Image description

২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে মাঠ প্রশাসন ঢেলে সাজানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। মাঠপর্যায়ে সরকারের মুখপাত্র হিসেবে কাজ করেন জেলা প্রশাসকরা (ডিসি)। তাই আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে ডিসিদের করণীয় সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দেবে সরকার।

‘ডিসি সম্মেলন-২০২৬’ থেকে এসব নির্দেশনা দেওয়া হবে বলে জানা গেছে। সম্মেলনকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে ডিসিদের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রস্তাব চেয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ চিঠি পাঠিয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

সূত্র জানিয়েছে, সাধারণত বছরের প্রথম তিন মাসের মধ্যে (জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি ও মার্চ) ডিসি সম্মেলন হওয়ার রেওয়াজ থাকলেও ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আগামী বছরের ডিসি সম্মেলন এগিয়ে আনার কথা ভাবছে সরকার।

সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত না হলেও চলতি বছরের শেষ সপ্তাহে বা আগামী জানুয়ারিতে ডিসি সম্মেলন করার বিষয়টি বিবেচনায় রেখেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

এই সম্মেলন থেকেই দেওয়া হতে পারে আগামী নির্বাচন উপলক্ষে সরকারের নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত, যা বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হবে ডিসিদের।

আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে ডিসিদের কী নির্দেশনা দেওয়া হবে, তা চূড়ান্ত করা হবে ডিসিদের কাছ থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পরে। 

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সরকার পতনের পরে দেশের ৬৪ জেলায় জেলা প্রশাসকদের ঢাকায় ফিরিয়ে আনা হয়েছে। দেশের সব জেলায়ই নতুন ডিসি পদায়ন করা হয়েছে। ডিসি নিয়োগ প্রক্রিয়া প্রায় শেষ। এরই মধ্যে যেসব জেলায় ডিসিরা পদোন্নতি পেয়ে যুগ্ম সচিব হয়েছেন বা যাদের মেয়াদ শেষ হয়েছে তাদের কাউকে কাউকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সংযুক্ত করা হয়েছে, কাউকে কাউকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে পদায়ন করা হয়েছে। জরুরি প্রয়োজন দেখা না দিলে বা জটিল কোনও সমস্যা সৃষ্টি না হলে ডিসিদের আর সরানো হচ্ছে না বলেও জানা গেছে।

সম্মেলন সামনে রেখে ডিসিদের কাছে প্রস্তাবনা চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের জেলা ও মাঠ প্রশাসন অধিশাখা। এসব প্রস্তাব চলতি অক্টোবরের ১৫ তারিখের মধ্যে পাঠানোর সময় নির্ধারিত থাকলেও তা আগামী ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দর করতে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে, সেসব বিষয়ে করণীয় সম্পর্কে ডিসিদের সুস্পষ্ট প্রস্তাব পাঠাতে বলা হয়েছে বলে একটি সূত্র বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছে।

সূত্র জানিয়েছে, ৩১ অক্টোবরের মধ্যে ডিসিদের কাছ থেকে পাওয়া প্রস্তাবগুলো একত্রিত করার পর নভেম্বরের শুরুতেই ডিসি সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে। ডিসিদের কাছ থেকে পাওয়া প্রস্তাবগুলো যাচাই বাছাই করে সেগুলোর সঙ্গে সরকারের নির্দেশনা যুক্ত করে ডিসি সম্মেলনে উপস্থাপন করা হবে।

উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের জেলা প্রশাসক সম্মেলন হয়েছিল মার্চ মাসের শুরুতেই। ২০২৫ সালে তিন দিনের ডিসি সম্মেলন শুরু হয় ১৬ ফেব্রুয়ারি। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এই সম্মেলন উদ্বোধন করেন।   

নির্বাচনের আগেই আগামী সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হলে তা হবে অন্তর্বর্তী সরকারের দ্বিতীয় জেলা প্রশাসক সম্মেলন। আগের সম্মেলনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, নির্বাচন এবং দুর্নীতি দমনের বিষয়কে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছিল। এবার অগ্রাধিকারের তালিকায় থাকছে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন।

