Image description
সংসদ নির্বাচন

আসন্ন ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের দিনকে ঘিরে তিন স্তরে নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েনের পরিকল্পনা নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ভোটকেন্দ্রে স্ট্যাটিক এবং নির্বাচনী এলাকায় মোবাইল ও রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে মোতায়েন থাকবে। তফসিল ঘোষণা হলে প্রথম দিন থেকে আচরণবিধি প্রতিপালনে কঠোরভাবে ভূমিকা রাখার জন্য নির্দেশনা দিয়েছে কমিশন।

গতকাল সকালে ৩ ঘণ্টাব্যাপী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ ব্যক্তি ও প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দিন। এ সময় চার নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী, পুলিশ, বিজিবি, আনসার ভিডিপি, কোস্ট গার্ড, র‌্যাবসহ বিভিন্ন সংস্থা/বিভাগের প্রধান ও প্রতিনিধিরা অংশ নেন। বৈঠক শেষে ‘আইনশৃঙ্খলা মোতায়েন পরিকল্পনা, সমন্বয়, দিকনির্দশনামূলক সভার’ সার্বিক বিষয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন ইসি সচিব আখতার আহমেদ। সচিব বলেন, আইনশৃঙ্খলার বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দায়িত্ব পালন করবে। তারা গাইডলাইনস, প্রিন্সিপালস যেগুলো আছে কীভাবে কি কাজ করবেন, না করবেন- সে সম্পর্কে তারা অন্যান্যবারের মতো দিকনির্দেশনা দিবেন। ইলেকশন কমিশনে আমরা ওভারঅল মনিটরিং এবং কোঅর্ডিনেশনটা আমরা দেখবো।  এখানে আমরা একটা মনিটরিং সেল করবো। সেই সঙ্গে আরেকটা ‘সাইবার সিকিউরিটি সেল’ থাকবে।

তিনি বলেন, সাইবার সিকিউরিটি সেল- যেখানে সোশ্যাল মিডিয়ার প্ল্যাটফরমগুলোকে মনিটর করা হবে যে অপতথ্য থেকে যেন মুক্ত থাকতে পারি। ইউএনডিপি’র সঙ্গে একটা ওদের প্ল্যাটফরম আছে সেটা ব্যবহার করবো। ইসি’র নিজস্ব সক্ষমতা যেটা আছে তথ্য মন্ত্রণালয়, সিআইডি এবং অন্যান্য যে এজেন্সি ফ্যাক্ট চেকের ব্যাপারে যে সমস্ত সক্ষমতা আছে সেগুলো আমরা কোঅর্ডিনেট করবো। সঠিক তথ্য সরবরাহ ও তা তৃণমূলে পৌঁছে দিতে অবাধ তথ্যপ্রবাহের কর্মকৌশলও রয়েছে ইসি’র। 

সচিব আখতার আহমেদ বলেন, আমাদের ডেপ্লয়মেন্ট প্ল্যানে মূলত  তিনটা ভাগ রয়েছে। একটা  স্ট্যাটিক, যা  কেন্দ্রভিত্তিক, কেন্দ্রে কিছু নিরাপত্তা কর্মী স্ট্যাটিক থাকবেন। এর সঙ্গে চেকপোস্ট বিভিন্ন চেকপোস্টের মাধ্যমে স্ট্যাটিক চেকপোস্ট হতে পারে, মোবাইল চেকপোস্ট হতে পারে। মোবাইল চেকপোস্ট হলে হয়তো এক জায়গায় করা হলো; সেখান থেকে আবার ২ কিলোমিটার দূরে, সেটাও আবার স্ট্যাটিক ইন নেচার। তিনি বলেন, মোবাইল কম্পোনেন্ট থাকবে, মোটামুটিভাবে তারা ঘুরে ঘুরে দেখবে। কেন্দ্রগুলোর  ভৌগোলিক অবস্থান, এক্সেস রোড সার্বিক বিবেচনায় রেখে সংশ্লিষ্ট বাহিনী ঠিক করবে। আর (তৃতীয়টি) আরেকটা থাকতে হবে ‘সেন্ট্রাল রিজার্ভ’। কবে তফসিল ঘোষণা করা হবে জানতে চাইলে ইসি বলেন, তফসিল ঘোষণার খবরটা যখনই আমি পাবো, তার পাঁচ মিনিটের মধ্যে আপনাদের জানিয়ে দেবো।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উদ্দেশ্যে প্রয়োজনীয় নির্দেশনার বিষয়ে ইসি সচিব বলেন, পূজার সময় একটা অ্যাপ ডেভেলপ করেছিল- সেই অ্যাপটাও আমরা ব্যবহার করবো। সাইবার সিকিউরিটির বিষয়টা নিয়ে স্ট্রাটেজিক প্ল্যান রয়েছে। সবসময় একটা কন্টিনজেন্সি প্ল্যান রাখা দরকার; যদি দুই-তিনটা জায়গায় ঝামেলা হয় তাহলে কন্টিনজেন্সি প্ল্যানটা কাজে দেবে। মোটামুটিভাবে কন্টিনজেন্সি প্ল্যানটা থাকতে হবে যেন ব্যাকআপ আসপেক্টটা থাকে, টেকনোলজির ব্যবহার সর্বোত্তম ব্যবহারটা করা যেতে পারে। পার্বত্য চট্টগ্রামের কিছু কিছু জায়গায় মোবাইল এক্সেসে সীমাবদ্ধতা, ইন্টারনেট ফ্যাসিলিটির বিষয়গুলো বিবেচনায় রেখে প্রস্তুতি রাখার জন্যও বলা হয়েছে।

