Image description
জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ান

বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব মুফতি আব্দুল মালেক গতকাল জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ানে বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সঙ্গীত শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে আমাদেরকে হিন্দুত্ববাদ শিখাতে চায় সরকার।

বিদ্যালয়ে সঙ্গীতের নামে হিন্দুয়ানি সংস্কৃতি শিক্ষা দেয়া এর চেয়ে বড় প্রতারণা আর কি হতে পারে? সংস্কারের নামে এটা বড় কুসংস্কার। খতিব বলেনÑ গান, নাচ, বাদ্যযন্ত্র বাজানো কুশিক্ষা। এটা জাতির জন্য অকল্যাণকামিতা। এটার ঠিকানা জাহান্নাম। মনে রাখতে হবে দ্বীন ও ইসলাম হারানোর জন্য জনগণ সন্তানদের স্কুলে পাঠায় না। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র-ছাত্রীদের ধর্ম শিক্ষা দেয়া হয় না, কুরআন শিক্ষা দেয়া হয় না। সন্তানদের নৈতিকতা ধ্বংসের অসৎ উদ্দেশে স্কুলে সঙ্গীতের শিক্ষক নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। অবিলম্বে বিদ্যালয়ে সঙ্গীত শিক্ষক নিয়োগের প্রজ্ঞাপন বাতিল করতে হবে। খতিব হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, আল্লাহকে ভয় করুন। মোদিকে ও আমেরিকাকে খুশি করতে চাইলে জাহান্নাম।

সঙ্গীত তাওহিদ ও ঈমানের বিপরীত। খতিব বলেন, পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করা হয়েছে, আল্লাহর রাস্তা থেকে মানুষকে গোমরাহ করার জন্য কিছু লোক আছে বাদ্যযন্ত্র ও গায়িকা খরিদ করে। এদের জন্য লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি অপেক্ষা করছে। খতিব বলেন, নবী করীম (সা.) বলেন, শাসককে নিয়মিত খাঁটি ও কল্যাণকামিতা হতে হবে। শাসনকার্য ইনসাফপূর্ণ হতে হবে। ন্যায়পরায়ণ শাসক আরশের নিচে ছায়া পাবেন। খতিব বলেন, আল্লাহ বলেন, তোমার অধীনস্থরা তোমার হাতের মুঠায়। অধীনস্থদের হক পুরোপুরি আদায় করছো কি না হাশরের ময়দানে জিজ্ঞেসিত হতে হবে। অধীনস্থদের প্রতি কল্যাণকামী হতে হবে। কল্যাণকামীর ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে হবে। খতিব বলেন, ইসলামের মৌলিক শিক্ষা জনগণের জন্য কল্যাণকামিতা। শাসককে জনগণের জন্য কল্যাণকামী হতে হবে। যে সেবা দেয়ার কথাছিল জনগণ তা’ পাচ্ছে কি না সে ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। খতিব বলেন, শাসক যদি কল্যাণকামিতায় ধোঁকা দেয় তার ঠিকানা হবে জাহান্নাম। নবী (সা.) বলেছেন, কেউ মুসলিম হয়ে খাদ্য দ্রব্যে ভেজাল দেয় সে আমাদের দলভুক্ত নয়।

খতিব বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকের বিশাল ঘাটতি রয়েছে। বিদ্যালয়ে মূল শিক্ষকের হাজার হাজার পদ খালি। খালি পদে শিক্ষাক নিয়োগ দেয়া হচ্ছে না। অথচ নাচ গানের শিক্ষক নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। এটা লুঙ্গি খুলে পাগড়ি পড়ার ন্যায়। নাচ গান বাদ্যযন্ত্র হারাম। নবী (সা.) বলেছেন, এমন সময় আসবে রেশমি কাপড়, বাদ্যযন্ত্র ও মদকে হালাল করে নিবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নৈতিকতা দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। উপদেষ্টারা কি নাচুন্না বুড়ি হয়ে গেছেন নাকি? এসব সংস্কারের নামে কুসংস্কার।

ঢাকার মোহাম্মদপুরের শ্যামলী শাহী মসজিদের খতিব ড. মুফতি মো. মোরশেদ আলম সালেহী গতকাল জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ানে বলেন, মানব ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব হচ্ছেন বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)। তিনি শুধুমাত্র আরবদের জন্য নন, বরং সমগ্র মানবজাতির জন্য রহমতস্বরূপ প্রেরিত হয়েছেন। কুরআনুল কারীমে আল্লাহ তা‘আলা ঘোষণা করেছেনÑ ‘আর আমি আপনাকে (হে মুহাম্মদ সা.) সমগ্র বিশ্বের জন্য রহমতস্বরূপ প্রেরণ করেছি।’ (সূরা আল-আম্বিয়া : ১০৭)

রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ব্যক্তিত্ব, চরিত্র ও শিক্ষা মুসলিম উম্মাহর জন্য আলোকবর্তিকা। আর তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও তাজীম ঈমানের অবিচ্ছেদ্য অংশ। প্রকৃতপক্ষে রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে সম্মান করা মানেই আল্লাহকে সম্মান করা। কারণ তিনি আল্লাহর প্রেরিত রাসূল। তাই রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি তাজীম মুসলমানদের জীবনে এক মৌলিক কর্তব্য। ইমাম কুরতুবি (রহ.) বলেন, ‘নবীজীর প্রতি তাজীম করা ঈমানের শাখাগুলোর মধ্যে অন্যতম শাখা।’

