Image description
নীলক্ষেতে অরক্ষিত অবস্থায় ব্যালট ছাপানোর অভিযোগ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদের ব্যালট পেপার নীলক্ষেতে অরক্ষিত অবস্থায় ছাপানোর অভিযোগ উঠেছে। এরপর ডাকসু নির্বাচন নিয়ে বেশ তোলপাড় চলছে। ডাকসু নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ এনে বৃহস্পতিবার রাতে ক্যাম্পাসে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে বিক্ষোভ করেন এক ডজন শিক্ষার্থী, তাদের অনেকেই জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। এছাড়া ঘটনা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পক্ষে-বিপক্ষে নানা ধরনের বিতর্কও অব্যাহত আছে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে অভিযোগের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অবস্থান স্পষ্ট করতে বলেছে অধিকাংশ প্রার্থী। অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হলে নির্বাচনের ফলাফল স্থগিত করে পুনরায় একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের আয়োজন করার দাবি জানিয়েছে বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল। আর এ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে ডাকসু নির্বাচন কমিশন।

প্রসঙ্গত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের ব্যালট পেপার নীলক্ষেতে অরক্ষিত অবস্থায় ছাপা হয়েছে-৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর থেকেই এমন অভিযোগ করে আসছিলেন প্রার্থীদের কেউ কেউ। বৃহস্পতিবার একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেল এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রচার করে। সেখানে দাবি করা হয়, নীলক্ষেত থেকে কিছু ব্যালট ছাপা হয়েছে। এর আগে ২২ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিনে সংবাদ সম্মেলন করে নীলক্ষেতের একটি ছাপাখানায় বিপুলসংখ্যক ব্যালট পেপার অরক্ষিত অবস্থায় পাওয়াসহ ১১টি অভিযোগ তুলে ধরেন ডাকসু নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা ছাত্রদলের প্যানেলের প্রার্থীরা। আর টিএসসিসহ বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের নির্দিষ্ট প্যানেলের পক্ষে ভোট দেওয়া ব্যালট পেপার সরবরাহ করাসহ ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন নিয়ে ১২টি অনিয়ম ও অসংগতির অভিযোগ তুলেছে প্রতিরোধ পর্ষদ প্যানেল। এছাড়া বিভিন্ন সময় স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য প্যানেলের সহসভাপতি প্রার্থী উমামা ফাতেমা ও বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদের সহসভাপতি প্রার্থী আবদুল কাদেরও এই নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

জানতে চাইলে ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন শনিবার মোবাইল ফোনে যুগান্তরকে বলেন, ডাকসু নির্বাচনে কোনো অনিয়ম ঘটেনি কিংবা নিয়মের ব্যত্যয় ঘটেনি। নির্বাচনের পর থেকেই প্রার্থীরা আমাদের কাছে নানা অভিযোগ নিয়ে এসেছে আমরা সেগুলো আমলে নিয়ে আমাদের অবস্থান পরিষ্কার করেছি।

নীলক্ষেতে ব্যালট পেপার ছাপানোর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমাদের তদন্ত চলছে, কাজ প্রায় শেষ। দ্রুতই সংবাদ সম্মেলন করে এ বিষয়ে প্রতিবেদন তুলে ধরা হবে।

ব্যালট নিয়ে বিতর্ক : ডাকসু নির্বাচনে ব্যবহৃত ব্যালট পেপার নীলক্ষেতে অরক্ষিতভাবে ছাপানোর অভিযোগ সবার আগে তোলেন স্বতন্ত্র সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদপ্রার্থী আরাফাত চৌধুরী। নির্বাচনের আট দিন পর ১৭ সেপ্টেম্বর ফেসবুকে এ অভিযোগ তোলেন। তিনি দাবি করেন-নীলক্ষেতের একটি প্রিন্টিং প্রেসের দোকানে অরক্ষিতভাবে ব্যালট পেপারগুলো ছাপানো হচ্ছিল। দাবির পক্ষে তিনি একটি ছবি ওই পোস্টে যুক্ত করেন। ছবিটি ডাকসু নির্বাচনের আগে ৭ সেপ্টেম্বর রাত ১২টা ৫৭ মিনিটে তোলা হয়েছে বলে দাবি আরাফাতের। পরে নীলক্ষেতে ব্যালট ছাপানো নিয়ে বৃহস্পতিবার একটি বেসরকারি টেভি চ্যানেলের প্রতিবেদনে বলা হয়, নীলক্ষেতের গাউসুল আজম মার্কেটের জালাল প্রিন্টিং প্রেসে ডাকসু নির্বাচনের ৯৬ হাজার ব্যালট ছাপানো হয়েছে। একই মার্কেটের মক্কা পেপার কাটিং হাউজ নামের আরেকটি দোকানে নির্ধারিত মাপে কাটা হয়েছে ৮৮ হাজার ব্যালট। প্রতিবেদনে ৮ হাজার ব্যালটের হিসাবের গরমিলের কথা উল্লেখ করা হয়।

