Image description
সংখ্যায় গরমিল, তদন্ত চলছে

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ব্যবহৃত ব্যালট পেপারগুলো অরক্ষিতভাবে নগরের নীলক্ষেত এলাকায় ছাপা ও কাটা  হয়েছে। এই তথ্য প্রকাশের পর নির্বাচন প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। যদিও ব্যালট ছাপার দায়িত্বপ্রাপ্তরা বলছেন, গোপনীয়তা রক্ষা করেই ব্যালট ছাপা হয়েছে। তারপরও কোনো অনিয়ম হয়ে থাকলে তদন্ত করা হচ্ছে।

একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের প্রতিবেদন অনুযায়ী নীলক্ষেতের জালাল প্রেসে ব্যালট ছাপা হয়েছে; অন্যদিকে ব্যালটগুলো কাটা হয়েছে ‘মক্কা পেপার কাটিং হাউস’-এ। জালাল প্রেসের মালিক মো. জালাল স্বীকার করেছেন যে, তার প্রেসে কাজটি করা হয়েছে এবং কাজটি দিয়ে ছিলেন এক সাপ্লায়ার, যার নাম মো. ফেরদৌস। মালিক ও কাটিং কর্মীদের বিবরণ অনুযায়ী জালাল প্রেস থেকে মোট ৯৬ হাজার পিস ব্যালট ছাপা হয়েছে বলে একটা হিসাবের কথা তিনি বলেন। মক্কা কাটিং হাউস বলছে রাতের এক সময়ে তারা ২২ রিম কাগজ কেটে প্রায় ৮৮ হাজার ব্যালট তৈরি করেছে। এই হিসাবগুলোর মধ্যে প্রায় ৮ হাজার ব্যালটের ফাঁক বা গরমিল রয়েছে।

সরজমিন কথা হয় জালাল প্রেস ও মক্কা কাটিং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে। সেখানে মেলে ভিন্ন তথ্য। জালাল প্রেসের মালিক জালাল দাবি করেছেন, তিনি মোটেও ৯৬ হাজার ব্যালট ছাপাননি। তার ভাষ্য, ‘আমি ৮৬ হাজারের মতো ব্যালট ছেপেছি। কিছু কমবেশি হতে পারে, তবে ৮৮ হাজারের বেশি নয়। আমাকে যত কাগজ দেওয়া হয়েছিল, সেটির চেয়ে বেশি ব্যালট ছাপানো সম্ভব নয়। এর মধ্যে আবার কিছু ওয়েস্টেজও থাকে।’

জালাল আরও জানান, তারা আসলে রিম হিসেবে কাগজের হিসাব করেন, আলাদা করে ব্যালট গোনেন না। তিনি বলেন, ‘যদি কোনো কাগজ নষ্ট না হয়, তবে প্রতিরিমে প্রায় ৪ হাজার ব্যালট হয় প্রতি পেজে ৮টি ব্যালট।’

বেসরকারি টিভি’র প্রতিবেদকের প্রশ্নে ৯৬ হাজার ব্যালট ছাপানোর কথা স্বীকার করেছিলেন কেন এমন প্রশ্নে জালাল বলেন, ‘ভিডিওতে দেখবেন, ওই রিপোর্টার একটি হিসাব বলে আমাকে জিজ্ঞেস করেছে, ৯৬ হাজার ব্যালট? তখন আমি বলেছি হ্যাঁ, ওরকমই হবে। কিন্তু সেটা আমি নিজে হিসাব করে বলিনি। কাজের চাপ আর সাংবাদিকের জেরার মধ্যে আমি খেয়াল হারিয়ে ফেলেছিলাম। উনি আমাকে বলছিলেন ৯৬ হাজার ছাপিয়েছি কিনা, এভাবে প্রশ্ন করায় আমি বলি হ্যাঁ এমনই হবে’। 
মক্কা কাটিং হাউসের মালিক আলিফ জানান, বাদশার দোকান থেকে পাওয়া ২২ রিম কাগজ দিয়ে ৮৮ হাজার ব্যালট হয়। তবে ছাপানো বা কাটিংয়ের সময় বিভিন্ন কারণে কিছু ব্যালট নষ্ট হওয়া স্বাভাবিক। এজন্য অর্ডারের সময় অতিরিক্ত কাগজ দেয়া হয়। তিনি বলেন, ‘মেশিনে ডিস্টার্ব, কালির সমস্যা, কাটিংয়ের সময় ছিঁড়ে যাওয়া বা কালি লেগে যাওয়া- এসব কারণে ব্যালট নষ্ট হতে পারে। তাই ঠিক কত ব্যালট টিকে থাকে, সেটা আমরা বলতে পারি না। সেটা বলতে পারবেন সাপ্লায়ার, যিনি গুনে বুঝিয়ে দেন।’

