Image description
চিকিৎসা ব্যবস্থা বিকেন্দ্রীকরণের অভাব

ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসা অবকাঠামো, জনবল ও সুযোগ-সুবিধার কেন্দ্রবিন্দু রাজধানী হওয়ায় সারা দেশের রোগীর চাপ ঢাকাতেই বেশি। ফলে রাজধানীর চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে মৃত্যুহারও তুলনামূলকভাবে বেশি। সরকারি হিসাবে চলতি বছর ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ২৭৮ জন। এর মধ্যে শুধু ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় মারা গেছেন ১৭৬ জন, যা মোট মৃত্যুর ৬৩ শতাংশ। আর শুধু ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছেন ৬৮ জন, যা দেশের মধ্যে একক প্রতিষ্ঠানের হিসাবে সর্বোচ্চ।

দীর্ঘায়িত বর্ষণের কারণে ধারণা করা হচ্ছে, ডেঙ্গুর প্রকোপ আরও দুই মাস অব্যাহত থাকতে পারে। জনস্বাস্থ্যবিদদের মতে, রাজধানীকেন্দ্রিক চিকিৎসা সুবিধা থাকায় সারা দেশের রোগীরা ঢাকায় ছুটে আসেন। ফলে ঢাকায় রোগী শনাক্ত, ভর্তি এবং চিকিৎসা গ্রহণের হার বেশি, যার প্রভাব পড়ছে মৃত্যুর পরিসংখ্যানেও। তারা মনে করেন, চিকিৎসা ব্যবস্থাকে বিকেন্দ্রীকরণ করা সম্ভব হলে ঢাকায় রোগীর চাপ কমানো যেত। পাশাপাশি অন্য জটিল ও দীর্ঘমেয়াদি রোগের চিকিৎসাও বিঘ্নিত হতো না। ডেঙ্গু চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত শয্যা দখলে থাকায় অনেক সময় বিশেষায়িত হাসপাতালে অন্য রোগীদের চিকিৎসা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা এবং জনস্বাস্থ্যবিদ ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ‘রাজধানীকেন্দ্রিক চিকিৎসা ব্যবস্থার কারণে ঢাকায় রোগীর চাপ বেশি। চিকিৎসা ব্যবস্থা বিকেন্দ্রীকরণ করা সম্ভব হলে ঢাকায় চাপ কম থাকত। সেটা করা যায়নি। এটা নিঃসন্দেহে একটা ব্যর্থতা।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকার দুই সিটিতে ১৮টি সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত হাসপাতালে ডেঙ্গু চিকিৎসা চলছে। চলতি মৌসুমে এসব হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে ১৪ হাজার ৯১৯ জন। বর্তমানে চিকিৎসাধীন ৭৫১ জন, আর মারা গেছেন ১৬৩ জন।

এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৬৮ জন। মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছেন ৩৯ জন, ডিএনসিসি কভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে ২০ জন, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ১৮ জন, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালে ১৫ জন, শ্যামলী বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে একজন এবং শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দুজন।

এ ছাড়া ৫৯টি বেসরকারি হাসপাতালেও ডেঙ্গু চিকিৎসা চলছে, যেখানে মোট ৫ হাজার ৭৮ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে অধিকাংশই ছাড়পত্র পেয়েছেন। তবে রাজধানীর ১০টি বেসরকারি হাসপাতালে মারা গেছেন ১৩ জন এবং বর্তমানে চিকিৎসাধীন ১৮০ জন।

চলতি বছরের শুরু থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত দেশে মোট ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছেন ৬৯ হাজার ৮৬২ জন। বিভাগভিত্তিক রোগীর সংখ্যা হলো—বরিশালে ১৭ হাজার ২৪১ জন, ঢাকা বিভাগে ১১ হাজার ৫৪৮ (এর মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটিতে ৯ হাজার ৭১২ এবং দক্ষিণ সিটিতে ১০ হাজার ১৯২ জন), চট্টগ্রামে ১০ হাজার ৯২, রাজশাহীতে ৪ হাজার ২৯৮, খুলনায় ৩ হাজার ৫৪৩, ময়মনসিংহে ২ হাজার ২০৩, রংপুরে ৭৯৪ এবং সিলেটে ২৩৯ জন।

মাসভিত্তিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সর্বোচ্চ রোগী শনাক্ত হয়েছেন অক্টোবরে ২২ হাজার ৫২০ জন। সেপ্টেম্বরে ভর্তি হয়েছেন ১৫ হাজার ৮৬৬, আগস্টে ১০ হাজার ৪৯৬, জুলাইয়ে ১০ হাজার ৬৮৪, জুনে ৫ হাজার ৯৫১, মে মাসে ১ হাজার ৭৭৩, এপ্রিলে ৭০১, মার্চে ৩৩৬, ফেব্রুয়ারিতে ৩৭৪ এবং জানুয়ারিতে ১ হাজার ১৬১ জন।

মৃত্যুর পরিসংখ্যানে দেখা যায়, চলতি বছর সরকারি হিসাবে ডেঙ্গুতে মৃত ২৭৮ জনের মধ্যে বরিশালে ৪০ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ১৩৫, উত্তর সিটিতে ৪১ এবং ঢাকা বিভাগের অন্যান্য জেলায় তিনজন মারা গেছেন। চট্টগ্রামে ২৫ জন, রাজশাহীতে ১৪, ময়মনসিংহে ১২, খুলনায় আট এবং সিলেটে একজন মারা গেছেন।

মাসভিত্তিক মৃত্যুর বিবরণে দেখা যায়, অক্টোবরে সর্বোচ্চ ৮০ জন মারা গেছেন, সেপ্টেম্বরে ৭৬, জুলাইয়ে ৪১, আগস্টে ৩৯, জুনে ১৯, মে মাসে তিন, এপ্রিলে সাত, ফেব্রুয়ারিতে তিন, জানুয়ারিতে ১০ এবং মার্চে কোনো মৃত্যুর তথ্য দেয়নি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গতকাল ডেঙ্গুতে দেশে কারও মৃত্যু হয়নি। একই দিনে সারা দেশে ৫০৬ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুযায়ী, ওই দিন ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে বরিশালে ৫৩ জন, চট্টগ্রামে ৯১, ঢাকার বাইরে ঢাকা বিভাগে ২১৩, ঢাকা উত্তরে ১০৮, দক্ষিণে ১৬ এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ২৫ জন।

একই সময়ে ৫৬৮ জন রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। এ নিয়ে চলতি বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত মোট ৬৬ হাজার ৮০২ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। এ সময়ের মধ্যে ভর্তি হওয়া মোট ৬৯ হাজার ৮৬২ জন রোগীর মধ্যে ৬২ শতাংশ পুরুষ এবং ৩৮ শতাংশ নারী।