দুর্বল তারল্য ও অনিয়মের জালে জর্জরিত ব্যাংকগুলোতে বহু গ্রাহক নিজস্ব সঞ্চয় তুলতে হিমশিম খাচ্ছেন। অপরদিকে সামগ্রিক পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে—ব্যাংক খাতে আমানতের প্রবাহ উল্টো বেড়েই চলেছে। অর্থাৎ আস্থা সংকটের মাঝেও মানুষ শেষ পর্যন্ত ব্যাংকিং ব্যবস্থাকেই নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে বেছে নিচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান বলছে— ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বরের শেষে আমানত বছরওয়ারি ৯.৯৮ শতাংশ বেড়েছে—গত ১৮ মাসের মধ্যে এটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি। এর ঠিক আগের মাস আগস্টে প্রবৃদ্ধি ছিল আরও বেশি, ১০.০২ শতাংশ, যা ১৭ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ।
আগস্টে এ উত্থানের ধারাবাহিকতা শুরু হওয়ার আগে টানা ১৩ মাস আমানত প্রবৃদ্ধি ৯ শতাংশের নিচে ছিল। সর্বশেষ ২০২৪ সালের জুনে হার ৯ শতাংশ ছাড়িয়েছিল, তখন তা ছিল ৯.২৫ শতাংশ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বরের শেষে ব্যাংকিং খাতে মোট আমানত দাঁড়িয়েছে ১৯.১৪ লাখ কোটি টাকা—যা ২০২৪ সালের একই সময়ের ১৭.৪১ লাখ কোটি টাকার তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সেপ্টেম্বরের এই অগ্রগতির পরিসংখ্যান ব্যাংক খাতে আস্থা পুনরুদ্ধারের একটি স্পষ্ট ইঙ্গিত। তাদের ভাষায়, দীর্ঘ ১৬ মাসের মন্থরতার পর এটিই সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য পুনরুদ্ধার।
আবার এই একই সময়ে দেশের ব্যাংকিং খাতে বড় অঙ্কের আমানতকারীদের নাটকীয় সরে যাওয়ার প্রবণতাও স্পষ্ট হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান বলছে, মাত্র এক বছরে ৫০ কোটি টাকার বেশি আমানতধারীর হিসাব ৭২টি থেকে নেমে এসেছে ২৬টিতে, আর ২৫-৫০ কোটি টাকার হিসাব অর্ধেকে নেমে দাঁড়িয়েছে ৭৮টিতে। এমন পতন বাংলাদেশের ব্যাংকিং ইতিহাসে খুব কমই দেখা গেছে।
রাজনৈতিক পরিবর্তন, অনিয়ম উন্মোচন ও দুর্বল ব্যাংক একীভূতকরণের মতো পরিবর্তনের ভিড়ে ব্যাংক ছেড়ে রিয়েল এস্টেট, স্বর্ণ ও বিদেশমুখী বিনিয়োগে ঝুঁকছেন বড় ধনী গ্রাহকরা। বিপরীতে দ্রুত বাড়ছে ক্ষুদ্র ও মধ্যম আমানত—যা ব্যাংকিং খাতে একদিকে ঝুঁকি, অপরদিকে সঞ্চয় সংস্কৃতির বিস্তারের নতুন বার্তা দিচ্ছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, ২০২৪ সালের আগস্টে রাজনৈতিক পালাবদলের পর থেকে অতি ধনীদের মধ্যে যে প্রস্থান ধারা শুরু হয়েছে, তা এখন ব্যাংকিং খাতকে গভীরভাবে নাড়া দিতে শুরু করেছে।
এ প্রবণতা কী নির্দেশ করে?