সর্বশেষ, ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত ডিসি সম্মেলনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা যাতে মারণাস্ত্র ও ছররা গুলি ব্যবহার করতে না পারেন, সেই সুপারিশ করেছিলেন ডিসিরা। তবে ডিসিদের এই সুপারিশ বাস্তবায়ন হয়নি। জনপ্রতিনিধিদের ক্ষমতা আরও কমানোর প্রস্তাবও এসেছিল ডিসি সম্মেলনে। এ বিষয়েও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। ইজিবাইকের জন্য নীতিমালা করার বিষয়ে ডিসিদের সুপারিশও বাস্তবায়ন হয়নি।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে অনেক জেলায় ডিসি অফিসে আন্দোলনরত জনতা হামলা চালিয়েছিল। এরপর জেলা সার্কিট হাউজ এবং ডিসি কার্যালয়কে 'কি পয়েন্ট ইনস্টলেশন' (কেপিআই) অন্তর্ভুক্তকরণের প্রস্তাব দেওয়া হলেও সেটি কার্যকর হয়নি।

পার্বত্য তিনটি জেলায় কর্মরত কর্মচারীদের পাহাড়ি ভাতার পরিমাণ আরও বাড়ানোর প্রস্তাবও আলোর মুখ দেখেনি। এডিসিদের বদলি ও পদায়ন বিভাগীয় কমিশনারের অধীনে দেওয়ার প্রস্তাব বাস্তবায়ন হয়নি, এটি বর্তমানে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের হাতে রয়েছে।

রেলের পোষ্যকোটা বাতিল, সব জেলায় পর্যাপ্ত জনবলসহ আইএমইডি এবং দুদক কার্যালয় প্রতিষ্ঠা ছাড়াও মোবাইল কোর্টের অধীনে কার্যক্রমের ব্যাপ্তি বাড়ানোর প্রস্তাব করেছিলেন একাধিক ডিসি। এগুলোর বেশিরভাগই এখনও বাস্তবায়ন হয়নি।

জানা গেছে, গত বছর ডিসি সম্মেলনের ৪৫ শতাংশ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয়েছে। যেসব অবকাঠামো নির্মাণের সঙ্গে কোনও ব্যক্তির নাম জড়িত সেগুলোসহ উচ্চাভিলাষী প্রকল্প প্রস্তাব বাদ দেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, আসন্ন সম্মেলনেও ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ৫৪টি মন্ত্রণালয় এবং বিভাগের সঙ্গে বৈঠক হবে ডিসিদের।

এ প্রসঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আবদুর রশিদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সময় হলে সবই জানবেন।’ 

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বরিশালের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ডিসি সম্মেলনের তারিখ এখনও চূড়ান্ত হয়নি। আমরা প্রস্তাব রেডি করছি। দ্রুতই পাঠিয়ে দেবো। যেকোনও সময়ে সরকারের যেকোনও নির্দেশনা বাস্তবায়ন ডিসিদের কাজ।’

নাটোরের জেলা প্রশাসক আসমা শাহীন বলেন, ‘আমরা আমাদের প্রস্তাবগুলো তৈরি করছি। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মাঠ প্রশাসন অধিশাখার দেওয়া সময়ের মধ্যেই তা পাঠিয়ে দেবো। ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের একটি ঘোষণা তো প্রধান উপদেষ্টা মহোদয় দিয়েছেন। আমরা বিষয়টি মাথায় রেখে কাজ করছি। তবে ডিসি সম্মেলনের তারিখ এখনও চূড়ান্ত হয়নি।’ 

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের জেলা ও মাঠ প্রশাসন অধিশাখার যুগ্ম সচিব খোরশেদ আলম খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অক্টোবরের ৩১ তারিখের মধ্যে ডিসিদের প্রস্তাবগুলো জমা হবে। এ মাসের শেষের দিকে ডিসি সম্মেলনের তারিখ নির্ধারিত হতে পারে।’