Image description

বাংলাদেশ থেকে প্রথমবারের মতো সড়কপথে পণ্যবাহী কন্টেইনার যাচ্ছে ভুটানে। এর মধ্যদিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে আসা দেশটির ট্রানজিট পণ্য ভারতের ভূমি ব্যবহার করে ভুটানে পরীক্ষামূলকভাবে পরিবহন শুরু হচ্ছে। বুধবার  রাত সাড়ে ৯টার দিকে চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল থেকে এক কন্টেইনার পণ্যের চালান নিয়ে একটি গাড়ি বুড়িমারী স্থলবন্দরের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।

সূত্রমতে, দক্ষিণ এশিয়ার হিমালয়কন্যা ভুটান স্বাধীন রাষ্ট্র হলেও নিজেদের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে এখনো অন্য দেশের ওপর নির্ভরশীল। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে দেশটির কোনো সমুদ্রবন্দর নেই, এমনকি নৌবন্দর গড়ার মতো নদীপথও নেই। ভুটানের দীর্ঘদিনের প্রধান এবং একমাত্র আন্তর্জাতিক রুট ছিল ভারতের ভূমি ও সমুদ্রবন্দর। দেশটির অভ্যন্তরীণ কয়েকটি ড্রাই পোর্ট, ফুয়েন্টশোলিং, গিলেফু, সামদ্রুপ জংখার ও সামতসে থেকে পণ্য সড়কপথে আসে ভারতের ভূখণ্ডে, সেখান থেকে আবার ট্রাক ও রেলযোগে পৌঁছায় কলকাতা ও হলদিয়া বন্দরে। কলকাতা সমুদ্রবন্দরই ভুটানের আমদানি-রপ্তানির প্রধান গেটওয়ে হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে বহু বছর ধরে। এই রুটে ভুটান মূলত জ্বালানি তেল, মেশিনারি, বৈদ্যুতিক ও ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশ, নির্মাণসামগ্রীসহ বিভিন্ন ভোগ্যপণ্য আমদানি করে। বিপরীতে তারা জলবিদ্যুৎ, ফেরো অ্যালয়, খনিজ পাথর, কাঠ, সিমেন্ট ও কৃষিপণ্য রপ্তানি করে। ভারতীয় বন্দরের ওপর একক নির্ভরতা কমাতে ভুটান ক্রমশ ঝুঁকছে বাংলাদেশের সমুদ্রবন্দর ব্যবহারের দিকে। 

সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে ২০২৩ সালের ২২শে মার্চ সই হওয়া ‘এগ্রিমেন্ট অন দ্য মুভমেন্ট অব ট্রাফিক-ইন-ট্রানজিট’ চুক্তি ও প্রটোকলের আওতায় পরীক্ষামূলকভাবে চালানটি চট্টগ্রাম বন্দরে আসে প্রায় দুই মাস আগে। ভুটানের চালানটি ‘এমভি এইচআর হীরা’ জাহাজে চট্টগ্রাম বন্দরে এসেছিল। জাহাজ থেকে নামানোর পর কন্টেইনারটি নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনালে ছিল। থাইল্যান্ড থেকে আসা ভুটানের পরীক্ষামূলক চালানটিতে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার কেজি পণ্য রয়েছে। এর মধ্যে শ্যাম্পু, শুকনো পাম ফল, আইস টি, চকলেট, অরেঞ্জ জুস ইত্যাদি রয়েছে।  চালানটির রপ্তানিকারক থাইল্যান্ডের অ্যাবিট ট্রেডিং কোম্পানি লিমিটেড। চালানটি আমদানি করেছে ভুটানের এবিট ট্রেডিং। কাস্টমসের শুল্কায়নসহ বিভিন্ন সংস্থার অনুমোদনের পর রোববার চালানটি খালাসের প্রক্রিয়া শুরু করে ভুটানের পণ্য খালাসের জন্য নিযুক্ত বাংলাদেশের প্রতিনিধি মানুমা শিপিং লাইন্স লিমিটেড।

জানা গেছে, প্রতি চালানে ডকুমেন্ট প্রসেসিং ফি ৩০ টাকা, ট্রান্সশিপমেন্ট ফি প্রতি টন ২০ টাকা, নিরাপত্তা চার্জ প্রতি টন ১০০ টাকা, এসকর্ট ফি প্রতি কন্টেইনারে কিলোমিটার প্রতি ৮৫ টাকা, প্রশাসনিক মাশুল প্রতি টন ১০০ টাকা এবং স্ক্যানিং ফি প্রতি কন্টেইনারে ২৫৪ টাকা পাবে বাংলাদেশ। পরীক্ষামূলক চালানের জন্য সড়ক টোল ও মাশুল নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম পোর্ট অ্যাকসেস রোডে ১২ কিলোমিটারের টোল সড়ক রয়েছে, যার জন্য ৪৫ টাকা টোল দিতে হবে। এ ছাড়া মেঘনা, মেঘনা-গোমতী, যমুনা এবং তিস্তা ব্রিজের জন্য মোট টোল দিতে হবে ৪ হাজার ৮১৫ টাকা। আবার ট্রেইলারের মোট ওজন ধরে প্রতি টনে টোল ফ্রি সড়কের (৬৭২ কিলোমিটার) জন্য মাশুল দিতে হবে ১ হাজার ৪৬২ টাকা। এ হিসাবে সাড়ে ৬ টন পণ্যের জন্য ১০ হাজার ২৩৪ টাকা মাশুল দিতে হবে।

সূত্রে জানা যায়, ট্রায়াল রানে বিভিন্ন বিষয়ের উপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং কোনো সমস্যা থাকলে সেগুলো চিহ্নিত করা হবে। পরবর্তীতে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে বিষয়গুলো ঠিকঠাক হওয়ার পর ভুটান চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করে নিয়মিত পণ্য পরিবহন করতে পারবে।

মানুমা শিপিং লাইন্স লিমিটেড প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক ওমর শরীফ রাফসান জানান, প্রায় ৬৮৪ কিলোমিটার সড়কপথ অতিক্রম করে কন্টেইনারবাহী ভারী যান যাবে বুড়িমারী স্থলবন্দরে। সেখান থেকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্ধা স্থলবন্দর দিয়ে শিলিগুড়ি হয়ে ভুটানের ফুয়েন্টশোলিং স্থলবন্দরে পৌঁছাবে চালানটি। কাস্টমসের একটি এসকর্ট টিম চালানটিকে বুড়িমারি স্থলবন্দর পর্যন্ত নিরাপত্তা দিচ্ছে।

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের ডেপুটি কমিশনার এইচএম কবির বলেন, চালানটির মধ্যে আমাদের দেশের ভাবমূর্তি, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আমাদের দক্ষতা ও গ্রহণযোগ্যতার বিষয় জড়িত। তাই আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি। আমরা আশা করি দ্রুততম সময়ে চালানটি বুড়িমারী স্থলবন্দরে পৌঁছাবে।