Image description
বিভক্ত হয়ে পড়েছে ইহুদিরাও : ফ্লোটিলায় হামলার ঘটনায় বিশ্বজুড়ে বিক্ষোভ, নিন্দা গাজার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে আরো ১১ জাহাজ, আছেন বাংলাদেশি শহিদুল আলম : অনির্দিষ্টকালের জন্য অনশনে আটক অভিযাত্রীরা : ইসরাইলি হামলায় আরো ৫৩ ফিলিস্তিনি শহীদ

গত সপ্তাহে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে দেয়া ভাষণে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোগান জোর দিয়ে বলেছিলেন যে, গাজার ট্র্যাজেডি কেবল একটি মানবিক বিপর্যয় নয় বরং আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার জন্য একটি সংজ্ঞায়িত পরীক্ষা। তিনি বলেন, ‘দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে উদ্ভূত মূল্যবোধগুলো পশ্চিমে, বিশেষ করে ইউরোপে, ইসরাইলের ক্রমবর্ধমান আগ্রাসনের কারণে গুরুতর বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছে। আমাদের এই সত্যটি স্বীকার করতে হবে: প্রতিশ্রুত ভূমির প্রতি আচ্ছন্নতা দ্বারা পরিচালিত একটি ইসরাইলি প্রশাসন আঞ্চলিক শান্তি এবং মানবতার সম্প্রসারণবাদী নীতির সাথে ভাগ করা অর্জনগুলোকে ক্ষুণœ করছে। এই গণহত্যাকারী ক্যাডারকে আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে জবাবদিহি করতে হবে।’

অপ্রত্যাশিতভাবে ইসরাইলের অন্যতম বিশ্বাসযোগ্য থিঙ্ক ট্যাঙ্ক মিটভিম ইনস্টিটিউট কর্তৃক প্রকাশিত গবেষণাতেও এরদোগানের এ বার্তা প্রতিধ্বনিত হয়েছে। মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে প্রকাশিত মিটভিমের বার্ষিক বৈদেশিক নীতি জরিপ, ৭ অক্টোবরের হামলার প্রায় দুই বছর পর ইসরাইলি জনগণের মানসিকতার বিরল অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে। প্রায়শই, বিশ্বব্যাপী বিতর্কগুলো কেবল ইসরাইলি সরকারের সিদ্ধান্তের উপর কেন্দ্রীভূত হয়, সাধারণ ইসরাইলিরা বিশ্বে তাদের দেশের অবস্থানকে কীভাবে দেখে তা উপেক্ষা করে। এই বছরের জরিপটি একটি বিষয় স্পষ্ট করে: এমনকি ইসরাইলের অভ্যন্তরেও, বর্তমান নীতিগুলো কোথায় নিয়ে যাচ্ছে তা নিয়ে গভীর অস্বস্তি রয়েছে। জরিপ অনুসারে, বেশিরভাগ ইসরাইলি (৫৭ শতাংশ) আশঙ্কা করছেন যে গাজায় তাদের কর্মকা-ের কারণে তাদের দেশ একটি ‘অসৎ রাষ্ট্র’-এর দিকে ঝুঁকছে। রাজনৈতিকভাবে ইসরাইলের আন্তর্জাতিক অবস্থান খারাপ, যেখানে ৭০ শতাংশ জনগণ সরকারের কূটনীতিতে অসন্তুষ্ট। একই সময়ে, প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ ইসরাইলি (৬২ শতাংশ) এখনও উদার-গণতান্ত্রিক পশ্চিমাদের সাথে যুক্ত থাকার উপর অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়, যা বৈধতার আকাক্সক্ষা এবং চলমান দখলদারিত্বের খরচের মধ্যে উত্তেজনাকে তুলে ধরে।

