Image description
পিআর পদ্ধতি সংবিধানে নেই, বিশিষ্টজনদেরও বিরোধিতা : আরপিও সংশোধনী প্রস্তাবটি অপেক্ষা করছে আইন মন্ত্রণালয়ে

একটি সুন্দর, অবাধ, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনে ঘোষিত রোডম্যাপ অনুযায়ী কাজ করছে নির্বাচন কমিশন-ইসি। যদিও রোডম্যাপের অনেক কাজ ইসি অনেক আগেই শুরু করেছে বা অনেক কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে সম্পন্ন হয়েছে। ফলে নির্বাচন আয়োজনে মোটা দাগের কাজগুলো সম্পন্ন করেছে ইসি।

ইতোমধ্যে ৩০০ আসনের সীমানা নির্ধারণ চূড়ান্ত করা হয়েছে, ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে, ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা প্রকাশ করা হয়েছে এবং তা সংস্কারের জন্য কাজ চলছে, ব্যালট পেপারসহ আনুষঙ্গিক পণ্য ক্রয় করে মজুদ করা হচ্ছে নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে। তবে সম্প্রতি আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক (পিআর পদ্ধতির) নির্বাচন নিয়ে দেশের কয়েকটি দল জোটবদ্ধ হয়ে ব্যাপক প্রচারণা চালাচ্ছে এবং এ পদ্ধতির নির্বাচন না হলে আন্দোলনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। ফলে রাজনৈতিক মাঠে তৈরি হয়েছে বিভিন্ন বিরোধ, রাষ্ট্রের বিভিন্ন মহল থেকে নির্বাচন বন্ধের শঙ্কা করা হচ্ছে। তবে রাষ্ট্রের বিভিন্ন পেশার স্বনামধন্য ব্যক্তিত্ব ও বিশ্লেষকদের সাথে নির্বাচন কমিশন সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সাথে সংলাপের আয়োজন করে যেখানে তারা দ্রুত নির্বাচনের দাবি জানান এবং বিভিন্ন বাধা-চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করেন। সাথে সাথে দেশের বর্তমান সার্বিক প্রেক্ষাপটে নির্বাচনের নতুন পদ্ধতি পিআর ব্যবস্থার বিরোধিতা করেন।

সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সাথে গত রোববার সংলাপের আয়োজন করে নির্বাচন কমিশন। সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে সংলাপে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা নির্বাচন কমিশনকে নানা পরামর্শ দেন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ড. এ এস এম আমানুল্লাহ বলেন, পিআর (সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) পদ্ধতির জন্য যে অবকাঠামো ও প্রস্তুতি প্রয়োজন, বাংলাদেশ এখনো সে জন্য প্রস্তুত নয়। কারণ যেসব দেশে এই পদ্ধতি কার্যকরভাবে চলছে, তাদের বাস্তবতা ও আমাদের বাস্তবতা এক নয়। এই পদ্ধতি চালু হলে দেশে একটি বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। এই মুহূর্তে পিআর সিস্টেম বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা বা প্রস্তুতি পর্যাপ্ত নয়। এখনই এটি প্রয়োগ করা উচিত হবে না।

পিআর প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, জামায়াতে ইসলামীর পিআর (প্রোপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন) পদ্ধতির দাবি এবং এনসিপির প্রতীক সংক্রান্ত জটিলতার কোনো প্রভাব নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে না। বিদ্যমান আইনের আওতায় নির্বাচন কমিশন সমস্ত কার্যক্রম পরিচালনা করছে। আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে নির্বাচন কমিশন কোনো কাজ করে না, করবেও না। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের জন্য আইন যেভাবে আছে, সে অনুযায়ীই নির্বাচন কমিশন নির্বাচনী কার্যক্রমের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

পিআর পদ্ধতির নির্বাচন প্রসঙ্গে ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বলেন, সংবিধানে যে পদ্ধতির কথা বলা হয়েছে আমরা সেভাবেই নির্বাচনের আয়োজন করছি। এখন রাজনৈতিক দলের বিভিন্ন দাবি থাকতে পারেÑ তারা তা সরকারের সাথে আলোচনা করবে। কিন্তু আমরা তো চাইলেই সংবিধান বা আইন পরিবর্তন করতে পারব না। অতএব আইনে যেভাবে আছে সে অনুযায়ী কাজ চলছে। অন্যদিকে ইসির গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ (আরপিও) অধ্যাদেশ ২০২৫ সংশোধিত বিদ্যমান ধারায় পিআর পদ্ধতির উল্লেখ নেই। ইসির সংশোধন করে যে প্রস্তাব আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে সেখানেও তা উল্লেখ করা হয়নি। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংস্কারে এবার ছোট-বড় প্রায় ৪৪টি পরিবর্তনের প্রস্তাব দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। যেখানে একক প্রার্থীর আসনে ‘না’ ভোট ও জোটের প্রার্থীকে নিজ দলের প্রতীকে ভোট করার কথাও বলা হয়েছে। এ ছাড়া আরপিও সংস্কারে ইভিএমের বিধান যেমন বাদ দেয়া হয়েছে, তেমন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংজ্ঞায় সশস্ত্র বাহিনী যুক্ত, অনিয়মে পুরোনো আসনের ভোট বাতিলের ক্ষমতা পুনর্বহালের প্রস্তাবও দিয়েছে ইসি।

এদিকে প্রথম সংসদ নির্বাচনের আগে ১৯৭২ সালের গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) প্রার্থীর নির্বাচনী ব্যয় নির্ধারণ করে দেয়া হয় ২০ হাজার টাকা। এরপর বাড়াতে বাড়াতে সর্বশেষ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে এ ব্যয় ধরা হয় সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা। কিন্তু ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের নির্দিষ্ট ব্যয়সীমা তুলে দিতে চায় নির্বাচন কমিশন। এর পরিবর্তে ভোটারপ্রতি ১০ টাকা ব্যয় বেঁধে দেয়ার প্রস্তাব তুলেছে তারা। ইসির এ প্রস্তাব আরপিওতে যুক্ত হলে সাড়ে সাত লাখ ভোটারের আসনে একজন প্রার্থী ৭৫ লাখ টাকা ব্যয় করারও সুযোগ পাবেন। নির্বাচন ব্যবস্থা যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে এবার আরপিওতে নতুন অনেক বিষয় যেমন যুক্ত হতে যাচ্ছে, তেমন অনেক কিছু বাদও পড়ছে। এসব প্রস্তাব আইন মন্ত্রণালয়ে যাচাই-বাছাই হয়ে উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদনের পর রাষ্ট্রপতি আরপিওর অধ্যাদেশ জারি করবেন। আরপিও সম্পর্কে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার আবদুর রহমানেল মাছউদ বলেন, এবার বেশ কিছু নতুন বিষয় যুক্ত করা হয়েছে। আমরা আরপিও সংশোধন প্রস্তাব চূড়ান্ত করে পাঠিয়েছি। এখন আইন মন্ত্রণালয় যাচাই-বাছাই করছে। এরপর উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন হতে হবে, তারপর অধ্যাদেশ করে পাঠাবে।

নির্বাচনের সার্বিক আয়োজন নিয়ে সুশীল সমাজের সংলাপে প্রধান নির্বাচন কমিশনার-সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে অনেক কাজ সম্পন্ন করেছি। এর মধ্যে বিশাল একটি কাজ ভোটার তালিকা, তা বাড়ি বাড়ি গিয়ে শেষ করেছি। নারী ভোটার ব্যবধান কমিয়েছি। ৯টি আইন আমরা সংশোধন করছি। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যা যা প্রস্তুতি নেয়ার, অনেক কিছু এগিয়ে নিয়েছি।