সচিব জানান, এ ছাড়া অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, বৈধ অস্ত্র জমা নেয়া, গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো, সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়াসহ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তৎপরতা বাড়ানোর জন্য বলা হয়েছে। তিনি জানান, সন্ত্রাসী যারা আছে চিহ্নিত তাদের বিষয়ে আরও নজরদারি রাখতে হবে এবং আইনের আওতায় আনতে হবে। ইলেকটোরাল ইনকোয়ারি কমিটি, জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে থাকবেন। পাশাপাশি সেনাবাহিনীকে ‘ম্যাজিস্ট্রিয়াল পাওয়ার’ ২৮শে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রয়েছে। পোস্টাল ভোটিংয়ের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসারসহ সংশ্লিষ্টদের নিরাপত্তা ও প্রয়োজনীয় সহযোগিতার নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। রিটার্নিং অফিসারের কাছে পাঠানোর ব্যাপারে রাস্তার নিরাপত্তা এবং এটা সম্পূর্ণভাবে নজরদারিতে রাখা, রিটার্নিং অফিসারের কেন্দ্রের কাছে যখন পৌঁছাবে তার কাস্টডিতে যখন থাকবে সেখানে নিরাপত্তাটা নিশ্চিত করা এবং কাউন্টিংয়ের সময় যেন প্রয়োজনীয় নিরাপত্তাটা দেখা হয়- এই চারটা জিনিসের ভেতরে গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। ইসি সচিব জানান, সারা দেশে একই দিনে ভোট হবে। গণভোট এবং জাতীয় সংসদের নির্বাচনে ভোট। কাজেই মুভমেন্ট বাড়বে- সে ক্ষেত্রে স্থানীয় পর্যায়ে যানবাহনের স্বল্পতার বিষয়টা আছে। সরকারি দপ্তর ও স্থানীয়ভাবে ভাড়ায় সংগ্রহ করতে হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব জানান, ডেপ্লয়মেন্ট প্ল্যানের সার্বিক সমন্বয়ের দায়িত্বটা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের। রিটার্নিং অফিসারের, তাদের সঙ্গে সমন্বয় করে কেন্দ্রে থাকতে হবে। রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে থাকবেন নাকি স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে থাকবেন এটা ওরা গ্রাজুয়ালি তৈরি করে নেবেন। এটা আমরা রেফারেন্স পয়েন্টগুলো বলে দিয়েছি যে, আমাদের প্রয়োজনটা হচ্ছে এইভাবে আপনারা এইভাবে ডেপ্লয়মেন্ট প্ল্যানটা করেন কতোজন থাকবেন কীভাবে থাকবেন না থাকবেন এটা আরও পরবর্তী পর্যায়ক্রমে আমাদের কাছে আসবে, সময়-সীমা কতোদিন থাকবে সে সম্পর্কেও কোনো কিছু হয়নি, এটা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলবে। সচিব জানান, সেনাবাহিনী ইন এইড টু সিভিল পাওয়ারে কন্টিনিউ করবে, তাদের ম্যাজিস্ট্রিয়াল পাওয়ার দেয়া আছে ২৮শে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত, সেটা বহাল থাকবে। আরপিও’র সঙ্গে কোনো ক্ল্যাশ করবে না। 

সভায় উপস্থিত ছিলেন- স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব খন্দকার মো. মাহাবুবুর রহমান, ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী, আনসার-ভিডিপি’র মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আব্দুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ, ডিজিএফআইয়ের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম, বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী, র‌্যাব মহাপরিচালক এ কে এম শহিদুর রহমান, এসবি প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি গোলাম রসুল, সিআইডি’র অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক ছিবগাত উল্ল্যাহ।