টেন্ডারধারী প্রতিষ্ঠান যা বললো:  
ডাকসু নির্বাচন-এর ব্যালট পেপার ছাপানো ও ওএমআর মেশিনে গণনার টেন্ডার পায় আনজা করপোরেশন। আনজা করপোরেশনের চেয়ারম্যান জাহিদ হোসেন স্বীকার করেছেন যে, ব্যালট ছাপানোর কাজে তাদের অংশ রয়েছে; তিনি দাবি করেছেন, তাদের কেরানীগঞ্জে অবস্থিত নিজের প্রেস থেকেই ব্যালট ছাপানো হয়েছে এবং সংস্থাটি মোট ১ লাখ ৫৩ হাজার ব্যালট ছাপিয়েছে। 
আনজা করপোরেশনের সরবরাহকারী ফেরদৌস ওয়াহিদ দাবি করেছেন, জালাল প্রেসে যে ব্যালট ছাপানো হয়েছে সেগুলো কোনোভাবেই চূড়ান্ত ব্যালট নয়, বরং কেবল প্রাথমিক প্রিন্টিং। জালাল প্রেস যেগুলো ছাপিয়েছে, সেগুলো মেশিনে রিড করবে না। এগুলো শুধু ব্যালট সদৃশ কাগজ। আমাদের অফিসে এনে কয়েক ধাপ প্রক্রিয়ার পর প্রি-স্ক্যান করে চূড়ান্তভাবে ব্যবহারযোগ্য করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, প্রি-স্ক্যানের পরই এসব ব্যালট প্যাকেট করা হয়। পুরো কাজটি মূলত পেয়েছিল আনজা কর্পোরেশন। তার প্রতিষ্ঠান কেবল সহযোগিতামূলকভাবে কিছু কাজ করেছে।

কমিশন ও প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া: নির্বাচনের প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন জানান, ব্যালট প্রক্রিয়া একটি অত্যন্ত বিশেষায়িত কাজ; এর জন্য যে মালাটাইনের মেশিন লাগে। টেন্ডার প্রক্রিয়ায় একমাত্র একটি ব্র্যান্ড আবেদন করেছিল অন্য কারও কাছে এই মেশিন না থাকায় একমাত্র কোম্পানিকে কাজ দেয়া হয়। নীলক্ষেতে ছাপানোর সুযোগ নেই। তবে অভিযোগের বিষয় কমিশন ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন খতিয়ে দেখছে। কমিশন একটি উচ্চতর তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে এবং শিগগিরই সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত জানানো হবে। 

ডাকসু ভিপি ও শিবিরের কেন্দ্রীয় প্রকাশনা সম্পাদক  আবু সাদিক কায়েম এ বিষয়ে বলেন, ডাকসু নির্বাচন ঘিরে যে অভিযোগগুলো এসেছে, সেগুলোর উত্তর নির্বাচন কমিশন দেবে। ডাকসু নির্বাচনে আমরা শিক্ষার্থীদের ব্যাপক উৎসাহ দেখতে পেয়েছি; পোলিং এজেন্ট, সাংবাদিকসহ সবাই ভোট গণনার সময় একসঙ্গে ছিলেন এবং সেগুলোর সিসিটিভি ফুটেজ রয়েছে। যেই দাবিগুলো আনা হয়েছে সেটাকে আমরা সাধুবাদ জানাই, নির্বাচন কমিশনের উচিত হবে তাদের সহযোগিতা করা ও উত্তর দেয়া।