
কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে আশ্রয়শিবিরের বাইরে শত শত রোহিঙ্গা পরিবার ভাড়া বাসায় বসবাস করছে। স্থানীয় প্রভাবশালী ও জমির মালিকরা অর্থ লাভের আশায় ঘর নির্মাণ করে এসব রোহিঙ্গাকে ভাড়া দিচ্ছেন। এতে নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে। স্থানীয় সূত্র বলছে, ক্যাম্পের বাইরে থাকা রোহিঙ্গাদের অনেকেই মাদক, অস্ত্র ও অপহরণসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, রোহিঙ্গারা ক্যাম্প ছাড়া অন্য কোথাও থাকার অনুমতি পায়নি। কেউ অবৈধভাবে ভাড়া থাকলে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবস্থা নিতে হবে-এ নির্দেশ আগে থেকেই দেওয়া আছে।
তথ্য অনুযায়ী, উখিয়ার বালুখালী মরাগাছতলা এলাকায় অর্ধশতাধিক বাড়িতে রোহিঙ্গারা ভাড়া থাকে। সেখানে মনিয়ার বাড়িতে ১৪টি, আনোয়ারের বসতভিটায় ২২টি, ছগির আহমদের বাড়িতে ১২টি এবং আবদুর রহমান ও লুৎফুর নাহারের বাড়িতে যথাক্রমে ২০ ও ৪৫টি পরিবার বসবাস করছে। প্রতিটি পরিবার মাসিক গড়ে ৩ হাজার টাকা ভাড়া দিচ্ছে। এ ছাড়া জামানত বাবদ নেওয়া হচ্ছে ৪৫-৫০ হাজার টাকা করে। ফরিদ আলমের বসতভিটায় ৩৪টি, আবদুল করিম প্রকাশ বিডিআরের বাড়িতে ১৬টি, জুনির বাড়িতে ২টি এবং ছৈয়দ আলম ও সামশুল আলমের বাড়িতে ১টি করে পরিবার বসবাস করছে। এ ছাড়া নুরুল আমিন, রেহেনা আক্তার, বেলালসহ আরও কয়েকজন স্থানীয়ের বাড়িতেও রোহিঙ্গাদের উপস্থিতি পাওয়া গেছে।
পালংখালী ইউনিয়নের মোছারখোলা, তেলখোলা, প্রেমবাজার, গর্জনখোলা ও বাইলাখালীসহ বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায় দেখা গেছে- কিছু স্থানীয় ও চাকমা পরিবার রোহিঙ্গাদের কাছে জায়গা বিক্রি করে বা ভাড়া দিয়ে বসবাসের সুযোগ করে দিয়েছে। তেলখোলা বাজার থেকে পশ্চিমে বাইলাখালী এলাকায় অন্তত ১৫টি রোহিঙ্গা পরিবার নিজস্ব ঘরও নির্মাণ করেছে।
জামতলী, থাইংখালী ও পশ্চিম বালুখালী এলাকায়ও রোহিঙ্গাদের ভাড়া থাকার প্রমাণ মিলেছে। স্থানীয় সূত্রের দাবি, পশ্চিম বালুখালীর ‘আর্মি ফারুকের’ বাড়িতে থাকা অন্তত ১০ জন রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী সংগঠন আরসা ও আল ইয়াকিনের সক্রিয় সদস্য। এ ছাড়া পালংখালী এবি মডেল একাডেমির পশ্চিমে এক রোহিঙ্গা সরাসরি জমি কিনে ঘর নির্মাণ করেছে, যেখানে নিয়মিত রোহিঙ্গাদের যাতায়াত রয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অগোচরে এসব বসতি গড়ে উঠেছে। ফলে এলাকায় মাদক, অস্ত্র ও অপহরণ চক্র আরও সক্রিয় হয়ে উঠছে। সচেতন মহলের মতে, দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘রোহিঙ্গারা ক্যাম্পের বাইরে বসবাস করলে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটবে। তাদের আশ্রয় দেওয়া বন্ধ করতে হবে।’ পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘ক্যাম্পের বাইরে রোহিঙ্গাদের বসবাস আমাদের নিরাপত্তার জন্য হুমকি। আমরা কয়েকজনকে চিহ্নিত করেছি। প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শক্ত পদক্ষেপ ছাড়া এ সমস্যা সমাধান সম্ভব নয়।’ উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামরুল হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘ক্যাম্পের বাইরে রোহিঙ্গাদের বসবাসের অভিযোগ তদন্তাধীন। প্রমাণ মিললে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’