বোধগম্যভাবে, গাজা এই দ্বিধার কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থিত। জরিপটি দেখায় যে ৫৫ শতাংশ ইসরাইলি এমন একটি আন্তর্জাতিক প্যাকেজকে সমর্থন করে যা একটি নিরস্ত্রীকৃত ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র তৈরি করবে, জিম্মিদের ফিরিয়ে দেবে, গাজায় হামাসের শাসন ভেঙে দেবে এবং আরব বিশ্বের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করবে। তবুও গাজা এবং পশ্চিম তীরকে সংযুক্ত করার পক্ষে সমর্থনও ৩৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে, যেখানে ৫২ শতাংশ মধ্যপন্থী আরব রাষ্ট্রগুলো সহ একটি বহুজাতিক বাহিনীকে অস্থায়ী প্রশাসন হিসেবে মোতায়েনের পক্ষে। এই ফলাফলগুলো একটি বিভক্ত সমাজ প্রকাশ করে, কিন্তু এমন একটি সমাজ যা ইসরাইলের বৈশ্বিক ভবিষ্যতের সাথে ফিলিস্তিনি ইস্যুর কেন্দ্রীয়তা এড়াতে পারে না। তুরস্কের উপর জরিপের ফলাফলগুলোও সমানভাবে উল্লেখযোগ্য। সিরিয়ায় আঙ্কারার ক্রমবর্ধমান প্রভাবের আলোকে, ৪৪ শতাংশ ইসরাইলি বলেছেন যে, তাদের দেশের প্রভাবের ক্ষেত্রগুলো বিভক্ত করার বিষয়ে তুরস্কের সাথে একটি সমঝোতায় পৌঁছানো উচিত যাতে সংঘর্ষ এড়ানো যায়। মোটামুটি সমান ভাগ তুরস্ককে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বিবেচনা করতে পছন্দ করে যাদের নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে অথবা সিরিয়াকে স্থিতিশীল করার অংশীদার হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। অন্য কথায়, ইসরাইলি জনগণও তুরস্কের সাথে সংঘর্ষের চেয়ে বাস্তবসম্মত সম্পৃক্ততা বৃদ্ধিতে বেশি আগ্রহী।

রাষ্ট্রীয় কৌশল এবং কূটনীতির উপর সমস্ত মনোযোগের পরেও, গাজা আমাদের মানবিক স্তরে অস্বস্তিকর প্রশ্নের মুখোমুখি হতে বাধ্য করে। এল মুন্ডোর জন্য একটি সাম্প্রতিক প্রবন্ধে, তুর্কি লেখক এচে তেমেলকুরান গ্রিসের একটি সমুদ্র সৈকতের কথা বলেছেন, যেখানে একটি ইসরাইলি পরিবারের আনন্দময় আগমন অন্যান্য পর্যটকদের অস্থির করে তুলেছিল। তাদের উচ্চস্বরে হাসি, উল্কি এবং হিব্রু ভাষা তাৎক্ষণিকভাবে গাজার দৃষ্টিকোণ থেকে প্রতিফলিত হয়েছিল। কেউ কেউ ভাবছিলেন যে, তাদের সাথে সাধারণ পর্যটকদের মতো আচরণ করা কি ঠিক। অন্যরা চুপ করে রইলেন, নিশ্চিত নন যে নীরবতা ভদ্রতা নাকি সহযোগিতা। তেমেলকুরান জিজ্ঞাসা করেন: গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত রাষ্ট্রের সাধারণ নাগরিকরা কি ‘নির্দোষ’ দর্শক হিসেবে থাকতে পারেন? পর্যটকরা কি নিজেদের উপভোগ করা রাষ্ট্রীয় নীতির সম্প্রসারণ হয়ে ওঠে? নাকি আনন্দ নিজেই একটি উস্কানি যখন সরকার যুদ্ধ চালায় তাদের দ্বারা বহন করা হয়?

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে এরদোগানের বক্তৃতা, মিটভিম অনুসন্ধান এবং তেমেলকুরানের প্রবন্ধ একসাথে সেই বিষয়গুলো তুলে ধরে যা অনেকে বিদেশীদের উপেক্ষা করে: সার্বভৌমত্ব, ন্যায়বিচার এবং জনমত একে অপরের সাথে জড়িত - জাতিসংঘের হল থেকে ইসরাইলের ভোট পর্যন্ত ইউরোপের সমুদ্র সৈকত পর্যন্ত। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট যখন গাজার পক্ষে কথা বলছেন এবং ন্যায়সঙ্গত আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার নীতি রক্ষা করছেন, তখন তিনি তা বিচ্ছিন্নভাবে করেননি বরং ইসরাইলি জনসাধারণ তাদের গতিপথ নিয়ে ক্রমবর্ধমান উদ্বিগ্নতার পটভূমিতে এবং বৃহত্তর বিশ্ব প্রতিটি স্তরে কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাতে হবে তা নিয়ে লড়াই করছে। সংক্ষেপে বলতে গেলে, গাজা কেবল একটি মানবিক সংকট নয়। এটি এমন একটি আয়না যেখানে আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার ভবিষ্যৎ প্রতিফলিত হয়।

