Image description
বড় চ্যালেঞ্জ অশুল্ক বাধা ও বন্দরের ধীরগতি

বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকরা মনে করছেন, ভারত ও চীনের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক বৃদ্ধি থেকে কিছু ক্রয়াদেশ বাংলাদেশে স্থানান্তর হতে পারে, তবে এটি স্বল্পমেয়াদি সুযোগ মাত্র। টেকসই প্রবৃদ্ধির জন্য দক্ষতা, সক্ষমতা ও প্রতিযোগিতা বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছেন তাঁরা। রপ্তানিকারকরা জানান, যুক্তরাষ্ট্র ২ এপ্রিল বাংলাদেশের পোশাকে ৩৭ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছিল। পরে আলোচনার মাধ্যমে ৮ জুলাই তা কমিয়ে ৩৫ শতাংশ এবং ৩১ জুলাই আরও কমিয়ে ২০ শতাংশে নামানো হয়। এদিকে যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি চীনের সঙ্গে বাণিজ্য বিরতি আরও ৯০ দিনের জন্য বাড়িয়েছে, তবে শুল্কসংক্রান্ত মূল বিরোধ এখনো অমীমাংসিত। ভারতের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র এখন ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করেছে, যা রাশিয়া থেকে তেল আমদানি অব্যাহত রাখার প্রতিক্রিয়া হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে কিছু ক্রেতা বিকল্প হিসেবে বাংলাদেশকে বিবেচনা করতে পারেন বলে মনে করছেন উদ্যোক্তারা।

এ বিষয়ে ডেনিম এক্সপার্ট লিমিটেডের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, ‘আমরা যুক্তরাষ্ট্রে মোট রপ্তানির প্রায় ২০ শতাংশ পাঠাই। ভারত এখনো সে বাজারে আমাদের পেছনে আছে, তাই অর্ডার স্থানান্তর নিয়ে অতিরিক্ত আনন্দিত হওয়ার কিছু নেই। চীন থেকে অর্ডার স্থানান্তর আমরা আগেই পাচ্ছি।’ যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বিভাগের টেক্সটাইল এবং অ্যাপারেল কার্যালয় অটেক্সার তথ্যানুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি ৭৩৪ কোটি, চীনের ১ হাজার ৬৫০ কোটি এবং ভারতের ৪৬০ কোটি ডলারের।

স্প্যারো গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শোভন ইসলাম বলেন, ‘প্রতিদ্বন্দ্বীর শুল্ক বৃদ্ধিতে আনন্দিত হওয়ার কারণ নেই। বরং দক্ষতা ও প্রতিযোগিতা বাড়াতে হবে। অর্ডার টেকসইভাবে পেতে হলে ডিজাইন স্টুডিও, উদ্ভাবন, গবেষণা, উপস্থাপনা এসব ক্ষেত্র উন্নত করতে হবে।’ বাংলাদেশ মূলত ব্যাসিক পোশাক রপ্তানি করে এবং ১৮টি পণ্য মোট রপ্তানির ৮০ শতাংশ দখল করে আছে। অন্যদিকে ভারত উচ্চমানের ও নকশাসমৃদ্ধ পণ্য তৈরি করে, যেখানে বাংলাদেশের সক্ষমতা সীমিত। চট্টগ্রামভিত্তিক এশিয়ান অ্যাপারেল লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক খন্দকার বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘অর্ডার রাতারাতি বাংলাদেশে চলে আসবে না। কারখানার সক্ষমতা ও সম্ভাবনা যাচাই করে তবেই ক্রেতারা সিদ্ধান্ত নেবেন।’

বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সিনিয়র সহসভাপতি ইনামুল হক খান জানান, তাঁদের ডিসেম্বর পর্যন্ত অর্ডার রয়েছে। চীনের ক্রেতারা কয়েক মাস ধরে কারখানা খুঁজছেন, এমনকি বন্ধ কারখানাও ভাড়া নিয়েছেন। নীতিনির্ধারকদের উদ্দেশে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো প্রফেসর ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘কিছু অর্ডার আসতে পারে, তবে উৎপাদনশীলতা, বৈচিত্র্য, ব্যবসা পরিচালনার খরচ, দক্ষতা ও সক্ষমতা উন্নয়ন জরুরি।’ রপ্তানিকারকরা কাস্টমস ও বন্দর কার্যক্রমে দীর্ঘসূত্রতা, হয়রানি ও দুর্নীতি প্রধান বাধা হিসেবে উল্লেখ করে দ্রুত সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন। তাঁরা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কাপড় খালাসের ব্যবস্থা, কাস্টমসে মানসিকতার পরিবর্তন এবং সহায়ক নীতিমালা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বাজার হলেও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ অন্যান্য বাজারে প্রতিযোগিতা ধরে রাখার ওপরও জোর দিয়েছেন তাঁরা। ২০২৪ সালে বাংলাদেশ ৩ হাজার ৮৪৮ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে। গত অর্থবছর (২০২৪-২৫) রপ্তানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৯২৪ কোটি ডলার। চলতি অর্থবছরে (২০২৫-২৬) ৪ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ।