Image description

ফেনীতে নির্বাচনী আলোচনা এখন তুঙ্গে। সম্ভাব্য প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা সভা-সমাবেশ, উঠান বৈঠক করছেন নিয়মিত। তবে ফেনীর প্রতিটি আসনেই বিএনপি’র একাধিক প্রার্থী কাজ করছেন। জামায়াত নিরবে প্রচারণা চালাচ্ছে। অন্যান্য দলও বসে নেই। একাধিক সম্ভাব্য প্রার্থী ফলে কর্মী-সমর্থকরাও বিভক্ত। এত কিছুর পরও নির্বাচন নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে রয়েছে নানা সন্দেহ। ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে এমনটা সরকারের তরফ থেকে ঘোষণা দিলেও কেউ কেউ প্রশ্ন তুলছেন আসলেই কি সময়মতো নির্বাচন হবে? আর হলে তা কেমন হবে? ফেনীর প্রকৌশলী নুরুল আলম দিদার। কয়েক বছর প্রবাস জীবন কাটিয়ে বর্তমানে দেশে অবস্থান করছেন। দেশের অতীত ইতিহাসের সমাপ্তি ঘটবে আগামী নির্বাচনের মাধ্যমে- এমন প্রত্যাশা করেন তিনি। কেমন নির্বাচন দেখতে চান- এমন প্রশ্নের উত্তরে একটু ভাবনায় পড়েন। বলেন- প্রত্যাশা আর প্রাপ্তির মিল শতভাগ ঘটে না কখনো কখনো। তবে নিরপেক্ষ সরকারের হাত ধরে গণতন্ত্রের যাত্রা সূচনা হবে বলে মনে করেন দিদার। শুধু সরকার গঠন করলেই হবে না, অতীত থেকে শিক্ষা নেয়ার পরামর্শ দেন তিনি। 

ফেনীর শিক্ষাঙ্গনের আলোচিত মোহাম্মদ আলমগীর কবীর। যিনি স্বপ্ন দেখেন জেলার কোনো শিক্ষার্থীকেই উচ্চশিক্ষার জন্য অন্য জেলায় দৌড়াতে হবে না। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এরইমধ্যে বহুদূর অগ্রসর হয়েছেন। একটি শিক্ষা উদ্যোক্তা গ্রুপ তৈরির কাজ করছেন তিনি। ইতিমধ্যে জেলা শহরে ইংরেজি মাধ্যম ও ইংরেজি ভার্সন স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছেন। কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড এলাকায় ইংরেজি মাধ্যমের একমাত্র পরীক্ষাকেন্দ্রও তার প্রতিষ্ঠান হোপ স্কুলে। আলমগীর মনে করেন আধুনিক জেলার পাশাপাশি শিক্ষার ব্যাপ্তি ঘটাতে প্রয়োজন যোগ্য ও দক্ষ জনপ্রতিনিধি। বর্তমান নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে যেমনি সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব, তেমনি ভোটাররাও পছন্দের যোগ্য প্রার্থী খুঁজে নিতে পারবেন বলে মনে করেন এ শিক্ষানুরাগী। তিনি বলেন, সবার আগে প্রয়োজন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন।

বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন নাজমুল হক সেন্টু। তিনি স্বপ্ন দেখেন আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হবে। একই সঙ্গে অংশগ্রহণমূলক ভোটের মাধ্যমে যেই সরকার গঠন করুক নানা চ্যালেঞ্জ নিতে হবে বলেও মনে করেন তিনি। অতীত থেকে শিক্ষা নিলে সে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা খুব কঠিন নয়। তিনি মনে করেন বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ঘোষিত সময়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে দেশ নবযাত্রায় এগিয়ে যাবে। ডাক্তার রানা। স্ত্রী সরকারি হাসপাতালের সিনিয়র নার্স। দু’জনের পেশাগত দায়িত্ব পালনের কারণে ফেনী ছাড়াও বিভিন্ন জেলায় যাতায়াত আছে। রানা মনে করেন বর্তমান সরকার সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে সাধ্যমতো সবকিছুই করবেন। জনগণ পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে মুখিয়ে আছে মন্তব্য করে এ চিকিৎসক বলেন, আগামী নির্বাচনের মাধ্যমে স্বচ্ছ ও যোগ্য ব্যক্তিদের মনোনীত করার সুবর্ণ সুযোগ আছে ভোটারদের সামনে। একজন ফল ব্যবসায়ী বলেন- সরকার পরিবর্তন আর ভোটে কি লাভ। ফলের ঝুড়ি ওঠানামা করতেই চাঁদা। নিজের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিলেও কি লাভ, নির্বাচনের পর তিনি আর আগের জায়গায় থাকেন না। প্রার্থীদের মধ্যেই যোগ্য ভেবে একজনকে ভোট দিতে হয়। কিন্তু প্রকৃত অনেক যোগ্য, সৎ ব্যক্তিকে দল মনোনয়ন দেয় না।