টিভি চ্যানেলের ওই প্রতিবেদনে জালাল প্রিন্টিং প্রেসের মালিক মো. জালালের ভিডিও সাক্ষাৎকার যুক্ত করা হয়। সেখানে জালালকে বলতে শোনা যায়, ফেরদৌস ওয়াহিদ নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে তিনি ব্যালট ছাপানোর কাজ পান। ৯৬ হাজারের মতো ব্যালট ছেপেছেন। তিন দিনে এই কাজ শেষ করেছেন।

তবে ওই প্রতিবেদন প্রচারের পর গণমাধ্যমকে জালাল প্রেসের মালিক জালাল জানিয়েছেন, ৯৬ হাজার নয় বরং ৮৬ হাজারের মতো তিনি ব্যালট পেপার ছাপিয়েছেন। সেটি কিছু কমবেশি হতে পারে। তবে কোনোভাবেই সেটি ৮৮ হাজারের বেশি নয়। কারণ তাকে যে পরিমাণ কাগজ দেওয়া হয়েছে সেটি দিয়ে এর বেশি ব্যালট ছাপানো সম্ভব নয়। এর মধ্যে আবার কিছু ওয়েস্টেজও থাকবে।

জালাল বলেন, কত ব্যালট হলো সেটা আমরা গুনে দেখি না। আমরা দেখি আমাদের কত রিম কাগজ দেওয়া হয়েছে। যদি কোনো কাগজ নষ্ট না হয় তাহলে প্রতিরিম কাগজে ৪০০০ ব্যালট হয়।

৯৬ হাজার ব্যালট ছাপানোর কথা কেন তিনি বলেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপনি ভিডিওটা দেখলে দেখবেন ওই রিপোর্টার একটা হিসাব বলে আমাকে জিজ্ঞেস করেছে ৯৬ হাজার ব্যালট? তখন আমি বলেছি হ্যাঁ, ওরকমই হবে। এটা আমি নিজে হিসাব করে বলিনি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ব্যালট ছাপানোর কাগজ প্রথমে আসে মক্কা কাটিং হাউজে, জালাল প্রেসে নয়। বাদশা নামের এক কাগজ ব্যবসায়ী থেকে ফেরদৌস ওয়াহিদ নামে এক সাপ্লায়ার ২২ রিম কাগজ সরবরাহ করেন মক্কা কাটিং হাউজে। প্রতিরিমে থাকে ৫০০ কাগজ। এসব কাগজকে ৪ ভাগ করে পাঠানো হয় জালাল প্রেসে, যেখানে ব্যালট ছাপানো হয়। ছাপানো ব্যালটগুলো আবার ফেরত আসে মক্কা কাটিং হাউজে। সেখানে প্রতিটি কাগজকে দুই ভাগে কেটে প্রতিটি ব্যালট আলাদা করা হয়। এরপর সাপ্লায়ার ফেরদৌস ওয়াহিদের কাছে ব্যালটগুলো হস্তান্তর করা হয়।

মক্কা কাটিং হাউজের মালিক আলিফ গণমাধ্যমকে বলেন, আমাদের ২২ রিম কাগজ দেওয়া হয়েছে বাদশার দোকান থেকে। ২২ রিম কাগজে ৮৮ হাজার ব্যালট হয়। এর মধ্যে কিছু ওয়েস্টেজ হবে। এই ওয়েস্টেজ হয়ে ব্যালট যেন কমে না যায় সেজন্য কিছু কাগজও বেশি দেওয়া হয়। এরপর ওয়েস্টেজ হয়ে যা অবশিষ্ট থাকে তা। আলিফ বলেন, এখন কত ব্যালট থাকবে সেটা আমিও বলতে পারব না, জালালও বলতে পারবে না। বলতে পারবেন যিনি সাপ্লায়ার তিনি। কারণ সে যার কাছ থেকে অর্ডার নিয়েছে তাকে গুনে গুনে বুঝিয়ে দেবে। তাই গোনার সময় যেন কম না হয় সেজন্য অতিরিক্ত কাগজ দিয়ে অতিরিক্ত অর্ডার দেওয়া হয়। কারণ সব তো আর অ্যাকুরেট হবে না। কিছু তো নষ্ট হবেই।

