
দফায় দফায় ভারী বর্ষণ এবং উজান থেকে নামা পাহাড়ি ঢলে ছয় জেলার নদ - নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে । কয়েকটি স্থানে ইতিমধ্যে বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে পানি । এতে ডুবে গেছে রাস্তাঘাট , ঘরবাড়ি ও ফসলের খেত । বাধ্য হয়ে অনেকে কাঁচা ধান কেটে ঘরে তুলছে । অনেকে পরিবার নিয়ে আশ্রয় নিয়েছে নিরাপদ স্থানে । এর মধ্যে খবর পাওয়া গেছে , কোথাও কোথাও শুকনা খাবার , বিশুদ্ধ পানি , ওষুধের সংকট দেখা দিয়েছে । মিলছে না ত্রাণও । এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে , উত্তর অন্ধ্র প্রদেশ এবং দক্ষিণ ওড়িশা উপকূলের অদূরে উত্তর- পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিম - মধ্য বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপের সৃষ্টি হয়েছে । এটি আরও ঘনীভূত হতে পারে । মৌসুমি বায়ু ভারতের রাজস্থান , হরিয়ানা , উত্তর প্রদেশ , বিহার , পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল হয়ে ভারতের আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে । এর প্রভাবে ভারী বর্ষণের পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর । এ ছাড়া চট্টগ্রাম , কক্সবাজার , মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে ।
অধিদপ্তরের পূর্বাভাস বলছে , আজ বৃহস্পতিবার রংপুর , রাজশাহী , ময়মনসিংহ , চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং ঢাকা , খুলনা ও বরিশাল বিভাগের অনেক জায়গায় বৃষ্টি হতে পারে । রংপুর , রাজশাহী , ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও ভারী বর্ষণ হতে পারে । পদ্মার পানিতে তলিয়ে গেছে বাঘার ফসলি জমি : রাজশাহীর বাঘা উপজেলার চকরাজাপুর ইউনিয়নে পদ্মার আকস্মিক বন্যায় তলিয়ে গেছে শত শত হেক্টর ফসলি জমি । পানিবন্দী হয়ে পড়েছে প্রায় ৬০০ পরিবার । বন্যা ও নদীভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে বহু বাড়িঘর । ফসল হারিয়ে দিশেহারা কৃষক এখন কাঁচা ধান গরুর খাবার হিসেবে কেটে নিচ্ছেন ।
সরেজমিন দেখা যায় , চকরাজাপুর ইউনিয়নের মাঠগুলোয় এখন শুধু পানি আর পানি । নিচ পলাশী ফতেপুর মাঠে সবচেয়ে বেশি ফসলহানি হয়েছে । স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে , ইউনিয়নের পলাশী ফতেপুর , কালিদাসখালী , আতারপাড়া , চৌমাদিয়া এবং দিয়াড় কাদিরপুরের প্রায় ৬০০ বাড়িঘর পানিতে ডুবে গেছে । চকরাজাপুর উচ্চবিদ্যালয়সহ প্রায় ৫০ টি পরিবার নদীভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে ।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ( ইউএনও ) শাম্মী আক্তার বলেন , প্রাথমিকভাবে ২২০ টি পরিবারের পানিবন্দী হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে । শুকনা খাবারের সংকট , মিলছে না ত্রাণও : চাঁপাইনবাবগঞ্জের দুই উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের ১১ হাজার পরিবার অতিবৃষ্টি আর উজানের ঢলে বেশ কিছুদিন ধরে পানিবন্দী হয়ে রয়েছে । এসব এলাকায় দেখা দিয়েছে শুকনা খাবার , বিশুদ্ধ পানি , ওষুধের সংকট । কিন্তু চাহিদার তুলনায় তেমন কিছুই পাচ্ছে না বন্যাকবলিত এসব এলাকার বাসিন্দারা । তবে প্রশাসন বলছে , বরাদ্দ কম । তাই যতটা সম্ভব বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে । শিবগঞ্জ উপজেলার পাকা ইউনিয়নের কানছিড়া জ্যাটপাড়া এলাকার বাসিন্দা রুলিয়া বেগম বলেন , ‘ হামার বাড়িতে এক সপ্তাহ থেকে পানি ঢুকে গেছে । খাবারদাবার কিছুই নাই । পরের কাছে চেয়েচিন্তে খাচ্ছি । এখন পর্যন্ত কেহু হামাকে পর খাবার দিতে আসেনি । হামাদের এখানকার কেহু খাবার পায়নি । ” লালমনিরহাটে পানিবন্দী ২০ হাজার পরিবার : টানা তিন দিনের ভারী বৃষ্টি আর উজানের পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে । টানা দুই দিন বিপৎসীমার ওপরে তিস্তা নদীর পানিপ্রবাহে চরম অবনতি ঘটেছে লালমনিরহাটের বন্যার পরিস্থিতি । নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়ে প্রায় ২০ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে ।
গতকাল বেলা ৩ টায় লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজ ডালিয়া পয়েন্টে পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ১৯ মিটার ; যা বিপৎসীমার ৪ সেমি ওপরে । ঘরে পানি , তলিয়ে গেছে ফসলের খেত : রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে তিস্তাবেষ্টিত চরাঞ্চলের নিম্নাঞ্চলের বাড়িঘরে পানি ঢুকে পড়ায় পানিবন্দী হয়ে পড়েছে কয়েক শ পরিবার । তলিয়ে গেছে আমন ধান ও সবজিখেত । উপজেলার . . লক্ষ্মীটারী , কোলকোন্দ , নোহালী , গজঘণ্টা ও মর্নেয়া ইউনিয়নে তিস্তা নদীর নিম্নাঞ্চলের পানিবন্দী হয়ে পড়েছে মানুষজন । কুড়িগ্রামে বাড়ছে : কুড়িগ্রামে তিস্তা , ধরলা , দুধকুমার ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে । এতে অববাহিকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে বন্যা পরিস্থিতির আশঙ্কা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড ( পাউবো ) ।
গতকাল বন্যার পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের বরাতে এমন তথ্য জানিয়েছে কুড়িগ্রাম পাউবো । ভাঙন - আতঙ্কে নির্ঘুম রাতঃ দফায় দফায় বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে গাইবান্ধার সবগুলো নদ - নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে । তবে নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে অবস্থান করছে । এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় বৃষ্টি হয়েছে ৪০ মিলিমিটার । নদ - নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় তীরের মানুষগুলো ভাঙনের আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটছে । দৌলতপুরে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত : কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে বন্যা পরিস্থিতি দিন দিন অবনতির দিকে যাচ্ছে । গত ২৪ ঘণ্টায় পদ্মা নদীর পানি আরও ১০ সেমি বেড়েছে । এতে চিলমারী ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের ছয়টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে । এ ছাড়া ইউনিয়নের মোট ১৯ টি গ্রাম পানিবন্দী হয়ে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছে । রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের ১৬ টি গ্রামে আরও প্রায় ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে আছে । [ প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন সংশ্লিষ্ট এলাকায় আজকের পত্রিকার প্রতিনিধিরা ]