
সংক্ষিপ্ত স্কোর: বাংলাদেশ ১৯.১ ওভারে ১৫০/৮ (সোহান ৩১*, শরিফুল ১১* ; তানজিদ ২, পারভেজ ২, সাইফ ১৮, জাকের ৩২, শামীম ৩৩, নাসুম ১০, সাইফউদ্দিন ৪, রিশাদ ২)
ফল: বাংলাদেশ ২ উইকেটে জয়ী।
আফগানিস্তান ২০ ওভারে ১৪৭/৫ (ওমরজাই ১৯*, নবী ২০*; অটল ২৩, ইব্রাহিম ৩৮, তারাখিল ১, রাসুলি ১৪, গুরবাজ ৩০)
শেষ দিকে দ্রুত উইকেট হারিয়ে ম্যাচ থেকে ছিটকে যাওয়ার শঙ্কায় ছিল বাংলাদেশ। কিন্তু আবারও নুরুল হাসান সোহানের দৃঢ়তায় দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে আফগানিস্তানকে ২ উইকেটে হারিয়েছে তারা। তাতে এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ নিশ্চিত করেছে জাকের আলীর দল। সোহানকে স্নায়ুক্ষয়ী মুহূর্তে যোগ্য সঙ্গ দেন শরিফুল। শেষ দিকে দুটি চার মেরে বাংলাদেশ জয়ের বন্দরে পৌঁছে দিয়েছেন।
বাংলাদেশ তাদের অষ্টম উইকেট যখন হারায় তখনও ১২ বলে দরকার ১৯ রান। ১৯তম ওভারের প্রথম বলেই ছক্কা হাঁকিয়ে সোহান বুঝিয়ে দেন ম্যাচ হাতছাড়া করছেন না তিনি। তার পর শরিফুলকে দিয়ে দ্রুত কিছু রানও নিয়েছেন। তাতে ৫ বল হাতে রেখেই নিশ্চিত হয় জয়।
শারজায় ১৪৮ রানের লক্ষ্যে পাওয়ার প্লেতে ২৪ রানে ৩ উইকেট পতনের পর বাংলাদেশকে দিশা দেখাতে থাকেন জাকের আলী ও শামীম হোসেন। চতুর্থ উইকেটে ৫৬ রান যোগ করেন তারা। জাকের ৩২ রানে আউট হলে ৮০ রানে পরে চতুর্থ উইকেট। তখনও প্রান্ত ধরে ছিলেন শামীম। শামীম (৩৩) দলের স্কোর একশ পার করে পঞ্চম উইকেট হিসেবে বিদায় নেন। তার পর সোহানের ব্যাটিংয়েই বাংলাদেশ জয়ের পথে ছুটেছে। ব্যবধান কমাতে থাকেন তিনি। ঠিক এই সময়ে ১২২ রান থেকে ১২৯ রানের মধ্যে দ্রুত ৩ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ থেকে ছিটকে যাওয়ার শঙ্কাও জাগে। শেষ পর্যন্ত সোহান দৃঢ়তা দেখিয়ে সিরিজ নিশ্চিতে অবদান রেখেছেন। ২১ বলে ১ চার ৩ ছক্কায় ৩১ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। শরিফুলও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। ৬ বলে ২ ছক্কায় অপরাজিত থাকেন ১১ রানে।
আফগানদের হয়ে ২৩ রানে ৪ উইকেট নেন আজমতউল্লাহ ওমরজাই। ২৯ রানে দুটি নেন রশিদ খান। একটি করে নেন মুজিব উর রহমান ও নূর আহমেদ।
একই ওভারে সাইফ-রিশাদকে ফেরালেন ওমরজাই
এক দিক দিয়ে ব্যবধান কমছে, অন্যপ্রান্তে উইকেটও পড়ছে বাংলাদেশের। তাতে শেষ দিকে রোমাঞ্চকর হয়ে দাঁড়াচ্ছে ম্যাচ। সাইফউদ্দিন আগের বলে চার মারলেও ১৭.৩ ওভারে ওমরজাইর বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন ৪ রানে। তাতে ১২৭ রানে সপ্তম উইকেট হারায় বাংলাদেশ। একই ওভারে ওমরজাই জোড়া আঘাতে রিশাদকেও বোল্ড করেছেন ২ রানে। তখন ১২৯ রানে বাংলাদেশ হারায় অষ্টম উইকেট!