নীলক্ষেতের মক্কা কাটিং হাউজ ও জালাল প্রেসে যিনি ডাকসুর কিছু ব্যালট পেপারের কাজ করিয়েছেন তার নাম ফেরদৌস ওয়াহিদ। ওই ফেরদৌস ওয়াহিদ গণমাধ্যমকে বলেছেন, জালাল প্রেস শুধু কিছু ব্যালটের প্রাথমিক প্রিন্টিংয়ের কাজ করেছে। জালাল যেগুলো ছাপিয়েছে সেগুলো কোনো মেশিন রিড করবে না। ব্যালটসদৃশ এই প্রিন্টিং করা পেপারগুলো নিয়ে আরও কয়েক ধাপ পার করে তারপর এগুলোকে ব্যবহার উপযোগী ব্যালট করা হয়েছে। জালাল প্রেস যেগুলো ছাপিয়েছে সেগুলো তো মেশিনে রিড করবে না। এগুলোকে প্রি-স্ক্যান করার পর তারপর রিড করবে।

ওয়াহিদ আরও বলেন, যে অবস্থায় ছেলেরা ব্যালট দেখেছে এসব শুধু ব্যালটের কাগজ। এগুলো মেশিনে রিড করবে না। এগুলোকে ওই দোকান থেকে নিয়ে গিয়ে কয়েক ধাপ পার করে প্রি-স্ক্যান করে তারপর এগুলোকে ব্যবহার উপযোগী ব্যালট করা হয়েছে। এসব কাজ আমরা আমাদের অফিসে নিয়ে গিয়ে করেছি। আমাদের অফিসে নিয়ে গিয়ে প্রি-স্ক্যান করার পরই আমরা এসব ব্যালট প্যাকেট করেছি।

অনিয়ম নিয়ে যা বলছেন প্রার্থীরা : ছাত্রদল সমর্থিত জিএস প্রার্থী শেখ তানভীর বারি হামিম যুগান্তরকে বলেন, ডাকসু নিয়ে যেসব অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত সেগুলোর সুস্পষ্ট বক্তব্য দেওয়া। ডাকসু নির্বাচনের সময় আমাদের প্রার্থীদের মধ্যে এক ধরনের সুস্থ প্রতিযোগিতা চলছিল কিন্তু এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কারণে তা প্রতিহিংসায় রূপ নিচ্ছে। তাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রতিটি অভিযোগের বিষয়ে তাদের অবস্থান ব্যাখ্যা দিতে হবে।

ব্যালট পেপার ছাপানো ও গণনার মতো স্পর্শকাতর প্রক্রিয়াটির ক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠলে সার্বিক নির্বাচনকে ঘিরে প্রশাসনের পেশাদারত্বের ব্যাপারে সন্দেহ তৈরির সুযোগ থাকে বলে মনে করেন স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য প্যানেলের ভিপি প্রার্থী উমামা ফাতেমা। তিনি বলেন, নির্বাচনসংক্রান্ত সন্দেহগুলোর অবসান ঘটানো উচিত।

ডাকসুর আরেক ভিপি প্রার্থী আবদুল কাদের যুগান্তরকে বলেন, নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যেক প্রার্থী এবং সাধারণ শিক্ষার্থীরা মেনে নিয়েছে। নির্বাচনে বড় ধরনের কোনো অসংগতি কিন্তু হয়নি। অনেক প্রার্থী দীর্ঘদিন প্রচার-প্রচারণা করেছে তবে তাদের প্রত্যাশিত ফল পায়নি। ফলে তাদের মনে নানা সন্দেহের জন্ম নিয়েছে। ফলে তারা বিভিন্ন অভিযোগ তুলে কিন্তু এক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো সহযোগিতা পাচ্ছে না। তারা যেসব অভিযোগ হেলাফেলা করে উড়িয়ে দিয়েছে সেগুলোই প্রমাণিত হচ্ছে।

ডাকসুর জিএস এসএম ফরহাদ যুগান্তরকে বলেন, নির্বাচনের বিভিন্ন প্রক্রিয়ার কোনো ত্রুটি ছিল কি না-সে বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে প্রশ্নগুলো আসা উচিত। ভোটগ্রহণ ও গণনার সময় প্রত্যেক প্যানেলের প্রার্থীর এজেন্ট, সাংবাদিক, শিক্ষক সবাই ছিলেন। নির্বাচনি প্রক্রিয়া সাদা দলের (বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন) শিক্ষকরা ছিলেন, পর্যবেক্ষক হিসাবে ছিলেন শিক্ষক নেটওয়ার্কের শিক্ষকরাও। নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় কোনো ত্রুটি থাকলে তারা সেটা বলতে পারেন। যথাযথ প্রশ্ন থাকলে প্রশাসনের উচিত সেগুলো অ্যাড্রেস (জবাব দেওয়া) করা। কিন্তু টু দ্য পয়েন্ট (সুনির্দিষ্টভাবে) প্রশ্ন না করে বিভিন্নভাবে শিক্ষার্থীদের মতামতকে সম্মান না করার প্রবণতাকে আমরা একটা পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র হিসাবে দেখব।

