Image description

ঢাকার ট্রাফিক সিস্টেমে শৃঙ্খলা ফেরাতে সরকার পরীক্ষামূলকভাবে স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক বাতি স্থাপন করেছে ১৫টি ইন্টারসেকশনে। প্রায় দুই মাস ধরে এসব সিগন্যাল বাতি পরীক্ষামূলকভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। ট্রাফিক বাতির সিগন্যাল অমান্য করলেই দিতে হবে জরিমানা। আইন অমান্যকারীদের তথ্য জমা হয়ে যাবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে। স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক বাতির সঙ্গে বিশেষ ধরনের ক্যামেরা যুক্ত করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। তাৎক্ষণিকভাবে যানবাহনের তথ্য চলে যাবে পুলিশের কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষে। যাচাই-বাছাই শেষে সিগন্যাল অমান্যকারী যানবাহনের বিরুদ্ধে মামলাও হয়ে যাবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে। সম্প্রতি ইন্টারসেকশনগুলো সরজমিন পর্যবেক্ষণ করে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী শেখ মইনউদ্দিন এসব তথ্য জানিয়েছেন।

রাজধানী ঢাকার আব্দুল্লাহপুর থেকে হাইকোর্ট পর্যন্ত সাতটি ইন্টারসেকশনে পরীক্ষামূলকভাবে এই স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক সিগন্যাল চালু করা হয়। সাতটি ইন্টারসেকশন হলো- হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল, বাংলামোটর, সোনারগাঁও (কাওরান বাজার), ফার্মগেট, বিজয় সরণি, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় এবং জাহাঙ্গীর গেট মোড়। এতে ব্যয় হয়েছে ১৮ কোটি টাকা। দেশীয় প্রযুক্তিতে লাল-সবুজ-হলুদ বাতির খুঁটি বসানো হয়েছে। এটি বাস্তবায়নে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ, ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশন যৌথভাবে এই কাজ করেছে। পরীক্ষামূলকভাবে বসানোর পর সুফল পেলে আরও ১৫টি ইন্টারসেকশনে ওই ট্রাফিক ব্যবস্থা স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে। 

ইন্টারসেকশনসমূহে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশ ও সিগন্যাল বাতি নিয়ন্ত্রণ কক্ষের কর্মকর্তারা বলছেন, পথচারী ও যানবাহন চালকদের এই সিস্টেমে অভ্যস্ত করানো কষ্টকর। তবে, এখন আগের চেয়ে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এসেছে। নিয়ন্ত্রণ কক্ষের কর্মকর্তারা বলছেন, ট্রাফিক পুলিশের কর্মকর্তাদের নির্দেশ অনুযায়ী সিগন্যাল বাতি নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। প্রয়োজনমতো ম্যানুয়ালিও নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে সিগন্যাল। বিজয় সরণি ইন্টারসেকশনে গিয়ে দেখা গেছে, যানবাহনগুলো ট্রাফিক পুলিশের নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই চলছে। ট্রাফিক ব্যবস্থার পরিবর্তন করতে এটি করা হলেও ঢাকার নাগরিকরা স্বয়ংক্রিয় এ ট্রাফিক সিস্টেমের সঙ্গে পরিচিত নয়। ফলে ট্রাফিক বাতির নির্দেশনা সম্পর্কেও ভালোভাবে অবগত নয় তারা। তাই সংশ্লিষ্ট এলাকার ট্রাফিক পুলিশদের এখনো ইশারা দিয়েই নিয়ন্ত্রণ করতে দেখা গেছে যানবাহন। 

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী শেখ মইনউদ্দিন বলেন, বহু বছর কোনো ট্রাফিক সিগন্যাল ব্যবস্থা ছিল না। সেখান থেকে পরীক্ষামূলক সিগন্যাল বাতিগুলোর কার্যক্রম আমরা যত দূর আনতে পেরেছি, তাতে আমি ব্যক্তিগতভাবে খুবই আশাবাদী। ট্রাফিক সিগন্যালগুলোয় এখনো ছোট ছোট কিছু কাজ বাকি রয়ে গেছে। এগুলো শেষ করতে হবে। সোনারগাঁও ইন্টারসেকশনে একটু অসুবিধা রয়ে গেছে বলে আমার কাছে মনে হয়েছে। এখানে অবকাঠামোগত জটিলতা আছে। এটা বাদে অন্য ইন্টারসেকশনগুলো ভালোভাবে কাজ করছে। তিনি বলেন, এখন আমরা সিগন্যাল মেনে চলার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি। পরিকল্পনা করছি, রেড লাইট ভায়োলেশন ক্যামেরা বসাতে। যারা রেড লাইট ভায়োলেশন করবে, তাদের বিরুদ্ধে যেন অটোমেটিক্যালি মামলা হয়ে যায়। বিশেষায়িত ক্যামেরাগুলোর মাধ্যমে সিগন্যাল অমান্যকারীদের তথ্য পুলিশ হেডকোয়ার্টারে চলে যাবে। যাচাই-বাছাইয়ের পর সেখান থেকে স্বয়ংক্রিভাবে মামলা ইস্যু করা হবে। ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে যেভাবে ক্যামেরা ব্যবহার করে মামলা হচ্ছে, ঠিক একইভাবে পরীক্ষামূলক ট্রাফিক সিগন্যালগুলোও চলবে। 

ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ সূত্র জানিয়েছে, ইতিমধ্যে এ সিস্টেমটি আব্দুল্লাহপুর পর্যন্ত বাড়ানোর কাজ শুরু হয়েছে। এ বছরের শেষের দিকে বাকি ইন্টারসেকশনগুলোতে এই ধরনের যানবাহন নিয়ন্ত্রণ সিস্টেম চালু করা হচ্ছে। সিটি করপোরেশন এটার জন্য উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করেছে বলে সূত্র জানিয়েছে। ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক নীলিমা আখতার মানবজমিনকে বলেন, সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল বাতি পর্যবেক্ষণ করেছেন। এ বিষয়ে উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এখনো যানবাহন ও পথচারীদের পুরোপুরি স্বয়ংক্রিয় সিগন্যালে অভ্যস্ত করানো যায়নি। আমরা যথেষ্ট প্রচারণা চালাচ্ছি এটা যাতে সকলেই মানে।