জন্মস্থান না হলেও দীর্ঘ বছর অবস্থানের কারণে ৩ সন্তানের জন্ম ফেনীতে। জেলা শহরে রিকশা চালান প্রায় তিন যুগ ধরে। লালমনিরহাটের জয়নাল হোসেন ভোটারও হয়েছেন ফেনী-২ আসনে। শহরতলীর লালপুল এলাকায় স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে থাকেন। তিনি স্বপ্ন দেখেন নিরাপদ ও সুন্দর পরিবেশে শ্রম বিক্রি করে সংসারে হাসি ফোটাবেন। গত তিনটি নির্বাচনে ভোট দিতে না পারার আক্ষেপ তার মনে। বলেন, এবার নির্বাচনে ভোট দেয়ার জন্য অপেক্ষায় আছি। এডভোকেট পার্থ পাল চৌধুরী। ফেনী আদালতের সিনিয়র আইনজীবী। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সংগঠন ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন দীর্ঘদিন। তিনি স্বপ্ন দেখেন আগামী নির্বাচন হবে দেশের জন্য এক অনন্য দৃষ্টান্ত। জনগণের চাওয়ার প্রাপ্তি ঘটবে ভোটের মাধ্যমে। 

গৃহবধূ ফারজানা আক্তার নির্বাচনী ভাবনা বলতে বুঝেন নবীন-প্রবীণের সমন্বয়। স্থানীয়ভাবে যারা জনগণের পাশে থাকেন আর হাতছানি দিলেই দেখা মিলে এমন জনপ্রতিনিধি সংসদে দেখতে চান এই নারী। বলেন- ভোট আসলে অনেককে দেখা যায়, আবার ভোটের ডামাডোল কেটে গেলে বাটি চালান দিয়েও সন্ধান মেলে না-এমন বসন্তের কোকিলদের কোনো দলেরই মনোনয়ন দেয়া উচিত নয়।
আব্দুল্লাহ আল মামুন। রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন। চট্টগ্রাম থেকে নিত্যপণ্য পাইকারি এনে ফেনীর বিভিন্ন উপজেলায় বিক্রি করেন। তার কথা এমন নির্বাচন হওয়া উচিত দেশে যেন উদাহরণ হয়ে থাকে। সুনীল নামের এক পথচারীকে প্রশ্ন করা হলো আগামী নির্বাচন নিয়ে কী ভাবনা? উত্তরে সোজাসাপ্‌টা কথা ভাববার সময় নেই, পরিবেশ ঠিক থাকলে, কেন্দ্রে যেতে পারলে প্রার্থীদের মধ্যে যোগ্য ব্যক্তিকেই ভোট দেবেন তিনি। এক্ষেত্রে দলের চেয়ে প্রার্থী বিবেচনা তার কাছে গুরুত্ব পাবে বলেও জানান।

জুলেফা খাতুন। শহরে ভিক্ষা করেন ১৯ বছরের মতো। নির্বাচন নিয়ে তার ভাবনা নেই। জীবনে কোনো নির্বাচনেই ভোট দেয়া হয়নি এ নারীর। বয়সের ভারে নুয়ে পড়া এ ভিখারিনী বলেন- যেই ভোটে জিতুক, তার ভাগ্যের পরিবর্তন হবে না। তাই ভোট নিয়ে চিন্তা করে লাভ নেই। ফেনী পৌরসভার এক পরিচ্ছন্নতাকর্মী বলেন- ভোট অনেক দেখেছেন। তবে এবার আশা করেন দিনের আলোতে জনতার লাইন দেখা যাবে কেন্দ্রে। সে লাইনে দাঁড়িয়ে তিনিও পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে চান। নির্বাচনে ভোট কিনতে টাকার ছড়াছড়ি থাকে উল্লেখ করে এসব বন্ধে সরকারকে কঠোর হতে হবে। বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা জামসেদ রহমান। তিনি জানান- নির্বাচনের দায়িত্ব পালনের কারণে ভোট দেয়া হয় না তার। এবার স্বপ্ন দেখছেন পোস্টাল ব্যালটে আগাম ভোট দিতে পারবেন। দায়িত্ব পালনে এবার আর হুমকি বা বিশেষ প্রার্থীর ক্ষেত্রে কাজ করার নির্দেশনামুক্ত থাকবে বলেও আশা এ ব্যাংকারের। জেলার অনেক গণমাধ্যমকর্মীর মতে এখন পর্যন্ত পরিবেশ বিশ্লেষণ করলে সুখবর দেখছেন না তারা। প্রভাবমুক্ত নির্বাচন এখনো স্বপ্ন মনে করলেও বর্তমান সরকারের সময়ে একটা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে মনে করেন তারা। 

এ ছাড়া এ মুহূর্তে নির্বাচন নিয়ে ফেনীর আনাচেকানাচে, চা-স্টলে, হাটে-বাজারে সর্বত্রই হচ্ছে আলোচনা। আগামী নির্বাচন যেন কোনো প্রকারেই কলঙ্কযুক্ত না হয় আলোচনার বিষয় এটিই সবচেয়ে বেশি। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি মানুষের আস্থা রয়েছে। তারা চান সরকার আরও কঠোর হবে নির্বাচনের ক্ষেত্রে। বিশেষ করে সকল রাজনৈতিক দলগুলোকে এক হয়ে মাঠে নামার পরামর্শ তাদের। নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে সকল দলকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে বলে লুৎফুল কবীর নামে এক ব্যবসায়ী মনে করেন।