Image description

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে রাজপথের সঙ্গী যুগপৎ আন্দোলনের জোট ও দলগুলোর কাছে তাদের সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকা চেয়েছে বিএনপি। সমমনারা তালিকা দেয়ার পরে দলের প্রার্থীদের প্রাথমিক তালিকা চূড়ান্ত করতে চায় বিএনপি। খুব শিগগিরই যুগপৎ আন্দোলনের দলগুলো নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে তাদের প্রার্থী তালিকা জমা দেবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। যদিও জোটের কোনো কোনো দল এই উদ্যোগকে সন্দেহের চোখে দেখছে। দলগুলোর কয়েকজন শীর্ষ নেতা আবার এই প্রক্রিয়া নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। তাদের ভাষ্য, যুগপৎ আন্দোলনের কোনো দল চাইছে ৫টি আসন, সেই দলকে ১টি আসন দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়া হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে আবার যে আসন চাচ্ছে তাকে সেই আসনও দেয়া হচ্ছে। ওদিকে আগামী অক্টোবর মাসের মধ্যে দলীয় প্রার্থীদের প্রাথমিক তালিকা চূড়ান্ত করতে চায় বিএনপি। দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ শুরু করেছে দলটি।
ইতিমধ্যে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী সমমনা দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তাদের কাছে সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা চেয়েছেন তারা। কোনো কোনো নেতার সঙ্গে আসন নিয়েও কথা হয়েছে। এ নিয়ে জোট ও দলগুলো নিজেদের মধ্যে আলোচনা করবে। এরপরে তাদের সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা প্রণয়ন করবে। কোনো জোট তাদের সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা প্রণয়নও করেছে। আবার কোনো কোনো জোট ও দল এখনো কাজ শুরু করেনি। যদিও তালিকা জমা দেয়ার জন্য নির্দিষ্ট কোনো সময়সীমা বেঁধে দেয়নি বিএনপি। 

জোটের সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা প্রণয়নের কাজ শেষ করেছে ১২ দলীয় জোট। যথাসময়ে বিএনপি’র কাছে তাদের জোটের সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা জমা দেবে। প্রার্থী চূড়ান্তের ক্ষেত্রে এলাকায় সম্পৃক্ততা, জনপ্রিয়তা, গ্রহণযোগ্যতা, পদ-পদবি এবং নির্বাচনে অভিজ্ঞতাকে প্রাধান্য দিচ্ছেন তারা। এ নিয়ে আজ ১২ দলীয় জোটের বৈঠকে বসার কথা রয়েছে।  ১২ দলীয় জোট বিএনপি’র কাছে কত আসন চেয়েছে তা সেদিন জোটের পক্ষ থেকে প্রকাশ করা হবে জানা গেছে। তালিকার সত্যতা নিশ্চিত করে ১২ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতা ও বাংলাদেশ এলডিপি’র চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম মানবজমিনকে বলেন, ইতিমধ্যে আমরা ১২ দলীয় জোটের সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা নিয়ে কাজ শুরু করেছি। সবার সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। যথাশিগগির বিএনপি’র কাছে তালিকা হস্তান্তর করা হবে।

১২ দলীয় জোটের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা মানবজমিনকে বলেন, দুই-একদিনের মধ্যে ১২ দলীয় জোটের তালিকা আমরা বিএনপি’র কাছে জমা দেবো। 

অন্যদিকে সম্প্রতি যুগপৎ আন্দোলনের কোন দল ও জোট কতটি আসন চায় এবং কোন আসন চায়- তার একটি তালিকা বিএনপি’র তরফ থেকে চাওয়া হয়েছে। এ নিয়ে দল ও জোটগুলোর মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। যে দল যতগুলো আসন চাচ্ছে, তাকে সেই পরিমাণ আসন দেয়া হচ্ছে। আবার যে আসন থেকে জোটের নেতা নির্বাচন করতে চাচ্ছেন- তাকেও সেই আসন দেয়া হচ্ছে। এ নিয়ে বিএনপি’র সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনের দল ও জোটগুলোর দ্বন্দ্ব দৃশ্যমান হচ্ছে। কোনো কোনো নেতা ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন।

নামপ্রকাশ না করার শর্তে যুগপৎ আন্দোপনের অন্যতম একটি দলের একজন শীর্ষ নেতা মানবজমিনকে বলেন, আমি যে আসন থেকে নির্বাচন করতে চাচ্ছি, আমাকে বিএনপি সেই আসন দিতে চাচ্ছে না। আমাকে বলছে, তুমি ওমুক আসন থেকে নির্বাচন করো। আমার এলাকা, যেখানে আমি জনপ্রিয়, যে আসনে নির্বাচন করলে আমি জয়ী হবো-আমাকে সেই আসন দেয়া হচ্ছে না। আসন নিয়ে উদাহরণ টেনে এই নেতা আরও বলেন, তারা দল ৫টি আসন চাচ্ছে, কিন্তু তাদের মাত্র ১টি আসন দিতে চাচ্ছে বিএনপি। মূলত জোটকে ধরে রাখতে বিএনপি এই প্রক্রিয়া (প্রার্থী তালিকা) অবলম্বন করেছে বলেও মনে করেন এই নেতা।  

যুগপৎ আন্দোলনের অন্যতম শরিক জোট গণতন্ত্র মঞ্চের কাছেও আসন সম্পর্কে জানতে ও তাদের প্রার্থী তালিকা চেয়েছে বিএনপি। তবে গণতন্ত্র মঞ্চ এ নিয়ে এখনো কাজ শুরু করেনি। মঞ্চের শীর্ষ নেতা ও নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না মানবজমিনকে বলেন, বিএনপি আমাদের কাছে তালিকা চেয়েছে। এখন আমরা বসবো এবং আলোচনা করবো। আর নির্বাচনের কৌশল নির্ধারণ কি হবে, এটা জানার পরে আমরা বলতে পারবো। 

গত মঙ্গলবার গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বিএনপি’র সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সমমনাদের আসন ছাড়ার বিষয়ে আলোচনা হয়। দলটি সমমনাদের ৫০টি আসন ছাড়ার চিন্তা-ভাবনা করছে। একইসঙ্গে দলের মনোনয়ন চূড়ান্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। আগামী মাসের মধ্যে দল ও জোটের প্রার্থিতা চূড়ান্ত করতে চায় বিএনপি। প্রার্থী চূড়ান্ত করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে।