Image description
শেষ মুহূর্তে টানাপড়েন

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপি-জামায়াতে ইসলামীর বাইরে নতুন জোট গড়ার তৎপরতা নিয়ে এগোচ্ছে এনসিপিসহ কয়েকটি দল। এই জোট মধ্যমপন্থার রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা রাখবে বলে উদ্যোক্তারা বলছেন। নতুন রাজনৈতিক জোট গঠনের আলোচনায় গতি পেলেও আপ বাংলাদেশ ও গণঅধিকার পরিষদকে কেন্দ্র করে শরিকদের ভেতর টানাপড়েন তৈরি হওয়ায় ঘোষণার তারিখ ঠিক করেও তা আর হয়নি।

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আপত্তির কারণে শেষ মুহূর্তে স্থগিত হয়েছে চার দলীয় প্রস্তাবিত এই জোটের ঘোষণা। গতকাল সকালে রাজধানীর শহীদ আবু সাঈদ কনভেনশন সেন্টারে জোটের আত্মপ্রকাশ করার কথা থাকলেও রাতেই তা স্থগিত করা হয়। দলীয় সূত্র জানায়, আপ বাংলাদেশ ইস্যুতে এনসিপি’র নেতারা কিছু আপত্তির কথা জানিয়েছেন। এসব বিষয় নিয়েই তাদের ভেতরে কোন্দল দেখা গেছে।  জোটের নেতৃত্বসহ অনেক বিষয় এখনো নির্ধারণ বাকি। তবে জোট হবে, হয়তো একটু সময় লাগবে। প্রস্তাবিত জোটের প্রক্রিয়ায় রয়েছে-জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টি, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন ও ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশ (আপ বাংলাদেশ)। ‘গণতান্ত্রিক সংস্কার জোট’ নামে এই জোট গঠনের আলোচনা চলছে। 

সূত্র জানায়, এনসিপি’র অভ্যন্তরীণ কোন্দলে বুধবার রাতের মিটিং স্থগিত করা হয়েছে। সূত্র আরও বলছে, প্রস্তাবিত জোটে গণঅধিকার পরিষদকে যুক্ত করারও আলোচনা আছে।  জোটে যুক্ত হওয়া নিয়ে গণঅধিকারের অভ্যন্তরে দু’টি মত রয়েছে। একপক্ষ চাইছে বিএনপি’র সঙ্গে আসন নিয়ে আলোচনা করতে। অন্যপক্ষ এনসিপি’র সঙ্গে নতুন জোট করার বিষয়ে আগ্রহী। এ কারণে দলীয় কোনো সিদ্ধান্ত হচ্ছে না। তাদের অভ্যন্তরীণ এসব বিষয় যদি সমাধান না হয় তাহলে গণঅধিকার পরিষদ এনসিপি’র সঙ্গে নতুন জোটে যেতে পারছে না। 

এনসিপি’র একটি সূত্র জানায়, বুধবার রাতে দলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির জরুরি বৈঠকে আপ বাংলাদেশকে জোটে নেয়ার বিপক্ষে অবস্থান নেন নেতাদের একাংশ। প্রস্তাবটি বৈঠকে অনুমোদন না পাওয়ায় আপাতত জোট প্রক্রিয়া স্থগিত করা হয়েছে। আপ বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেয়ারা ’২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেয়া অনেকে আছেন। তারা একসময় এনসিপি’র বর্তমান নেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ছিলেন। মানসিক দ্বন্দ্ব থেকেই তারা আপ বাংলাদেশ গঠন করেন। এ কারণে এনসিপি নেতাদের কেউ কেউ আপ বাংলাদেশকে নিয়ে জোট গড়তে আপত্তি জানাচ্ছেন। 

আপ বাংলাদেশের দলীয় সূত্র বলছে, এনসিপি’র ভেতরের মতবিরোধের কারণে জোট গঠনের ঘোষণায় দেরি হচ্ছে। তবে এখনো জোট গঠনের বিষয়ে ইতিবাচক অবস্থান আছে। সূত্র জানায়, প্রাথমিক আলোচনায় দলগুলোকে দায়িত্ব সমবণ্টন ভিত্তিতে চলার কথা বলা হয়। সব দল জোটে সমান অবস্থানে থাকবে বলে আলোচনা হয়েছে।   

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম সদস্য সচিব মুশফিক উস সালেহীন মানবজমিনকে বলেন, আলোচনা এখনো চলমান। ইতিবাচক সিদ্ধান্ত আসলে তা আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে। 

এবি পার্টির সহকারী প্রচার সম্পাদক আজাদুল ইসলাম আজাদ মানবজমিনকে বলেন, জোটের আত্মপ্রকাশ আপাতত স্থগিত রয়েছে। তবে অনানুষ্ঠানিকভাবে আলোচনা চলছে। খুব শিগগরই প্রকাশ পাবে নতুন এই জোট। এনসিপি’র ভেতরে কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা বাকি আছে। আপ বাংলাদেশকে নিয়ে তাদের কিছু আপত্তি রয়েছে। সেই জায়গা থেকেই দেরি হচ্ছে। 

ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশের (আপ বাংলাদেশ) প্রধান সংগঠন নাইম আহমাদ মানবজমিনকে বলেন, কারও একক নেতৃত্বে জোট পরিচালিত হবে না। সমন্বিত নেতৃত্বে জোট পরিচালিত হবে। এভাবেই আলোচনা হয়েছিল। গতকালের ইন্টারনাল সমস্যার কারণে আর আগায়নি। 

উল্লেখ্য, গত ২৪শে নভেম্বর এনসিপি’র মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী আনুষ্ঠানিকভাবে জানান, নির্বাচনকে সামনে রেখে সমমনা দলগুলোর অংশগ্রহণে নতুন জোট গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।