
পর্যটক এক্সপ্রেসে চড়ে গত বুধবার কক্সবাজার থেকে ঢাকায় আসছিলেন ফাইয়াজ। সকালে চাকরির পরীক্ষা। রাত সাড়ে ৯টার দিকে চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার কমলমুন্সির হাট স্টেশনে পৌঁছাতেই ট্রেনের ইঞ্জিনের বাফার হুক ও হোস পাইপ ভেঙে যায়। ১৯টি বগি রেখেই ওই ট্রেন চলে যায় চট্টগ্রাম। রেখে যাওয়া বগির একটিতে ছিলেন ফাইয়াজ। তিনি বলেন, পরের দিন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরির প্রার্থী ছিলাম আমি। সকাল ১০টায় উপস্থিত হওয়ার কথা ছিল। পর্যটক এক্সপ্রেস সকালে ঢাকায় পৌঁছালে রেস্ট নিয়ে যেতাম চাকরির প্রতিষ্ঠানে। কিন্তু হঠাৎ করে এই ঘটনাটি ঘটে গেল। রাত ১১টার পর উদ্ধারকারী ট্রেন আসে। কিন্তু আমার সকালে পরীক্ষার কী হবে- সেটি কে দেখবে? আমার মতো অনেকেই ট্রেনে ছিল। সবাই কোনো না কোনো প্রয়োজনে এই ট্রেনটি ধরেছে। কিন্তু ট্রেনের এই হাস্যকর সমস্যার কারণে অনেকেই নির্দিষ্ট সময়ে তাদের গন্তব্যে যেতে পারবে না। আমি নিজেই পরের দিন তড়িঘড়ি করে পরীক্ষা দিতে গিয়েছি।
বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (রোলিং স্টক) আহমেদ মাহবুব চৌধুরী বলেন, কিছু ইঞ্জিন পুরাতন থাকে। সেদিনও একটি ট্রেনের বাফার ভেঙে গেছে, দেখা যায় সেটি একটা পুরাতন বাফার। আঞ্চলিক এলাকাগুলোতে এগুলো মেরামত হয়। বগি রেখে যাওয়ার বিষয়টি অনেক সময় ট্রেনের পথের প্রয়োজনে করা হয়। তবে, তদন্ত ছাড়া আলাদাভাবে কিছু বলতে পারছি না।
রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক ফরিদ আহমেদ মানবজমিনকে বলেন, পশ্চিমাঞ্চলে ব্রডগেজ এবং মিটারগেজ- দুই ধরনের ইঞ্জিন ব্যবহার হয়। ব্রডগেজে সমস্যা কম। মিটারগেজে সমস্যা আছে। আমরা অভিজ্ঞতার আলোকে যা বুঝি, কিছু সমস্যা থাকে। যেমন- ৩ হাজার সিরিজের মডিউলের জন্য প্রযুক্তি জ্ঞান রেলওয়েতে নাই। এটি কোরিয়া থেকে আনা হয়েছিল। প্রযুক্তি জ্ঞান না থাকার ফলে এই সিরিজের যন্ত্র পরিচালনার জন্য ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে যারা আছেন, তারা এগুলো বুঝে উঠতে পারেন না। নতুন করে কিছু পার্টস আনা হচ্ছে, মডিউলারও আছে সেখানে। সেগুলো নিয়ে এলে রিপেয়ার করা হবে। প্রযুক্তি কিংবা সফটওয়্যার সম্পর্কেও সঠিকভাবে রেলের কর্মকর্তারা অবগত নন। বগির ক্ষেত্রে একটি লোকোমোটিভ ও একটি কোচ আটকানোর জন্য কাপলিং থাকে। ট্রেনগুলোর ক্ষেত্রে দেখা যায়, কাপলিং ভেঙে যায়। স্ক্রু খুলে যায়। বেশ কয়েক বছর হয়ে গেছে এসব যন্ত্রের। মেকানিক্যাল সেকশন থেকে মোডিফিকেশন করা হচ্ছে। বাংলাদেশ রেলওয়ের আরেকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে একই কথা জানিয়েছেন। তিনিও বলেন, রেলের বর্তমান ইঞ্জিনগুলো কোরিয়া থেকে আনা হয়েছে। কিন্তু এই সকল ইঞ্জিন চালানোর মতো দক্ষতা রেলের নেই। তাই মাঝপথে ইঞ্জিন বিকলের কবলে পড়ে। তা ছাড়া, পুরাতন ইঞ্জিন যেগুলো আছে, সেগুলোর লাইফ টাইম মোটামুটি শেষ। সেগুলো দিয়েও কোনোভাবে চলছে।