রশিদ খানের আঘাতে পড়লো ষষ্ঠ উইকেট
শামীমের আউটের পর দ্রুত গতিতে রান তুলে ব্যবধান কমাচ্ছিলেন নুরুল হাসান সোহান। সঙ্গী ছিলেন নাসুম। ১৭তম ওভারে নাসুমকে বোল্ড করে ষষ্ঠ উইকেটের পতন ঘটান রশিদ খান। নাসুম ১১ বলে ১ ছক্কায় ১০ রানে বোল্ড হয়েছেন।
৩৩ রানে আউট শামীম
জাকেরের সঙ্গে মিলে জুটি গড়েছিলেন শামীম। জাকের আউট হলে নুরুল হাসান সোহানকে নিয়ে দ্রুত গতিতে রান তুলছিলেন। তাদের ব্যাটেই স্কোর একশ ছাড়ায় ১৪তম ওভারে। ১৫তম ওভারের শুরুর বলে শামীমকে ৩৩ রানে থামিয়েছেন নূর আহমেদ। শামীম মেরে খেলতে গিয়ে ক্যাচ আউট হয়েছেন। তার ২২ বলের ইনিংসে ছিল ৩টি চার ও ২টি ছক্কা।
জাকেরকে ফিরিয়ে জুটি ভাঙলেন রশিদ
২৪ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে বিপদেই পড়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। পাওয়ার প্লের সেই ধাক্কার পর বাংলাদেশকে ঝড়ো ব্যাটিংয়ে এগিয়ে নিতে থাকেন জাকের আলী ও শামীম হোসেন। চতুর্থ উইকেটে ৩৬ বলে ৫৬ রান যোগ করেন তারা। ১০.৫ ওভারে জাকের আলীকে এলবিডাব্লিউতে আউট করে জুটি ভেঙেছেন রশিদ খান। তাতে ৮০ রানে পড়েছে চতুর্থ উইকেট। জাকের রিভিউ নিয়েও রক্ষা পাননি। তার ২৫ বলে ৩২ রানের ইনিংসে ছিল ২টি চার ও ২টি ছয়।
পাওয়ার প্লেতে তিন উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৩৭
পাওয়ার প্লেতে ৩ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে বাংলাদেশ। ৫ ওভার শেষে স্কোর ছিল ৩ উইকেটে ২৬। শেষ ওভারে একটি চার ও ছক্কা মেরে স্কোরটা ৩৭ রানে নেন শামীম।
সাইফের বিদায়ে বিপদে বাংলাদেশ
১৬ রানে দ্বিতীয় উইকেট পতনের পর সাইফ হাসান চড়াও হচ্ছিলেন। তখন তার ওপরই নির্ভর করছিল রানের চাকা। ৪.৪ ওভারে মুজিব উর রহমানের বলে মেরে খেলতে গিয়ে অটলের দুর্দান্ত ক্যাচে ফিরতে বাধ্য হন সাইফ। ফেরার আগে ১৪ বলে ১৮ রান করেন তিনি। তাতে ছিল ২টি ছক্কা ও একটি চারের মার। তাতে পাওয়ার প্লেতে ২৪ রানে তৃতীয় উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে বাংলাদেশ।
