বিসিএস ১৭ ব্যাচের পুলিশ কর্মকর্তা রেজাউল করিম মল্লিক। ১৯৯৮ সালে যোগদান করেন পুলিশে। মেধাবী এই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে শুরু হয় ষড়যন্ত্র। নির্যাতিত, অবহেলায় কাটিয়ে দেন প্রায় দেড়যুগ। পদবঞ্চিতের পাশাপাশি পুলিশের অগুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন ইউনিটে তাকে পদায়ন করা হতো। প্রয়োজন হলে তাকে ছুটিও দেয়া হতো না। নিজের বাবা, মা ও বড় ভাইয়ের মৃত্যুর সময়ও ছুটি পাননি। দীর্ঘ ১৮ বছর এসব সহ্য করার পর ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে স্বৈরাচার সরকারের পতন হয়। তারপর তাকে ডিআইজি হিসাবে পদোন্নতি দিয়ে পদায়ন করা হয় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) প্রধান হিসাবে।
পুলিশ কর্মকর্তা রেজাউল দায়িত্ব গ্রহণের পর ডিবিকে কলঙ্কমুক্ত করার কাজ শুরু করেন। একদিকে ভেঙে পড়া পুলিশ বাহিনীকে কর্মমুখী করা অন্যদিকে অপকর্মের সদর দপ্তর ডিবিকে পুনরায় সংগঠিত করার চ্যালেঞ্জ। সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার হারুনের আমলে যেসব অনিয়ম ছিল সেগুলো দূর করার উদ্যোগ নেন। কর্মকর্তা-কর্মচারী থেকে শুরু করে, কাজের ধরন, পলিসি সর্বত্রই পরিবর্তন নিয়ে আসেন। এরমধ্যে তাকে হঠাৎ করে সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়া ডিবি থেকে সরিয়ে দিয়ে দীর্ঘদিন ডিএমপি সদর দপ্তরে সংযুক্ত করে রাখা হয়েছিল। তারপর গত মে মাসে তাকে ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হিসাবে পদায়ন করা হয়।
সূত্র বলছে, কাজপাগল রেজাউল রেঞ্জ ডিআইজি হিসাবে দায়িত্ব নিয়ে আবারো রেঞ্জের আওতাধীন ১৩টি জেলাকে ঢেলে সাজানোর কাজ শুরু করেন। তার দক্ষ নেতৃৃত্বে প্রতিটি জেলায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়। অপরাধ দমন ও অপরাধী গ্রেপ্তার বাড়তে থাকে। রাতারাতি পুরো রেঞ্জ এলাকায় পরিবর্তন আসে। দায়িত্বশীল কর্মকর্তা হিসেবে তিনি শুধু কাগজে-কলমে নয়, মাঠেও সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে তিনি প্রায়ই রেঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় নিজে উপস্থিত থেকে তদারকি করছেন। আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখতে একাধিক আলোচিত অভিযানে নেতৃত্ব দিয়েছেন। গোপালগঞ্জে আওয়ামী লীগের কিছু দুষ্কৃতকারীকে কঠোরভাবে দমন করতে তিনি সশরীরে তিনদিন সেখানে অবস্থান করেন। পারিবারিক জীবনে একাধিক প্রতিকূলতা সত্ত্বেও দায়িত্ব পালনে তিনি কখনো পিছু হটেননি। তার স্ত্রী দীর্ঘদিন ধরে জটিল শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছেন, তবুও তিনি নিয়মিত কর্মস্থলে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। কিন্তু ষড়যন্ত্র পিছু ছাড়ছে না তার। যখন তিনি সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছিলেন ঠিক তখনি তার বিরুদ্ধে একটি মহল অপপ্রচার চালানো শুরু করেছে। পুলিশের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তোলা তার ছবি ও ভুয়া তথ্য দিয়ে ভিডিও কন্টেন তৈরি করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছেড়ে দিচ্ছে। সম্প্রতি তাকে বিভিন্ন মাধ্যম থেকে হুমকি-ধমকিও দেয়া হচ্ছে।
জানা গেছে, মাদারীপুরের শিবচরে একটি বড় রাজনৈতিক দলের বিতর্কিত নেতার মনোনয়ন স্থগিত হয়। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ঘরানার অনেকের সঙ্গে ওই নেতার বিপুলসংখ্যক ছবি ভাইরাল হয়। এরপরেই দলের হাইকমান্ড তার মনোনয়ন স্থগিত করে। ওই মহল মনে করছে- রেজাউল করিম মল্লিক তার মনোনয়ন স্থগিত করিয়েছে। এরপর থেকে চক্রটি নানান অপ্রচার চালাচ্ছে পুলিশের এই কর্মকর্তাকে নিয়ে।
সম্প্রতি মাদারীপুর জেলা বিএনপির নেতা সাজ্জাদ হোসেন সিদ্দিকী (লাভলু) ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি রেজাউল করিম মল্লিকের নামে মিথ্যাচার, বানোয়াট ও নোংরামির প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে একজন সৎ মানুষকে যদি অসৎ বানানোর চেষ্টা করা হয় তবে আমার সঙ্গে সঙ্গে সবারই প্রতিবাদ করা উচিত। এখন পর্যন্ত শতভাগ সৎ পুলিশ অফিসার রেজাউল। তার এত বছরের কর্মজীবনে এখন পর্যন্ত খারাপ কিছু শুনিনি। কিছুদিন আগে শেখ হাসিনার ফাঁসির রায় দেন আদালত। আমরা ভেবেছিলাম ফরিদপুরে অনেক কিছু ঘটে যাবে। কিন্তু রেজার কঠিন পদক্ষেপে একটা ঘটনাও ঘটেনি ফরিদপুর এলাকায়। এমন একজন কর্মকর্তার জন্য আমাদের শিবচরবাসীর গর্ব করা উচিত।