেও আমরা ওই প্রার্থীর জন্য নির্বাচনি কাজে টাকা-পয়সা ব্যয় করবো।’

১০০ আসনে নির্বাচন করতে চায় বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১০০ আসনে নির্বাচন করতে চায় মাওলানা মামুনুল হকের বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস।

ডিসেম্বরের শুরুতেই চূড়ান্ত প্রার্থী দেবে ইসলামি দলগুলো

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের প্রার্থী তালিকা প্রায় চূড়ান্ত। আট দলের সঙ্গে আমরা আন্দোলনও করছি। তবে সমঝোতা করে নির্বাচন করবো কি না এটা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। আমাদের দলের নীতি-নির্ধারকরা শিগগির বসবেন, সেখানে নির্বাচনের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।’

সমঝোতা হলে আপনারা কতটি আসন পেতে পারেন কিংবা কয়টি আসনে নির্বাচন করতে চান- এমন প্রশ্নের জবাবে জালালুদ্দীন আহমদ বলেন, ‘আমরা মিনিমাম ১০০ আসনে নির্বাচন করতে চাই। আমাদের নিজস্ব ২৭৪ আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করা আছে। এখন আট দল মিলে আগামী মাসে চূড়ান্ত করে বলা যাবে।’

খেলাফত আন্দোলনের শীর্ষ একজন নেতা জাগো নিউজকে বলেন, আসন ভাগাভাগি নিয়ে এক সপ্তাহ ধরে কাজ করছেন তারা। জামায়াত শরিকদের জন্য কতটি আসন ছাড়বে, এটা এখনো চূড়ান্ত নয়। আট দলের মধ্যে তারা সবচেয়ে বড় দল, তারা বেশি আসনে নির্বাচন করবে এটা স্বাভাবিক। তবে ঐক্য হওয়ার আগে সবার ভাষ্য ছিল, আট দলের শীর্ষ নেতাদের জন্য সবাইকে ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। আট দলের শীর্ষ নেতাদের আমরা সংসদে দেখতে চাই। আমাদের শীর্ষ নেতারা সেটা মাথায় রেখে প্রার্থী চূড়ান্ত করবেন, এটা মোটামুটি নিশ্চিত।

নেজামে ইসলাম পার্টির মহাসচিব মাওলানা মুসা বিন ইযহার জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের দলের নিজস্ব প্রার্থী তালিকা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। আমরা ১০০ আসনে প্রস্তুত আছি। সর্বশেষ কত আসনে প্রার্থী থাকবে তা সবাই বসে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।’