ফ্লোটিলায় হামলার ঘটনায় বিশ্বজুড়ে বিক্ষোভ, নিন্দা : গাজায় ত্রাণ বহনকারী নৌবহরে হামলার ঘটনায় বিভিন্ন দেশে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনাটি নিয়ে অনেক দেশ উদ্বেগ জানিয়েছে এবং আন্তর্জাতিক জলসীমায় বাধা দেওয়ার জন্য ইসরাইলের সমালোচনা করেছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার ভলকার টুর্ক ইসরাইলকে ‘দ্রুত গাজার অবরোধ তুলে নিতে এবং সব সম্ভাব্য সব উপায়ে জীবন রক্ষাকারী উপকরণের প্রবেশাধিকার দেওয়ার’ আহ্বান জানিয়েছেন। এক বিবৃতিতে তিনি যোগ করেছেন, ইসরাইলকে অবশ্যই নিরপেক্ষ মানবিক সহায়তার যে প্রকল্প রয়েছে সেগুলো ‘কোনো বাধা ছাড়াই’ সহজতর করতে সম্মত হতে হবে।

যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে, তারা নৌকায় থাকা ব্রিটিশ নাগরিকদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে এবং ইসরাইলি কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছে যে ‘আমরা আশা করি পরিস্থিতি নিরাপদভাবে সমাধান হবে’। আইরিশ ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী সাইমন হ্যারিস এই প্রতিবেদনগুলোকে ‘উদ্বেগজনক’ বলেছেন এবং জানিয়েছেন, তিনি আশা করেন ইসরাইল আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলবে। আটক হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে অন্তত সাতজন আইরিশ নাগরিক আছেন, তাদের মধ্যে সিন ফেইন সেনেটর ক্রিস অ্যান্ড্রুজও রয়েছেন। কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো তার দেশে থাকা সব ইসরাইলি কূটনীতিককে দেশ থেকে বহিষ্কার করেছেন। তিনি এই বাধা দেওয়াকে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন ‘নেতানিয়াহুর আন্তর্জাতিক অপরাধ’ বলে নিন্দা জানিয়েছেন।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল-এর মহাসচিব অ্যাগনেস ক্যালামার্ড বলেছেন, গাজার ওপর ইসরাইলের অবরোধ ‘অবৈধ’ এবং ‘বহু দশক ধরে ইসরাইল যেভাবে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের দায়মুক্তি পাচ্ছে তার শেষ হতে হবে।’

সুমুদ ফ্লোটিলা থেকে শত শত মানুষকে আটকের ঘটনার পর প্রতিবাদে ইউরোপের বিভিন্ন শহরে ফিলিস্তিনিপন্থি বিক্ষোভকারীরা পথে নেমে আসেন। নিন্দা জানাতে ডাবলিন, প্যারিস, বার্লিন এবং জেনেভার রাস্তায় হাজার হাজার বিক্ষোভকারী সমবেত হন। বুয়েনস আইরেস, মেক্সিকো সিটি এবং করাচিতেও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ইতালির ইউনিয়নগুলো গতকাল সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে এবং দেশটিতে ১০০রও বেশি মিছিল বা গণসমাবেশের সম্ভাবনা রয়েছে। ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি অবশ্য গাজায় পৌঁছানোর প্রচেষ্টাকে সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমি এখনো বিশ্বাস করি, এসব কিছুই ফিলিস্তিনি জনগণের কোনো উপকারে আসে না।’