অতি ধনীরা কি ব্যাংকের ওপর আস্থা হারাচ্ছেন? নাকি রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং জবাবদিহির চাপ তাদের অর্থকে অন্যত্র সরিয়ে নিতে বাধ্য করছে? ব্যাংক খাতের ভেতরের লোকজন বলছেন—একটি অবস্থাই স্পষ্ট ধনীরা ব্যাংক থেকে সরে যাচ্ছেন, আর সাধারণ মানুষই এখন ব্যাংকিং খাতের আসল ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অবশ্য সম্প্রতি ব্যাংকিং খাতে সাধারণ আমানতকারীদের সুরক্ষা ও আস্থা বাড়াতে সরকার ‘আমানত সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫’ জারি করেছে। নতুন এই আইনের ফলে কোনও ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান অবসায়ন, দেউলিয়া বা কার্যক্রম বন্ধের পরিস্থিতিতে পড়লে আমানতকারীরা তাৎক্ষণিকভাবে সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা পর্যন্ত ফেরত পাওয়ার নিশ্চয়তা পাবেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিপোজিট ইনস্যুরেন্স বিভাগ (ডিআইডি) থেকে রবিবার (২৩ নভেম্বর) জারি করা নির্দেশনায় বলা হয়েছে, আমানত সুরক্ষা কার্যক্রমকে আরও শক্তিশালী ও দ্রুততর করতে নতুন কাঠামো প্রণয়ন করা হয়েছে। এতে ব্যাংক খাতে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা, আমানতকারীদের নিরাপত্তা এবং আর্থিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিতে একটি সুনির্দিষ্ট উপায় বেরিয়ে এসেছে।
অধ্যাদেশ অনুযায়ী, কোনও ব্যাংক বন্ধ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই ডিআইডি কর্তৃপক্ষ নির্দিষ্ট ব্যাংকের তথ্য যাচাই করে দুই লাখ টাকার মধ্যে প্রাপ্য অর্থ দ্রুত আমানতকারীর হাতে তুলে দেবে।
কোটিপতিরা কেন সরে যাচ্ছেন
২০২৪ সালের ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ব্যাংকপাড়ায় হঠাৎ একটি নীরব আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। অনেক বড় ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক ঘনিষ্ঠ উদ্যোক্তা—যাদের বিপুল অঙ্কের টাকা ছিল ব্যাংকে। তাদের আচরণ পাল্টাতে থাকে। অর্থনীতিবিদরা এর চারটি প্রধান কারণ উল্লেখ করেছেন।
১. পূর্ববর্তী সরকারের সুবিধাভোগীদের ‘সেফ জোন’ খোঁজা: বিগত সরকারের নিকট পরিচিত সুবিধাভোগী অনেকেই রাজনৈতিকভাবে অরক্ষিত অবস্থায় পড়েন। তদন্ত, জিজ্ঞাসাবাদ, দুর্নীতি অনুসন্ধান—এসব সম্ভাবনা সামনে রেখে তারা ব্যাংক হিসাব অদৃশ্য করতে থাকেন।
২. দুর্বল ব্যাংক নিয়ে অনিশ্চয়তা ও একীভূতকরণ প্রক্রিয়া: অনেক ব্যাংক বছরের পর বছর খেলাপিপূর্ণ অবস্থায় ছিল। নতুন সরকার এসব ব্যাংকের একীভূতকরণ প্রক্রিয়া শুরু করে। ধনীরা বুঝতে পেরেছেন—দুর্বল ব্যাংকে বড় অঙ্ক রাখা মানে বড় ঝুঁকি।
৩. অর্থের গন্তব্য পরিবর্তন—রিয়েল এস্টেট, স্বর্ণ ও বিদেশে বৈধ-অবৈধ হস্তান্তর: ব্যাংক থেকে তুলে নেওয়া টাকার বড় অংশ গেছে রিয়েল এস্টেট বিনিয়োগে, স্বর্ণ কেনায়, বিদেশে ব্যবসা বা সম্পদ খাতে, হুন্ডি ও অনানুষ্ঠানিক পথে বহির্গমনে। কারণ এসব খাতে ঝুঁকি কম, আর্থিক গোপনীয়তা বেশি।
৪. রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা—ধনীদের ‘ওয়েট অ্যান্ড সি’ মনোভাব: অতিধনীরা দৃশ্যমান সংকেত না পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করেন। নতুন সরকারের রাজনৈতিক স্থায়িত্ব, নীতিগত দিকনির্দেশনা, অর্থনৈতিক পরিকল্পনা—এসব পরিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত তারা ব্যাংকে বড় অঙ্ক জমা করতে চান না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন—‘বড় সম্পদধারীরা সবসময় রাজনৈতিক পরিবেশ দেখে সিদ্ধান্ত নেন। তাই পরিবেশ পাল্টালে তাদের অর্থ দ্রুত অন্য জায়গায় সরে যাওয়া খুব স্বাভাবিক।’
ব্যাংকিং খাতের তারল্যের ওপর বড় চাপ
বড় অঙ্কের আমানত ব্যাংকগুলোর জন্য যেন ‘অক্সিজেন সিলিন্ডার’। একটি মাত্র বড় আমানতই অনেক সময় ব্যাংকের তারল্য সংকট সামাল দিতে সক্ষম। তাই এই আমানত কমে যাওয়া মানে—
১. তারল্য সংকটের ঝুঁকি বৃদ্ধি: যে ব্যাংকের বড় আমানত বেশি, তার তারল্য অবস্থাও শক্তিশালী। এখন অনেক ব্যাংকই বাধ্য হচ্ছে উচ্চ সুদে আমানত সংগ্রহে।
২. ঋণ বিতরণে অনিশ্চয়তা: বড় অঙ্কের আমানত কমলে ব্যাংককে মধ্য ও ক্ষুদ্র আমানতের ওপর নির্ভর করতে হয়। এতে দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প ঋণ দিতে সাহস পায় না ব্যাংক।
৩. ব্যাংকের ওপর আস্থা দুর্বল হওয়া: যখন ধনীরা সরে যান, সাধারণ মানুষের মাঝেও সন্দেহ তৈরি হয়— ব্যাংক কি নিরাপদ?
