Image description

সন্তানহারা মায়ের কষ্ট কে বুঝবে? ১২টা বছর আমার সন্তানের খোঁজ নেই। বুকে পাথর চেপে বেঁচে আছি। মৃত্যুর আগে একবার আমার সন্তানের মুখে মা ডাকটা যদি শুনতে পেতাম। ২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানের পরে আমরা আয়নাঘরসহ বিভিন্ন জায়গায় গিয়েছিলাম- কোথাও পাইনি ছেলেকে। ভেবেছিলাম আমার সন্তানও ফিরে এসে মা বলে আমাকে জড়িয়ে ধরবে কিন্তু আসেনি।

শেখ হাসিনার ফাঁসির রায় হয়েছে, হাজার-লাখো বার ফাঁসি দিলেও মন শান্ত হবে না। আমরা তো সন্তানকে ফিরে পাবো না। শুধু একজনের ফাঁসি হলে হবে না, এই নিকৃষ্ট কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যারাই জড়িত তাদের সবার ফাঁসি হতে হবে। আমাদের ছেলের ‘অপরাধ’ ছিল ছাত্রদল করা। গুম-খুন করে কোথায় পুঁতে রেখেছে জানতে পারলেও ছুটে যেতাম কবরে। এভাবে কথাগুলো বলছিলেন ২০১৩ সালের ৬ই ডিসেম্বর নিখোঁজ হওয়া নিজাম উদ্দিন মুন্নার মা ময়ূরী বেগম। মুন্না রাজধানীর বিমানবন্দর থানা ছাত্রদলের তৎকালীন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এদিন রাত ১০টার দিকে সাদা পোশাকে কয়েকজন লোক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে তাকে তুলে নেয়। এরপর থেকে ছেলেকে পাগলের মতো খুঁজতে থাকে পরিবার।

২০১৬ সালে ছেলের শোকে বাবা সামছুদ্দিন স্ট্রোক করে মারা যান। স্বামী এবং সন্তানকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন ময়ূরী বেগম। এখনো সন্তানকে ফিরে পাওয়ার অপেক্ষায় দিন গুনছেন। মানবজমিনকে তিনি বলেন, গণ-অভ্যুত্থানের পরের দিন মনে আশা জেগেছিল হয়তো এবার আমার সন্তানসহ সবাই ফিরে আসবে কিন্তু আসেনি। আমাদের মায়ের বুক যারা খালি করেছে তাদেরও যেন এমন হয়, তাহলে তারা বুঝবে সন্তান হারানো কতো কষ্টের। একজনের ফাঁসি হলে হবে না যারা এই ধরনের নিকৃষ্ট কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত তাদের সবার ফাঁসি হতে হবে। 

তিনি বলেন, বর্তমানে উত্তরায় থাকি, এখানে মুন্নার বাবাকে দাফন করা হয়েছে আমাকেও যেন মারা গেলে এখানে দাফন করা হয়। আমার মুন্না ফিরে আসলে অন্তত একসঙ্গে বাবা-মায়ের কবর দুইটা একসঙ্গে দেখতে পাবে, জিয়ারত করতে পারবে। মৃত্যুর আগে যদি একবার আমার সন্তানের মা ডাকটা শুনতে পারি তাহলে মারা গিয়েও শান্তি পাবো। এখন এটাই আমার আশা-আকাক্সক্ষা। গণ-অভ্যুত্থানের আগে তো অনেক ভয়-আতঙ্কে থাকতাম। ভয়ে নিখোঁজ সন্তানকে ঠিকমতো খুঁজতে পারতাম না। ২০১৩ সালের ৬ই ডিসেম্বর রাত ১০টার সময় মোল্লার টেক এলাকা থেকে আমার ছেলেকে র‌্যাব পরিচয়ে তুলে নিয়ে যায়। এই ১২ বছরে আমি নিঃস্ব হয়ে গেছি। তখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলতো- আমার ছেলে নাকি নিজেই আত্মগোপনে আছে। কীভাবে এত বছর, আত্মগোপনে থাকে, পরিবারের কথা কি মনে পড়েনি? ওর বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে আমি একা হয়ে গিয়েছি। গণ-অভ্যুত্থানের আগের সময়গুলোতে আমরা যে একটা প্রোগ্রাম করবো, একটু মিলাদ পড়াবো সেটারও উপায় ছিল না, খুব চাপে থাকতে হতো। নিখোঁজের প্রথম বছরে এগুলো করতে পারছি, আর তার পরে তো হয়রানি আর হয়রানি। 

তিনি বলেন, আমার ছেলে একটি গ্লাস হাউজে চাকরি করতো। ঘটনার দিন দোকান বন্ধ করে বাসায় আসছিল। আসার পথে র‌্যাব পরিচয় দিয়ে তাকে ধরে নিয়ে যায়। তখন ওর বাবা দেখতে পেয়ে চিৎকার দিলে তারা বলে আপনার ছেলের নামে অভিযোগ আছে, তাকে আমরা থানায় নিয়ে যাচ্ছি। ১১টার দিকে আমার স্বামী বিমানবন্দর থানায় যান। থানা থেকে বলা হয় মুন্না নামে আমাদের থানায় কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।