Image description

গত শুক্রবার ৫.৭ মাত্রার ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে ঢাকাসহ পুরো দেশ। এ ঘটনায় তিন জেলা ভবনের দেয়াল ধসে ১০ জনের প্রাণহানি ঘটে। শক্তিশালী এই প্রাকৃতিক আঘাতের পর থেকে ভূমিকম্প ফোবিয়ায় ভুগছেন নারীরা। বিশেষ করে শিশুদের মানসিকতায় প্রচণ্ডভাবে আঘাত হানে। তাদের স্বাভাবিক আচরণে পরিবর্তন দেখা দিয়েছে। অনেক শিশুই আতঙ্কে ঘুমাতে পারছে না। আমিনা তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে।

শুক্রবার সকালে খাবার টেবিলে বসে নাস্তা করছিল সে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই বাবা তার হাত ধরে সাততলা থেকে দৌড়ে নিচে নেমে যায়। এরপর ভূমিকম্প থেমে গেলেও স্বাভাবিক হতে পারছে না আমিনা। সারাক্ষণ মাথাব্যথা আর পা কাঁপছে। রাতেও ঘুমাতে পারছে না। আমিনার বাবা মাসুদ বলেন, রাত ২টা পর্যন্ত আমিনা বসে আছে, কিছুতেই তার বিছানাতে যাচ্ছিল না। আনিসা শুক্রবার ভূমিকম্পের সময় নামতে গিয়ে সিঁড়িতেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। তারপর মুখে পানি ছিটানোর পর তার জ্ঞান ফিরে আসে। এরপর থেকে আনিসা আর খাওয়া-দাওয়া করছে না। ১০ম শ্রেণিপড়ুয়া আনিসা বলে, আমার জীবনে আমি কোনোদিন এমন ভূমিকম্প দেখিনি। আমি ভূমিকম্পের সময় শুধু দৌড় দিয়েছিলাম, এরপর আমার আর কিছু মনে নেই। আমার শুধু বমি আসছে। কিছুই খেতে পারছি না।

শনিবার সন্ধ্যায় আবার ভূমিকম্প হওয়ায় ভয় আরও বেড়ে গেছে। তাসনিম পড়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে। বার্ষিক পরীক্ষা চলছে তার। কিছুতেই পড়ায় মন দিতে পারছে না। চেয়ারে বসলেই শুধু মনে হচ্ছে চেয়ার দুলছে। তাসনিম বলে, জানি না কীভাবে পরীক্ষা দেবো। যদি পরীক্ষার হলে ভূমিকম্প হয়, তখন কী করবো। ছয় বছরের আব্দুল্লাহ গত শুক্রবার প্রথমবারের মতো ভূমিকম্প অনুভব করেছে। এর আগে সে ভূমিকম্প কী- সেটা জানতো না। আব্দুল্লাহ’র নানু নীলুফার সুলতানা বলেন, ভূমিকম্পের পর থেকে আব্দুল্লাহ অনেক চুপচাপ হয়ে গেছে। টিভিও দেখছে না সে। তার শুধু একটাই প্রশ্ন- আবার কখন ভূমিকম্প হবে? রাতে যদি হয়, তখন আমরা কী করবো? তার মন থেকে ভূমিকম্প সরানোই যাচ্ছে না।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মানসিক রোগ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. রাজীবুর রহমান বলেন, যেকোনো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ই শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের বিপর্যয় ঘটায়। এই ভূমিকম্পের কারণে শিশুদের মধ্যে দুটো সমস্যা তৈরি হয়। প্রথমত, বাচ্চাদের মধ্যে মানসিক চাপ বা স্ট্রেস সৃষ্টি হয়। আরেকটি হচ্ছে মানসিক আঘাত, যেটাকে আমরা ট্রমা বলি। এই দুই কারণে বাচ্চাদের মধ্যে মানসিক অবস্থার কিছু পরিবর্তন বা বিপর্যয় ঘটে থাকে। যেমন বাচ্চাদের মধ্যে অত্যধিক ফোবিয়া বা ফেয়ার, যেটাকে আমরা বলি আতঙ্ক। একটা ট্রমাটিক ঘটনা ঘটার পর বাচ্চাদের মধ্যে সবচেয়ে বড় যে আঘাতটা ঘটে, সেটা হলো ঘুমের। বাচ্চারা যখন ঘুমাতে যায় তখন তারা ঘুমাতে পারে না। আবার ঘুমের মধ্যে তারা ভয়ঙ্কর স্বপ্ন দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। ভূমিকম্পের পর থেকে এমন সমস্যা অনেক দেখা যাচ্ছে। অনেক অভিভাবক তাদের বাচ্চাদের এ রকম সমস্যা নিয়ে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। অনেক অভিভাবক বলেছেন, তাদের সন্তানদের খাদ্যাভাসে পরিবর্তন এসেছে। তারা খেতে চাচ্ছে না। শিশুদের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। বাচ্চাদের এখন বার্ষিক পরীক্ষা চলছে। দেখা যাচ্ছে তারা পড়াশোনাও ঠিকমতো করতে পারছে না।

ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলে করণীয় কী, সেগুলো শিশুদের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। ভূমিকম্প হলে ভয় না পেয়ে কীভাবে শিশুদের নিরাপদ রাখা যায়, সে বিষয়গুলো তাদের জানাতে হবে। আতঙ্কের কারণে কোনো শিশুর মানসিক বিপর্যয় হলে সেটা যেন মানসিক রোগে পরিণত না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। প্রয়োজন হলে অবশ্যই মানসিক রোগ চিকিৎসক অথবা মনোবিজ্ঞানীর পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।