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান ইসরাইলি আগ্রাসনের সমালোচনা করে বলেছেন, এর মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছে যে ইসরাইল সরকারের শান্তির আশা তৈরি হতে দেওয়ার কোনো ইচ্ছা নেই। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা ইসরাইলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন যেন তারা অবিলম্বে নৌবহরে থাকা দক্ষিণ আফ্রিকানদের মুক্তি দেয়, যার মধ্যে প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট নেলসন ম্যান্ডেলার নাতি নকোসি জুয়েলেভেলিল ম্যান্ডেলাও রয়েছেন। গাজাগামী ত্রাণবহর আটকের পর স্পেন ইসরাইলি চার্জ ডি›অ্যাফেয়ার্সকে তলব করেছে। স্টেডফাস্টনেস ফ্লোটিলা জাহাজে থাকা সাত বেলজিয়ান নাগরিককে গ্রেপ্তারের ঘটনায় বেলজিয়াম ইসরাইলি রাষ্ট্রদূতকেও তলব করেছে। পাকিস্তান, বলিভিয়া এবং মালয়েশিয়াও ইসরাইলের কর্মকা-ের সমালোচনা করেছে। যুক্তরাষ্ট্রেও বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ দেখা গেছে।

অনির্দিষ্টকালের জন্য অনশনে আটক অভিযাত্রীরা : গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলায় ইসরাইলি অভিযানের পর আটক অগণিত মানবাধিকার কর্মীরা অনির্দিষ্টকালের জন্য অনশন শুরু করেছেন। শুক্রবার এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন (এফএফসি) কমিটি।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ইসরাইলের নৌবাহিনী গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা মিশনের নৌযানগুলো এবং ক্রু ও অভিযাত্রীদের আটকের প্রতিবাদে অনির্দিষ্টকালের জন্য অনশন শুরু করেছেন মিশনের অভিযাত্রীরা’।

ফিলিস্তিনের যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার বাসিন্দাদের জন্য খাদ্য ও ওষুধ নিয়ে গত ৩১ আগস্ট স্পেনের বন্দর থেকে গাজার উপকূলের দিকে যাত্রা শুরু করেছিল ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’ মিশনের অন্তর্ভুক্ত ৪৩টি নৌযান। সুইডেনের নাগরিক এবং আন্তর্জাতিক পরিবেশ আন্দোলন কর্মী গ্রেটা থুনবার্গ, দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী নেতা ও সাবেক প্রেসিডেন্ট নেলসন ম্যান্ডেলার নাতি ও রাজনীতিবিদ মান্ডলা ম্যান্ডেলাসহ ৪৪টি দেশের ৫০০ জন নাগরিক ছিলেন সেই মিশনে। এই নাগরিকদের কেউ পার্লামেন্টারিয়ান, কেউ আইনজীবী, কেউ রাজনৈতিক আন্দোলনকর্মী এবং কেউ বা স্বেচ্ছাসেবী।

কিন্তু গাজার জলসীমায় কাছাকাছি যাওয়ারি পরপরই একটি ব্যতীত সবগুলো নৌযান আটক করে ইসরাইলের নৌবাহিনী। নৌযান, ক্রু এবং আরোহীদের নিয়ে যাওয়া হয় ইসরাইলের বন্দরে।
গত বুধবার রাতে প্রথমে ১৩টি নৌযান আটকায় ইসরাইলের নৌবাহিনী; কিন্তু তারপরও বাকি ৩০টি নৌযান গাজার উদ্দেশে এগিয়ে যাচ্ছিল। পরের দিন বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত একে একে ২৯টি নৌযান আটক করে ইসরাইলের নৌ সেনারা। সর্বশেষ নৌযানটিকে আটক করা হয়েছে আজ শুক্রবার সকালে।
এফএফসির বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বুধবার যেদিন অভিযাত্রীদের আটক করা শুরু হয়, সেদিনই অনশনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তারা।