এদিকে ডাকসু নির্বাচনে নজিরবিহীন জালিয়াতি ও অনিয়মের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে শুক্রবার রাতে বিবৃতি দিয়েছে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল। ঢাবি সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান, যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. আব্দুস সালাম ও অধ্যাপক ড. মো. আবুল কালাম সরকার বিবৃতিতে এই উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তারা বলেন, ডাকসু নির্বাচনে যেসব ক্ষেত্রে কারচুপির অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে, সেসব বিষয়ে ঢাবি প্রশাসনকে অবিলম্বে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দিতে হবে। অভিযোগগুলোকে ভুল প্রমাণ করা সম্পূর্ণভাবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায়িত্ব। প্রয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয় অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে থেকে মনোনীত সদস্যদের নিয়ে একটি নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যে কমিটির রিপোর্ট প্রকাশ করতে হবে। কমিটির রিপোর্টে নির্বাচনে কারচুপি ও জালিয়াতি প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্টদের চিহ্নিত করে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। তারা আরও বলেন, শুধু তাই নয়, অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হলে নির্বাচনের ফলাফল স্থগিত করে পুনরায় একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে। আর তা না হলে এই নির্বাচনটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাবে। তাই ঢাবি সাদা দল মনে করে, ফ্যাসিবাদের আমলে অনুষ্ঠিত অবৈধ নির্বাচনের মাধ্যমে যেমন জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকারের মূলে কুঠারাঘাত করা হয়েছে, ঠিক তেমনি নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে যথাযথ ব্যবস্থা না নিলে ২০২৫ সালের ডাকসু নির্বাচনটিও ঢাবি শিক্ষার্থীদের ভোটাধিকার হরণের একটি প্রহসনমূলক ও কলঙ্কিত নির্বাচন হিসাবে ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই পাবে।

অন্যদিকে ডাকসু নির্বাচন পরিচালনার অধিকাংশ দায়িত্বে থেকেও নির্বাচন নিয়ে বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দলের অনিয়মের অভিযোগ তুলে বিবৃতিকে দ্বিমুখী আচরণ বলে মনে করছে পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সংগঠন ইউনিভার্সিটি টিচার্স লিংক। শনিবার বেলা ৩টায় ডাকসু ভবনের সামনে নির্বাচনকেন্দ্রিক পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে সংগঠনটি। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ইউটিএলের আহ্বায়ক অধ্যাপক মো. আতাউর রহমান বিশ্বাস। তিনি বলেন, বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদী শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল ডাকসু নির্বাচন নিয়ে এক হতাশাজনক বিবৃতি প্রদান করেছে। জুলাই-পরবর্তী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কাঠামোতে সংগতকারণে সাদা দল নেতৃত্ব দিচ্ছে। বিভিন্ন অনুষদের ডিন এবং ১৮টি হলের মধ্যে ১৬টি হলের প্রভোস্ট সরাসরি সাদা দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এছাড়া ডাকসু নির্বাচনের জন্য গঠিত নির্বাচন কমিশনের ১০ জন সদস্যের মধ্যে ৮ জনই সাদা দল ও ২ জন পিংক দলকে প্রতিনিধিত্ব করেন। নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়া রিটার্নিং অফিসার, পোলিং অফিসারদের অধিকাংশই সাদা দলের সক্রিয় সদস্য হিসাবে পরিচিত। নির্বাচন পরিচালনার অধিকাংশ দায়িত্ব যখন সাদা দলের শিক্ষকদের হাতে ছিল; তখন নিজেদের বিবৃতিতে দাবি করা নির্বাচনে ‘জালিয়াতি ও অনিয়ম’ প্রসঙ্গটি এটি দ্বিচারিতা ও দ্বিমুখী আচরণের পর্যায়ে পড়েছে। এতে করে বিবৃতি দানকারী শিক্ষকদের নৈতিক অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। সংবাদ সম্মেলনে ইউটিএলের পক্ষ থেকে ৩টি প্রস্তাব তুলে ধরা হয়। ১. বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনকে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট বিষয়ের উত্থাপিত অযৌক্তিক প্রশ্নের সুরাহা করতে হবে। শিক্ষার্থীদের তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের পর কোনো ধরনের হ্যারেসমেন্ট কিংবা তাদের ম্যান্ডেট কেড়ে নেওয়ার মতো কর্মকাণ্ড বন্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। ২. ঢাবি সাদা দলের শিক্ষকদের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণে পরিচালিত নির্বাচনকে সাদা দলের প্যাডে বিবৃতি দিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে, যা মোটেই কাম্য নয়। ৩. ২০২৫ সালের ডাকসু নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হওয়ায় ইতোমধ্যে দেশ-বিদেশে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে। এমন নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে যেসব তৎপরতা পরিলক্ষিত হচ্ছে সেগুলোর বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।