দ্রুত ফিরলেন দুই ওপেনার
১৪৮ রানের লক্ষ্যে শুরুতেই চাপে পড়েছে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ওভারে পেসার ওমরজাইর শিকার হন ওপেনার তানজিদ হাসান। রশিদ খানকে ক্যাচ দিয়ে ২ রানে ফিরেছেন তিনি। ৩.১ ওভারে আবার আঘাত হানেন ওমরজাই। আরেক ওপেনার পারভেজ হোসেনকে (২) এলবিডাব্লিউতে ফেরান তিনি। তাতে ১৬ রানে শুরুতে দুই ওপেনারকে হারিয়ে চাপে পড়ে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশকে ১৪৮ রানের লক্ষ্য দিয়েছে আফগানিস্তান
সিরিজ জয়ের লক্ষ্যে আফগানিস্তানকে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে ৫ উইকেটে ১৪৭ রানে থামিয়েছে বাংলাদেশ। লাল-সবুজদের টাইট বোলিংয়ে স্কোর গড়তে হিমশিম খেয়েছে রশিদ খানের দল।
শুরুর দিকে অটল (২৩), ইব্রাহিম (৩৮) ও গুরবাজ (৩০) ভালো অবদান রাখলেও মাঝের ওভারে নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে ম্যাচে ফিরতে সক্ষম হয় বাংলাদেশ। ইনফর্ম মোহাম্মদ নবী শেষ দিকে খেলেছেন ১২ বলে গুরুত্বপূর্ণ ২০ রানের ইনিংস। তাতে ছিল ২টি চার ও ১ টি ছক্কা। তাতেই স্কোরটা প্রায় দেড়শর কাছে গেছে। সঙ্গী আজমতউল্লাহ ওমরজাই ১৭ বলে ১৯ রানে অপরাজিত থাকেন।
২৫ রানে দুটি উইকেট নেন নাসুম আহমেদ। রিশাদও নেন দুটি। তিনি খরচ করেন ৪৫ রান। মিতব্যয়ী বোলিংয়ে শরিফুল ইসলাম ১৩ রানে একটি নেন। মোস্তাফিজ কোনও উইকেট না পেলেও ৪০ রান খরচ করেন।
গুরবাজকে থামালেন শরিফুল
ডেথে এসে চড়াও হওয়ার চেষ্টায় ছিলেন গুরবাজ। তার দুই ছক্কাতেই স্কোর একশ ছাড়িয়েছে। ১৬.২ ওভারে তাকে থামিয়েছেন শরিফুল ইসলাম। ২২ বলে ৩০ রান করা গুরবাজ শরিফুলের বলে বোল্ড হয়েছেন। তার ইনিংসে ছিল ১টি চার ও ২টি ছক্কা।
নাসুমকে ছক্কা মারার পরই আউট রাসুলি
দ্রুত তৃতীয় উইকেট পতনের পর মেরে খেলার চেষ্টা ছিল দারউইশ রাসুলির। নাসুমের ১৩.২ ওভারে একটা ছক্কা মেরে স্কোর ৯০ রান করেন তিনি। পরের বলে আবারও শট খেলার চেষ্টা করতে গেলে বাউন্ডারি লাইনে পারভেজের হাতে ধরা পড়েন ১৪ রানে। তার ৯ বলের ইনিংসে ছিল ২টি ছক্কা!