গাজার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে আরো ১১ জাহাজ, আছেন বাংলাদেশি শহিদুল আলম : আন্তর্জাতিক সংস্থা ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন (এফএফসি) বৃহস্পতিবার জানিয়েছে যে, বছরের পর বছর ধরে চলা ইসরাইলি অবরোধের বিরুদ্ধে লড়াই করতে আরো ১১টি জাহাজ গাজা উপত্যকার দিকে যাত্রা করছে। এক বিবৃতিতে এফএফসি জানিয়েছে যে, ইতালীয় এবং ফরাসি পতাকাবাহী দুটি নৌকা ২৫ সেপ্টেম্বর ইতালির ওট্রান্টো ছেড়েছিল এবং ৩০ সেপ্টেম্বর জাহাজ কনসায়েন্স তাদের সাথে যোগ দিয়েছিল। এসব নৌকায় প্রায় ১০০ জন অধিকারকর্মী আছেন। বাংলাদেশ থেকে অংশ নেওয়া দৃকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও আলোকচিত্রী শহিদুল আলম এই বহরে থাকা ‘কনসায়েন্স’ নামের জাহাজটিতে আছেন। এসব নৌযানের লাইভ ট্র্যাকিং এই লিংকে দেখা যাচ্ছে।

গতকাল শুক্রবার দুপুরে ফেসবুকে দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় শহিদুল আলম বলেছেন, তাদেরটা সবচেয়ে বড় জাহাজ। তাদের সঙ্গে আরো আটটি ছোট নৌকা আছে। আজ তাঁরা ফিলিস্তিনি টাইম জোনে পৌঁছেছেন। তবে এখনো দূরত্ব আছে। ১৫ বছরের সমুদ্র অভিযানের অভিজ্ঞতা আছে এফএফসির। এর আগে এফএফসি মাদলিন ও হান্দালা ফ্লোটিলায় অংশ নিয়েছিল। এবার অবরোধ ভাঙতে এফএফসি ব্যবহারিক পরামর্শ, দিকনির্দেশনা ও প্রক্রিয়াগত সহায়তা দিচ্ছে। কোয়ালিশনের তথ্য অনুযায়ী, নৌযানগুলো বর্তমানে ক্রিট দ্বীপের (পূর্ব ভূমধ্যসাগর) উপকূলে অবস্থান করছে। ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন গাজায় মানবিক সহায়তা পৌঁছানো ও সেখানে চলমান অবরোধের বিষয়ে আন্তর্জাতিক মনোযোগ আকর্ষণের লক্ষ্যে বেশ কয়েকবার মিশন চালিয়েছে।
ইসরাইলি হামলায় আরো ৫৩ ফিলিস্তিনি শহীদ : ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় হামলা জোরদার করেছে ইসরাইলি সেনাবাহিনী। উপত্যকাটিতে দখলদার বাহিনীর হামলায় একদিনে আরো ৫৩ জন নিহত হয়েছেন। একইসঙ্গে গাজা সিটিতে অবস্থানরত লাখো মানুষকে শহর ছাড়তে শেষবারের মতো হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইসরাইল। এমনকি গাজা সিটিতে থেকে যাওয়া সবাইকে ‘সন্ত্রাসী কিংবা সন্ত্রাসীদের সমর্থক’ হিসেবে বিবেচনা করা হবে বলেও হুমকি দেওয়া হয়েছে।

ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরাইল কাটজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লেখেন, গাজা সিটিতে থেকে যাওয়া সবাইকে ‘সন্ত্রাসী কিংবা সন্ত্রাসীদের সমর্থক’ হিসেবে বিবেচনা করা হবে। আল জাজিরা বলছে, ইসরাইলি বিমান ও স্থল হামলায় গাজা সিটি কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন ডজনের পর ডজন মানুষ নিহত হচ্ছে, ভেঙে পড়ছে আবাসিক ভবন ও স্কুল। হাজারো মানুষ বাধ্য হয়ে দক্ষিণের দিকে পালিয়ে যাচ্ছে, তবে পালানোর পথেও হামলার মুখে পড়ছেন তারা। আল জাজিরাকে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরাইলি এই আগ্রাসনে গাজায় মোট প্রাণহানি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৬ হাজার ২৮৮ জনে। আহত হয়েছেন আরো ১ লাখ ৬৯ হাজার ১৬৫ জন। সূত্র : ডেইলি সাবাহ, আনাদোলু, আল-জাজিরা।