কুরআনে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি তাজীমের গুরুত্ব, আল্লাহ তা‘আলা কুরআনুল কারীমে বহু আয়াতে রাসূল (সা.)-কে সম্মান করার নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ ইরশাদ করেনÑ “হে ঈমানদারগণ! তোমরা তোমাদের কণ্ঠ নবীজীর কণ্ঠের ওপরে তুলো না এবং তাঁর সাথে কথা বলার সময় উচ্চস্বরে বলো না যেন তোমাদের আমল বিনষ্ট না হয়ে যায়।” (সূরা হুজরাত-২) উল্লিখিত আয়াতে কারিমায় নবীজির সামনে ভদ্রতা ও সম্মান প্রদর্শনকে আল্লাহ তা‘আলা সরাসরি ঈমানের সাথে সম্পৃক্ত করেছেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতাগণ নবীর ওপর দরুদ পাঠ করেন। “হে ঈমানদারগণ! তোমরাও তাঁর ওপর দুরুদ ও সালাম পাঠ করো। নিশ্চয়ই যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে কষ্ট দেয়, আল্লাহ তাদের দুনিয়া ও আখেরাতে লাঞ্ছিত করবেন।” (সূরা আহযাব-৫৬, ৫৭) উপরোক্ত আয়াতে কারীমা থেকে বোঝা যায়, আল্লাহ নিজেই নবীর ওপর দরুদ পাঠ করেন। তাই মুমিনদের কর্তব্য হলো সর্বোচ্চ সম্মান প্রদর্শনের মাধ্যমে নবীর ওপর দরুদ সালাম পাঠ করা। রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি অসম্মান বা অবজ্ঞা করা মারাত্মক গোনাহ এবং তা ঈমানকে বিনষ্ট করবে।

রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি তাজীম কোনো আনুষ্ঠানিক বিষয় নয়, বরং এটি ঈমানের মূল উপাদান। যে উম্মত যত বেশি নবীজিকে ভালোবাসবে ও শ্রদ্ধা করবে, সে তত বেশি আল্লাহর প্রিয় বান্দা হবে। একজন মুসলিম তখনই প্রকৃত মুসলিম হতে পারবে, যখন তার অন্তরে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি অপরিসীম ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা থাকবে। তাই আসুন, আমরা সকলেই রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি তাজীমকে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বাস্তবায়ন করি এবং তাঁর স্নেহময়ী সান্নিধ্য লাভের আশায় আখিরাতের জান্নাতের পথ সুগম করি। আল্লাহ তা‘আলা সেই তৌফিক দান করুন।(আমীন)

ঢাকা দক্ষিণ মুগদা ব্যাংক কলোনি, রসূলবাগ জামে মসজিদের ইমাম হাফেজ মাওলানা মুফতি রাহমাতুল্লাহ তাক্বী বিন আব্দুল গনি গতকাল জুমা-পূর্ব খুৎবায় বলেন, মানুষ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে শান্তি, নিরাপত্তা ও সাফল্য চায়। আমরা চাকরি, ব্যবসা, পড়াশোনা বা সম্পর্কের মাধ্যমে সুখ খুঁজে পাই, কিন্তু প্রকৃত শান্তি তখনই আসে যখন আমরা আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর প্রিয় নবী (সা.)-এর নির্দেশ মেনে চলি। আল্লাহ ও রাসূল (সা.)-এর আনুগত্য ছাড়া কোনো ব্যক্তি বা কোনো শক্তি আমাদের দুনিয়া ও আখিরাতের স্থায়ী সাফল্য নিশ্চিত করতে পারে না। আল্লাহ তা‘আলা এবং তাঁর রাসূল (সা.)-এর আনুগত্য মানব জীবনের সাফল্য, নিরাপত্তা ও শান্তির মূল চাবিকাঠি। অন্য কারো আনুগত্য গ্রহণযোগ্য নয়। প্রতিটি মুসলমানের জন্য অপরিহার্য যে, আল্লাহ ও রাসূল (সা.)-এর নির্দেশ যথাযথভাবে পালন করা হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, “হে ঈমানদারগণ! আল্লাহর আনুগত্য করো, রাসূলের আনুগত্য করো।” (সূরা আন-নিসা, ৪:৫৯) ইবাদত কেবল আল্লাহর জন্য এবং নবী (সা.)-এর দেখানো পথে করতে হবে। খতিব বলেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেনÑ “যে রাসূলের আনুগত্য করে, সে আসলে আল্লাহর আনুগত্য করেছে।” (সূরা আন-নিসা, ৪:৮০) রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে আমার আনুগত্য করে, সে আল্লাহর আনুগত্য করেছে। যে আমার অবাধ্য, সে আল্লাহর অবাধ্য।”( বুখারী-২৯৫৭, মুসলিম-১৮৩৫)। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, “যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করবে, আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।” (সূরা আন-নিসা, ৪:১৩) হে আল্লাহ! আমাদের অন্তরে আপনার আনুগত্যের শক্তি দিন। প্রিয় নবী (সা.)-এর সুন্নাহকে আমাদের জীবনের অংশ করুন এবং আমাদের সবাইকে জান্নাতের অনন্ত শান্তির উত্তরাধিকারী করুন।(আমীন)