নাসুমের আঘাতে তৃতীয় উইকেট হারালো আফগানিস্তান
ইব্রাহিমকে ফেরানোর পর দ্রুত তৃতীয় উইকেটও তুলে নেয় বাংলাদেশ। ১১.১ ওভারে অভিষিক্ত তারাখিলকে ১ রানে আউট করেন রিশাদ হোসেন। মেরে খেলতে গিয়ে তারাখিল ১ রানে সাইফউদ্দিনের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন।
ইব্রাহিমকে থামালেন নাসুম
শুরু থেকে প্রান্ত আগলে খেলছিলেন ইব্রাহিম জাদরান। মাঝে মাঝে চড়াও হচ্ছিলেন তিনি। ৫৫ রানে প্রথম উইকেট পতনের পর ৭২ রানে তাকে ফেরান নাসুম আহমেদ। বাউন্ডারিতে ক্যাচ দিয়ে ইব্রাহিম বিদায় নেন ৩৮ রানে। তার ৩৭ বলের ইনিংসে ছিল ৩টি চার ও ১টি ছয়।
রিশাদকে টানা দুই ছক্কা মেরে আউট অটল
পাওয়ার প্লের পর রান বাড়িয়ে নিতে রিশাদ হোসেনের প্রথম ওভারকে টার্গেট করেন ওপেনার সেদিকুল্লাহ অটল। অষ্টম ওভারে টানা দুই ছক্কায় স্কোর ছাড়ান পঞ্চাশ। ৭.৫ ওভারে আবারও ছক্কা মারতে গেলে পারভেজের হাতে তালুবন্দি হন ২৩ রানে। তার ১৯ বলের ইনিংসে ছিল ১টি চার ও ২টি ছয়। তাতে ৫৫ রানে প্রথম উইকেট হারায় আফগানিস্তান।
পাওয়ার প্লেতে আফগানদের বিনা উইকেটে ৩৫
বাংলাদেশের টাইট বোলিংয়ে পাওয়ার প্লেতে বিনা উইকেটে ৩৫ রান করতে পেরেছে আফগানিস্তান। ৫ ওভারে স্কোর ছিল ২২ রান। মোস্তাফিজের শেষ ওভারে একটি চার ও ছক্কা মেরে স্কোর বাড়িয়ে নেন ইব্রাহিম জাদরান। শেষ বলে অবশ্য ইব্রাহিমের ক্যাচ উঠলেও নিতে পারেনি বাংলাদেশ
টসের মুহূর্তের ছবি। সিরিজ জয়ের লক্ষ্যে শুরুতে বোলিংয়ে বাংলাদেশ
আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে টস হারলেও দ্বিতীয় ম্যাচে টস জিতেছে বাংলাদেশ। শুরুতে অবশ্য বোলিং নিয়েছে তারা।
শারজায় আজ জিতলেই এক ম্যাচ হাতে রেখে সিরিজ নিশ্চিত করবে জাকের আলীর দল। প্রথম ম্যাচটা তারা জিতেছে ৪ উইকেটে। তাতে করে দুই দলের মুখোমুখি লড়াইয়ে এখন সমতা নিয়ে এসেছে টাইগাররা। ১৪ টি-টোয়েন্টিতে দুটি দলেরই জয় এখন ৭টি করে।
একাদশে কারা
বাংলাদেশ উইনিং কম্বিনেশন ধরে রাখেনি। গতকালকের ম্যাচ থেকে দুটি পরিবর্তন এনেছে। তাসকিন আহমেদ ও তানজিম হাসানকে বাদ দিয়ে একাদশে এসেছেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ও শরিফুল ইসলাম। আফগানদের দলে পরিবর্তন এসেছে ৩টি। অভিষেক হচ্ছে ওয়াফিউল্লাহ তারাখিলের। তার সঙ্গে এসেছেন আব্দুল্লাহ আহমদজাই ও মুজিব উর রহমান। বাদ পড়েছেন মোহাম্মদ ইশাক, ফরিদ আহমেদ ও শরফুদ্দিন আশরাফ।
বাংলাদেশ একাদশ: জাকের আলী (অধিনায়ক), তানজিদ হাসান, পারভেজ হোসেন, সাইফ হাসান, নুরুল হাসান, শামীম হোসেন, সাইফউদ্দিন, মোস্তাফিজুর রহমান, রিশাদ হোসেন, নাসুম আহমেদ ও শরিফুল ইসলাম।
আফগানিস্তান একাদশ: রহমানউল্লাহ গুরবাজ, ইব্রাহিম জাদরান, সেদিকুল্লাহ অটল, দারউইশ রাসুলি, আজমতউল্লাহ ওমরজাই, রশিদ খান (অধিনায়ক), মোহাম্মদ নবী, ওয়াফিউল্লাহ তারাখিল, মুজিব উর রহমান, আব্দুল্লাহ আহমদজাই ও নূর আহমেদ।