Image description
ট্রাম্প দম্পতির পাশে মেয়েকে নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা

নিউইয়র্কে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের হোটেলের স্যুটে রীতিমতো হাট বসেছিল বিশ্বনেতাদের। তাঁদের অনেকেই এসেছিলেন দলবেঁধে। এ সময় তিনি বিশ্বনেতাদের জানান, ‘আমাদের তরুণ প্রজন্মের স্বপ্ন পূরণ করতে হবে, তারা একটি নতুন বাংলাদেশ দেখতে চায়।’ তাই ফেব্রুয়ারির সাধারণ নির্বাচনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সহায়তার আহ্বান জানান তিনি। বিশ্বনেতারা সবাই ড. ইউনূসের প্রতি তাঁদের পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করেন। ব্যক্তিগতভাবেও তাঁরা নিজেদের অভিজ্ঞতা ও সহায়তা প্রদানের প্রতিশ্রুতি দেন। জবাবে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘আপনাদের এভাবে একসঙ্গে এসে আমাদের প্রতি সমর্থন জানানো সত্যিই অবিশ্বাস্য। আমি ভীষণভাবে মুগ্ধ।’ প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এসব তথ্য জানায়।

নিউইয়র্ক সময় শুক্রবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে লাটভিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট ভাইরা ভিক-ফ্রেইবার্গার নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধিদল প্রফেসর ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উচ্চপর্যায়ের এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন স্লোভেনিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট বরুত পাহোর, সার্বিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট বোরিস তাদিচ, লাটভিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট এগিলস লেভিটস, ইউরোপীয় কাউন্সিলের সাবেক সভাপতি ও বেলজিয়ামের সাবেক প্রধানমন্ত্রী চার্লস মিশেল, গ্রিসের সাবেক প্রধানমন্ত্রী জর্জ পাপান্দ্রেউ, বুলগেরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট রোজেন প্লেভনেলিভ ও পেতার স্তোয়ানোভ, ক্রোয়েশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট ইভো জোসিপোভিচ, বসনিয়া-হার্জেগোভিনার সাবেক প্রেসিডেন্ট ম্লাদেন ইভানিচ এবং মরিশাসের সাবেক প্রেসিডেন্ট আমিনা গরিব-ফাকিম। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন রবার্ট এফ কেনেডি হিউম্যান রাইটসের সভাপতি কেরি কেনেডি, কমনওয়েলথের সাবেক মহাসচিব, জর্জিয়ার সাবেক উপপ্রধানমন্ত্রী, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের চারজন সাবেক সভাপতি, বেশ কয়েকজন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী, বিশ্বব্যাংকের সাবেক সহসভাপতি ও এনজিআইসির সহসভাপতি ইসমাইল সেরাগেলদিন, আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (ওঅঊঅ) ও জর্জটাউন ইনস্টিটিউট ফর উইমেন, পিস অ্যান্ড সিকিউরিটির ঊর্ধ্বতন প্রতিনিধি। বিশ্বনেতারা ড. ইউনূসের দারিদ্র্যমোচন ও সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠায় আজীবন অবদানের প্রশংসা করেন। তাঁদের একজন বলেন, ‘আমরা এখানে আপনাকে ও বাংলাদেশের জনগণকে সমর্থন করতে এসেছি। আমরা পুরোপুরি আপনার পাশে আছি।’ তাঁরা স্বীকার করেন, প্রফেসর ইউনূসের নেতৃত্বে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে অগ্রগতি হয়েছে। তবে ১৬ বছরের দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা ও শোষণের পর দেশটি এখন বড় চ্যালেঞ্জের মুখে।

বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বিশ্বনেতাদের জানান, ‘বাংলাদেশ টানা ১৫ বছর ধরে ৯ মাত্রার ভূমিকম্পে বিপর্যস্ত ছিল। জনগণের প্রত্যাশা সামলানো একটি বড় চ্যালেঞ্জ। মানুষ তাৎক্ষণিক অলৌকিক পরিবর্তন আশা করছে, অথচ আমাদের সম্পদ সীমিত। তবু আমাদের তরুণ প্রজন্মের স্বপ্ন পূরণ করতে হবে, তারা একটি নতুন বাংলাদেশ দেখতে চায়।’ এ সময় বিশ্বনেতারা প্রতিশ্রুতি দেন তাঁরা দেশ পুনর্গঠন ও অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকারকে তাঁদের অভিজ্ঞতা দিয়ে সহযোগিতা করবেন। একজন নেতা বলেন, ‘আমরা আপনার সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত। যে কোনো দিকনির্দেশনা বা সহায়তা লাগলে জানাবেন। অনেক কাজ বাকি আছে।’

সদ্য বাংলাদেশ সফর করা কেরি কেনেডি বলেন, ‘মানবাধিকার অগ্রগতিতে আপনারা যে সাফল্য অর্জন করেছেন, তা সত্যিই অসাধারণ।’ র্জটাউন ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক মেলান ভারভিয়ার ঘোষণা করেন, শিগগিরই তাঁদের প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের জুলাই বিপ্লবের প্রতি আনুষ্ঠানিক সমর্থন জানাবে। এনজিআইসির সহসভাপতি ইসমাইল সেরাগেলদিন বলেন, ‘আপনাদের যে কোনো প্রয়োজনে আমরা আছি।’

ট্রাম্প দম্পতির পাশে মেয়েকে নিয়ে ড. ইউনূস : জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে রয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গত মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্প আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেন তিনি। হাইপ্রোফাইল এই রিসেপশনে ট্রাম্প দম্পতির সঙ্গে তোলা ড. ইউনূসের একটি ছবি গতকাল ভোরে প্রকাশ করা হয়েছে। ছবিতে ড. ইউনূসের পাশে তার কন্যা দিনা ইউনূসকেও দেখা গেছে।

প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে প্রকাশ করা ছবিতে দেখা যায়, হাস্যোজ্জ্বল ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক পাশে রয়েছেন তার স্ত্রী ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্প, অন্য পাশে মুহাম্মদ ইউনূস। প্রধান উপদেষ্টার পাশে রয়েছেন তার মেয়ে দিনা ইউনূস। তিনি শাড়ি পরে হাস্যোজ্জ্বল মুখে দাঁড়িয়ে আছেন। মুহূর্তে ছবিটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়।

অনুষ্ঠানের এতদিন পর প্রকাশ করায় ছবিটি নিয়ে ধূম্রজাল তৈরি হয়েছে। অনেকেই এটাকে ফটোশপের কারসাজি বলে ছবিটির নিচে মন্তব্য করেছেন। কেউ কেউ একই ভঙ্গিতে অন্য দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে ট্রাম্প দম্পতির ছবি শেয়ার করে ড. ইউনূসের ছবিটি ভুয়া বলে দাবি করেন। তবে ছবিটি ভুয়া নয় বলে বিভিন্ন মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

তথ্য অধিদপ্তর থেকে ছবিটি গণমাধ্যমে পাঠানো হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রতিনিধিও ছবিটির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, অনুষ্ঠানের ফাঁকে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে ফটোসেশন করেন ট্রাম্প দম্পতি। এ সময় ড. ইউনূস ও দিনা ইউনূসের সঙ্গেও তারা ফটোসেশনে অংশ নেন।