
বরিশালের বানারীপাড়ার সন্ধ্যা নদী। কেউ বলেন ২০০, কেউ বলেন ২৫০ বছর আগে নদীর পূর্ব তীরে চালের ও পশ্চিম তীরে নৌকায় করে ধান বিক্রি শুরু হয়। যা ভাসমান ধান ও চালের হাট হিসেবে পরিচিত। এ হাটের অস্তিত্ব এখনো রয়েছে। তবে আগের মতো রমরমা অবস্থা নেই। সড়ক যোগাযোগব্যবস্থা উন্নত ও রাইচ মিলের কারণে এখন হাটে ক্রেতা যেমন কমেছে, তেমনি কমছে বিক্রেতার সংখ্যাও।
বানারীপাড়ার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন নতুন মুখের সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন মানিক বলেন, সঠিক ইতিহাস কেউ বলতে পারবে না। ব্রিটিশ আমল থেকে নদীর দুই তীরে ধান ও চালের হাট বসছে। আগে সপ্তাহে চার দিন ছিল। এখন শনি ও মঙ্গলবার দুই দিন হাট বসে। বানারীপাড়ার মলঙ্গা জাতের বালাম চালের জন্য এ হাট বিখ্যাত ছিল। এখন মলঙ্গা বালাম জাতের ধানও আবাদ হয় না। সেই চালও নেই। তবে হাটটি এখনো রয়েছে। আগের মতো জমজমাট অবস্থায় নেই। এ হাটের ধান-চাল ক্রয়-বিক্রয়ে কাজে জড়িতরা কুটিয়াল হিসেবে পরিচিত। তাদের জীবিকা হাটের ওপর নির্ভরশীল। হাটটি রক্ষায় বিভিন্ন পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কাজ হয়নি। এখন আবার নতুন করে উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।
মো. ফারুক হোসেন নামে একজন বলেন, ৩৫ বছর ধরে ধান কিনে চাল করে বিক্রি করি। খুব ভোরে চাল বিক্রি শুরু হয়। দুপুর ১২টার মধ্যে চাল বিক্রি শেষ হয়ে যায়। এরপর থেকে শুরু হয় পশ্চিম তীরে ধানের হাট। সেখান থেকে ধান কিনে বাড়ি নিয়ে যান। দুই দিন ধান পানিতে ভিজিয়ে রাখা হয়। এরপর চুলায় জাল দিয়ে সিদ্ধ করা হয়। রোদে শুকানোর পর মিলে গিয়ে চাল করে বাজারে বিক্রি করা হয়। এ হাটের ক্রেতা কাওছার হোসেন বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে রাইস মিল হওয়ার কারণে এ হাটে এখন আর তেমন ক্রেতা-বিক্রেতা নেই। এ হাটে হাতে তৈরি মোটা আমন, কাজলা ও ইরিসহ চার ধরনের চাল পাওয়া যায়। এ চাল পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ। স্বাদও বেশি। চিকিৎসকরা চালের ভাত খাওয়ার পরামর্শ দেন।
বিক্রেতা এনায়েত হোসেন বলেন, আগে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ধান এখানে বিক্রি হতো। এখন বরগুনা, পটুয়াখালী, কুয়াকাটা, পিরোজপুরের মঠবাড়িয়াসহ বিভাগের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে ধান এনে বিক্রি করা হয়। মলঙ্গা বালাম চাল কিনতে ঢাকা, রংপুর, দিনাজপুর, খলুনা, ফরিদপুরসহ বিভিন্ন জেলা-উপজেলার পাইকাররা আসতেন। এখন শুধু আশপাশের জেলা-উপজেলা থেকে পাইকাররা আসেন। বর্তমানে প্রতি হাটে ৫ হাজার মণ চাল ও ৮ হাজার মণ ধান বেচাবিক্রি হয়। দক্ষিণাঞ্চলের এতিহ্যের একটি অংশ বানারীপাড়ার ভাসমান ধান-চালের হাট। আগে হাটে হাজারো নৌকায় ধান ও চাল বিক্রি হতো। এখন ৩০-৪০টি নৌকায় বেচাবিক্রি হয়। আগে শনি, রবি, মঙ্গল ও বুধবার হাট বসত। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিক্রি হতো ধান-চাল। রাইচ মিলের দাপটে সংকুচিত হয়ে পড়া হাটটি রক্ষায় প্রশাসনের এগিয়ে আসা উচিত বলে জানিয়েছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা।