Image description
৫০ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়

দেশের ৫০ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক আছেন ১৬ হাজার ৮০৫ জন। তাদের মধ্যে তিন হাজার ৫৮ জন দুই ধরনের শিক্ষা ছুটিতে আছেন; যা মোট শিক্ষকের ১৮ দশমিক ১৯ শতাংশ। অন্যদিকে এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের অনেকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন চাকরিও করেন। কেউ কেউ বেসরকারি বিভিন্ন প্রজেক্ট ও বিদেশি সংস্থায় পরামর্শক হিসাবে কাজ করেন। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা এবং সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এই যখন অবস্থা, তার সঙ্গে আছে শিক্ষক সংকটও। বিশেষ করে ঢাকার বাইরে অপেক্ষাকৃত নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ে সিনিয়র শিক্ষকের অভাব। বিজ্ঞপ্তি দিয়েও অনেক বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপক পাচ্ছে না। আবার কোথাও অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে নিয়োগ করা হচ্ছে না শিক্ষক। এমন পরিস্থিতিতে জুনিয়র শিক্ষক কিংবা যা আছে তা দিয়েই চলছে সেখানকার লেখাপড়া। এভাবে ছুটির কারণে পদশূন্যতা আর প্রতিষ্ঠানের বাইরে বিভিন্ন কাজে শিক্ষকরা জড়িয়ে পড়ায় গুণগত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। ফলে সার্বিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠদান আর গবেষণা কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এসএমএ ফায়েজ যুগান্তরকে বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকরা শিক্ষা ছুটি নিয়ে বিদেশে যাচ্ছেন উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনের জন্য। এতে কোনো সমস্যা নেই। তবে তারা যদি ডিগ্রি অর্জন করে না ফেরেন, সেক্ষেত্রে ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার। আর খণ্ডকালীন শিক্ষকতার বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নিজস্ব আইন অনুযায়ী হতে হবে। এক্ষেত্রে যদি অনিয়ম হয়, তার যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষক বিদেশে পড়াশোনা শেষ করে সেখানে চাকরিতে ঢুকে যান। সেটাও আমাদের জন্য ভালো দিক। তার বিপরীতে আমাদের আরও মেধাবী গ্র্যাজুয়েটদের নিয়োগ দেওয়ার সুযোগ তৈরি হয়।

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের কাছে সম্প্রতি পেশ করা ইউজিসির সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৫০ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন হাজার ৫৮ শিক্ষক দুই ধরনের ছুটিতে ছিলেন। এটা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ২০২৩ সালের কার্যক্রমের ওপর পরিচালিত সমীক্ষার ফল। এর আগের বছর এসব ছুটিতে ছিলেন দুই হাজার ৬১২ শিক্ষক। অর্থাৎ ছুটিতে যাওয়া শিক্ষকের সংখ্যা বেড়েছে। ২০২১ সালে শিক্ষা ছুটিতে ছিল তিন হাজার ৫২৮ জন শিক্ষক, ২০১৯ সালে ছুটিতে যাওয়ার সংখ্যা ছিল দুই হাজার ২৬৪ জন আর ২০১৮ সালে দুই হাজার ১৩৩ জন।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ছুটিতে যাওয়া শিক্ষকদের মধ্যে দুই হাজার ৬৯৯ জনই আছেন শিক্ষা ছুটিতে। ২০২২ সালে এই সংখ্যা ছিল দুই হাজার ৪৪১ জন। এছাড়া ২০২২ প্রেষণ ও লিয়েন নিয়ে অন্য প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন ১৭১ জন। ২০২৩ সালে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৫৯ জন। অন্যদিকে ২০২২ সালে ছুটি শেষ হওয়ার পরও অননুমোদিতভাবে কর্মস্থলে অনুপস্থিত ছিলেন ৪৯ জন। ২০২৩ সালে এই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭০ জনে। আর ২০২২ সালে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে খণ্ডকালীন ও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে চাকরি করেছেন এক হাজার ৮৫৪ জন। ২০২৩ সালে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৬৯ জন। ২০২২ সালে বিনা বেতনে ছিলেন ৯২ জন। ২০২৩ সালে অবশ্য এ সংখ্যা কমে দাঁড়ায় ৭৯ জনে। আর ২০২৩ সালে কর্তব্যরত শিক্ষক ছিলেন ১১ হাজার ৭৬৬ জন।

খণ্ডকালীন চাকরিতে সবচেয়ে এগিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠানটির এক হাজার ৫৭৯ শিক্ষকের মধ্যে ২০২৩ সালে ৫৯১ জনই খণ্ডকালীন চাকরি করেছেন। এই ছুটি নেওয়ার ক্ষেত্রে দ্বিতীয় স্থানে আছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, এটা ৪৯১ জন। আর তৃতীয় স্থানে আছে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস। সেখানকার ২৮২ জন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন। শিক্ষা ছুটিতে সবচেয়ে বেশি আছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা, ৩৬৫ জন।

দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বুয়েট ও তৃতীয় স্থানে আছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। এটা যথাক্রমে ১৭২ ও ১৩৭ জন। প্রেষণ বা লিয়েনে অন্যত্র চাকরি করছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪৮ জন। এটা ৫০ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সর্বোচ্চ। দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে আছে যথাক্রমে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ৮৮ জন; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৭ জন আর খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯ জন। বিনা বেতনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৩ জন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২ জন ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ১০ জন আছেন।

অননুমোদিত ছুটিতে শীর্ষে আছে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠানটির ২০ জন এ ধরনের ছুটিতে আছেন। দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে আছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। এগুলোয় যথাক্রমে ১৩ ও ৮ জন আছেন।

সংশ্লিষ্টরা জানান, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে খণ্ডকালীন চাকরি বা পরামর্শকসহ বিভিন্ন পদে বেশি কদর বড় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের। যে কারণে তাদের অনেকের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ছুট মনোভাবও বেশি। এছাড়া পিএইচডি করতে গিয়ে অবৈধভাবে বিদেশে অবস্থান করা শিক্ষকের সংখ্যাও কম নয়। যেহেতু এ ধরনের ছুটির ক্ষেত্রে উদারতা আছে, তাই অনেকেই সুযোগটি নিয়ে থাকেন।

ইউজিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন অধ্যাপনা করছেন চার হাজার ৩১০ জন।

সংশ্লিষ্টরা জানান, খণ্ডকালীন উল্লিখিত শিক্ষকের বড় একটি অংশ কোনো না কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ণকালীন শিক্ষক। তাদের অনেকের বিরুদ্ধে নিজের বিভাগে কোনোরকমে ক্লাস নিয়ে কিংবা ফাঁকি দিয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার অভিযোগ রয়েছে।