৪. দুর্বল ব্যাংকের অস্তিত্বে শঙ্কা: যেসব ব্যাংক বছরের পর বছর লোকসান করেছে, সেখানে বড় আমানত কমলে তাদের বেঁচে থাকা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যায়।
এ প্রসঙ্গে বিআইবিএমের সাবেক মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমেদ চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, “বড় অঙ্কের আমানত এক ব্যাংক থেকে সরে গেলে সেটি শুধুই টাকার ক্ষতি নয়—এটি আস্থার ক্ষতি। আর আস্থা হারালে ব্যাংকের পুনরুদ্ধার খুব কষ্টসাধ্য।”
উল্টো চিত্র: সাধারণ মানুষের সঞ্চয়ে রেকর্ড বৃদ্ধি
ধনীরা সরে গেলেও দেশের সাধারণ মানুষ—বিশেষ করে নিম্ন, নিম্নমধ্য ও মধ্যবিত্ত শ্রেণি ব্যাংকিং ব্যবস্থায় বেশি সক্রিয় হয়ে উঠছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান দেখাচ্ছে, এক বছরের মধ্যে যে প্রবণতা সবচেয়ে বেশি নজর কেড়েছে তা হলো—(১). শূন্য-২ লাখ টাকার হিসাব: গত বছরের জুনে ১৩.২৮ কোটি এখন ১৪.৭৬ কোটি। এক বছরে ১.৫ কোটি নতুন ক্ষুদ্র সঞ্চয়কারী যুক্ত হয়েছেন। (২). ২-২৫ লাখ টাকার হিসাব: ৮৮.৭৭ লাখ বেড়ে ১.০২ কোটি। এই শ্রেণির বৃদ্ধি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। (৩) ২৫-৫০ লাখ টাকার হিসাব: ৩.৬৪ লাখ বেড়ে ৪.০৯ লাখ। (৪). ৫০ লাখ ১ কোটি টাকার হিসাব: ১.৫৯ লাখ বেড়ে ১.৭২ লাখ।
জনগণের সঞ্চয়ী আচরণের এই প্রবৃদ্ধি দেখায়—বাংলাদেশে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত অর্থনৈতিকভাবে সচেতন হচ্ছে, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বাড়ছে এবং ব্যাংকের ওপর নির্ভরশীলতা বিস্তৃত হচ্ছে। এটি অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক বার্তা।
কোটিপতির সংখ্যা বাড়ছে, কিন্তু চিত্র বদলে যাচ্ছে
ব্যাংক হিসাব অনুসারে কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা গত এক বছরে বেড়েছে ৮৫৫২টি। এর মধ্যে ব্যক্তি কোটিপতি বেড়েছে ২,৫৫৫ জন। কিন্তু বড় কোটিপতিরা (৫০ কোটি+) সরে যাওয়ায় কোটিপতি শ্রেণির ভেতরেই নতুন বৈসাদৃশ্য তৈরি হয়েছে—মাঝারি কোটিপতি বাড়ছে, অতি ধনী কোটিপতি কমছে, আড়ালে থাকা প্রকৃত ধনীদের সংখ্যা এখনও অজানা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য কেবল ব্যাংকে জমা অর্থ গণনা করে। বাস্তবে অনেকের সম্পদ ব্যাংকের বাইরে (রিয়েল এস্টেট, শেয়ার, ব্যবসা)।
বিনিয়োগে অনীহায় ব্যাংক খাতে অতিরিক্ত তারল্য রেকর্ড পরিমাণে
ব্যাংকিং খাতে ঋণের সুদহার বেঁধে দেওয়ার নীতি আওয়ামী লীগ সরকারের সময় কার্যকর ছিল। সে নীতি প্রত্যাহারের পর বাজারমুখী সুদহার চালু হলে ব্যাংকগুলোতে আমানতের সুদহার দ্রুত ঊর্ধ্বমুখী হয়। এতে গ্রাহকদের জমা রাখার আগ্রহ বাড়ায় বেশ কয়েকটি ব্যাংকে আমানত প্রবাহ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়। তবে আমানত বাড়লেও সেই অনুযায়ী ঋণ বিতরণ না হওয়ায় ব্যাংক খাতে অতিরিক্ত তারল্য দিন দিন আরও বড় আকার ধারণ করছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চলতি বছরের আগস্ট শেষে ব্যাংক খাতে অতিরিক্ত তারল্যের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৬ হাজার ১১২ কোটি টাকা—যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ১ লাখ ৭৪ হাজার ৫৬৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরে অতিরিক্ত তারল্য বেড়েছে ১ লাখ ৩১ হাজার ৫৪৫ কোটি টাকা।
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে তারল্য চাপ, বেসরকারিতে অতিরিক্ত জমা
আগস্ট শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় ব্যাংকে অতিরিক্ত তারল্য দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৪৩ কোটি টাকা। অপরদিকে বেসরকারি ৪৩ ব্যাংকে অতিরিক্ত তারল্যের পরিমাণ ১ লাখ ৭৩ হাজার ৯৫১ কোটি টাকা, আর বিদেশি ৯ ব্যাংকে রয়েছে ৩২ হাজার ১১৮ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, আগস্টে ব্যাংকগুলোকে সিআরআর ও এসএলআর মিলে তারল্য হিসেবে রাখতে হয়েছে ২ লাখ ২৬ হাজার ৭০২ কোটি টাকা। কিন্তু কিছু ব্যাংক প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি তারল্য রেখে দেওয়ায় খাতে মোট তারল্যের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৩২ হাজার ৮১৪ কোটি টাকা, যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি।
নিয়ম অনুযায়ী, ব্যাংকগুলোকে মোট আমানতের ৪ শতাংশ সিআরআর হিসেবে নগদ আকারে এবং ১৩ শতাংশ এসএলআর হিসেবে সরকারি ট্রেজারি বিল ও বন্ডে বিনিয়োগ রেখে দিতে হয়। এসব বাধ্যতামূলক সংরক্ষণ হিসাব করার পরই অতিরিক্ত তারল্যের পরিমাণ নির্ধারিত হয়।
বিনিয়োগে অনীহা বাড়ায় উদ্বেগ
বিশ্লেষকদের অভিমত, সুদহার বাজারমুখী হওয়ায় আমানত বাড়লেও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, ঋণখেলাপি বৃদ্ধি এবং ব্যাংকগুলোর ঝুঁকিনির্ভর নীতি বিনিয়োগ প্রবাহে বাধা তৈরি করছে। ফলে ব্যাংকগুলো নিরাপদ বিনিয়োগ খুঁজে পাচ্ছে না, যা তারল্য স্ফীতি আরও বাড়িয়ে তুলছে।
সম্পদের বণ্টনে বাড়ছে বৈষম্য
বাংলাদেশের জিডিপি, আয়, সঞ্চয়—সবকিছুই বাড়ছে, তবে সম্পদ কিছু মানুষের হাতে কেন্দ্রীভূত হয়েছে। নতুন সঞ্চয়ী শ্রেণির উত্থান, বড় বিনিয়োগকারীর অনিশ্চয়তা, ব্যাংকের ওপর আস্থার সংকট— এগুলো মিলেই ব্যাংকিং খাতে এক ধরনের ‘দ্বৈত প্রবাহ’ তৈরি করেছে।
এখন ব্যাংকিং খাতকে কী করতে হবে?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি ব্যাংকগুলো অতি ধনী আমানতকারীদের ফিরিয়ে আনতে চায়, তবে জরুরি কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে—
১. দুর্বল ব্যাংকগুলোর দ্রুত সংস্কার: একীভূতকরণ, পুনর্গঠন, নীতিগত কঠোরতা—যত দ্রুত হবে, আস্থাও তত বাড়বে।
২. খেলাপি ঋণের কঠোর নিয়ন্ত্রণ: এটি না কমলে বড় আমানতকারীরা কখনোই নিরাপদ মনে করবেন না।
৩. স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি বাড়ানো: ব্যাংক পরিচালনায় স্বচ্ছতা বাড়লে আস্থা ফিরে আসে।
৪. আমানতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা: বড় আমানতকারীদের জন্য বিশেষ সুরক্ষা পরিকল্পনা প্রয়োজন।
৫. রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা: এই বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ছাড়া বড় অঙ্কের আমানত ফিরে আসে না।
সাধারণ জনগণই হয়ে উঠছে ভরসা
অতি ধনীদের ব্যাংক থেকে সরে যাওয়ার প্রবণতা বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। কিন্তু একই সময়ে জনগণের সঞ্চয়ের প্রবৃদ্ধি একটি নতুন শক্ত ভিত্তি তৈরি করেছে। বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত এখন দাঁড়িয়ে আছে দুটো বিপরীতমুখী বাস্তবতার সামনে— ধনীদের অর্থ যাচ্ছে ব্যাংক থেকে বেরিয়ে, আর সাধারণ মানুষের সঞ্চয় ঢুকছে ব্যাংকে। এ প্রবণতা কতদিন স্থায়ী হবে, তা নির্ভর করছে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, অর্থনৈতিক নীতি এবং ব্যাংক খাতের স্বচ্ছতার ওপর।