Image description

নির্বাচনি কর্মকর্তাদের নজরদারিতে রাখতে নিরাপত্তা কৌশল প্রণয়ন করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এর লক্ষ্য দায়িত্বের প্রতি তাদের অবিচল রাখা এবং সচেতনতা বৃদ্ধি করা। এ কৌশল বাস্তবায়ন করা গেলে নির্বাচনে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে নির্বাচনি কর্মকর্তাদের নজরদারিতে রাখা হবে। এজন্য একটি কৌশল প্রণয়নে কাজ চলছে। দ্রুতই এটি চূড়ান্ত করা হবে। তবে নির্বাচনি কর্মকর্তাদের নিয়ন্ত্রণ করার জন্য প্রাথমিক একটি রূপরেখা তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে—কমিশন নিজ উদ্যোগে নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করা কর্মকর্তাদের বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন (এসিআর) দেবে, যা আগে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দিতেন। যারা নির্বাচনের সময় স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন, তাদের এখন থেকে বিভিন্ন কেন্দ্রে ঘুরে ঘুরে দায়িত্ব পালন করতে হবে। কমিশনের নিজস্ব কর্মকর্তারাও তাদের নজরদারি করবেন। এরপরও যারা নির্বাচনে অনিয়ম করবেন তাদের শাস্তি দিতে পারবে ইসি।

এসিআর হলো বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন। এটি একজন সরকারি কর্মকর্তার কর্মদক্ষতা, আচরণ এবং অন্যান্য গুণাবলি মূল্যায়ন করে তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কর্তৃক তৈরি করা হয়, যা কর্মকর্তাদের পদোন্নতি এবং কর্মজীবনের অন্যান্য সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি হিসেবে কাজ করে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নির্বাচন কমিশন যে এসিআর দেবে, তাতে থাকবে কর্মকর্তাদের নির্বাচনি দায়িত্ব পালনের সফলতা-ব্যর্থতার হিসাব। দায়িত্বে অবহেলা ও ত্রুটির অপরাধে যেমন ভর্ৎসনা শুনতে হবে, ঠিক একইভাবে নির্বাচনে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন ও কাজের জন্য পুরস্কৃতও করা হবে। যা নির্বাচন পরিচালনাকারী কর্মকর্তা, সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা (এআরও), ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা (প্রিসাইডিং, সহকারী প্রিসাইডিং ও পোলিং কর্মকর্তা) এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য—সবার জন্য প্রযোজ্য হবে।

ইসি সূত্র জানায়, ভোটকেন্দ্রের নিরাপদ দূরত্বে থেকে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু সদস্য। আগামী নির্বাচন থেকে তাদের প্রতি কেন্দ্রে ঘুরে ঘুরে দায়িত্ব পালন করতে হবে। এ সংক্রান্ত নির্দেশনা আগামী নির্বাচন থেকে কার্যকর হবে। এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ফলে কমিশন মনে করছে, ভোটকেন্দ্রের পরিবেশ শান্ত থাকবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইসির দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা আমার দেশকে বলেন, নির্বাচনি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ পাওয়া যায়। অধিকাংশই তাদের দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করেন না। তারা প্রায়ই নিজের সুবিধা ও লাভ খুঁজতে ব্যস্ত থাকেন। যদি ভালো একটা নির্বাচন করতে হয়, তাহলে অবশ্যই একটি চেইন অব কমান্ডের মধ্যে তাদের আনতে হবে। এজন্য আমরা একটা কৌশল বা পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছি।

তিনি আরো বলেন, নির্বাচন পরিচালনা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তারা (আরইও)। তাদের অধীনে থাকেন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা (এআরও), ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য। অনেকেই এ সময় আরইওদের নির্দেশনা অমান্য করেন। এতে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। তাই আমরা চিন্তা করছি, আরইওরা ভোটের আগে-পরে তিনদিনের জন্য তাদের অধীনে দায়িত্ব পালন করা কর্মকর্তাদের বিষয়ে এসিআর দেবেন। আরইওদের অনিয়ম পেলে শাস্তির ব্যবস্থা করবে কমিশন। এসব বিষয় নির্বাচনি আইনেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, বিগত তিন নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের অভিজ্ঞতা অত্যন্ত বাজে। এসব নির্বাচনে ব্যক্তি সুবিধার কথা বিবেচনা করে কর্মকর্তারা ক্ষমতাবানদের অবৈধ সুবিধা দিয়েছেন। কিন্তু তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা যায়নি। ফলে এবার ভিন্ন কৌশল নিতে যাচ্ছে নাসির উদ্দিনের কমিশন। এর অংশ হিসেবে আগামী নির্বাচনে ভোটে দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের এসিআর দেওয়া হবে। নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার উপসচিব এ সংক্রান্ত কর্মপরিকল্পনা তৈরি করছেন। এ বিষয়ে কমিশন পর্যায়েও আলোচনা হয়েছে।

এ ধরনের কৌশল নেওয়ার বিষয়ে নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, এ কমিশন একটি অংশগ্রহণমূলক, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন জাতিকে উপহার দিতে চাইছে। এটি শুধু তখনই সম্ভব হবে, যখন নির্বাচন কর্মকর্তারা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করবেন।

ইসি সূত্রে জানা যায়, ভোটকেন্দ্রের ভেতরে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকেন পুলিশ ও আনসার সদস্যরা। বাইরে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে র‌্যাব, বিজিবি এবং সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। অতীতে তারা নির্দিষ্ট কেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করতেন। কিন্তু এবার তাদের বিভিন্ন কেন্দ্র ঘুরে ঘুরে দায়িত্ব পালন করতে হবে। নির্বাচনের আগেই এ বিষয়ক নির্দেশনা দেওয়া হবে। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা গেলে আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু হবে বলে আশা করা যায়।

এ বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. দিলারা চৌধুরী আমার দেশকে বলেন, ইসি আমলাদের এসিআর দেবে, বিষয়টি ইতিবাচক। ফলে যারা নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করবেন, তাদের ওপর একটা চাপ থাকবে। তিনি আরো বলেন, নির্বাচনে দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তা অন্যায় করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে কমিশনকে। দোষীদের বিরুদ্ধে যদি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যায়, তাহলে পরবর্তী কমিশনগুলো এর সুফল পাবে।

স্ট্রাইকিং ফোর্স যদি বিভিন্ন কেন্দ্রে ঘুরে ঘুরে দায়িত্ব পালন করে, তাহলে তা নির্বাচনে ইতিবাচক প্রভাব রাখবে বলে মনে করেন এ রাজনৈতিক বিশ্লেষক। তিনি বলেন, স্ট্রাইকিং ফোর্সকে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে এবং বিভিন্ন কেন্দ্রে টহল দিতে হবে। এই কাজ করলে অপরাধীরা ভয় পাবে। শুধু তাই নয় কারো যদি কোনো অসৎ উদ্দেশ্য থাকে, তাহলে তারা তা বাস্তবায়ন করতে পারবে না। সার্বিকভাবে বলা যায়, ইসির এসব পরিকল্পনা যদি বাস্তবায়ন করা যায়, তাহলে নির্বাচনে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।