
ফেব্রুয়ারি মাসে সংসদ নির্বাচন ধরে আগামী কয়েকদিনের মধ্যে দলীয় একক প্রার্থীকে গ্রিন সিগন্যাল দেবে বিএনপি। যদিও এর আগে বেশ কয়েক জনকে গ্রিন সিগন্যাল দেয়া হয়েছে। এখন অনানুষ্ঠানিকভাবে শুধুমাত্র প্রার্থীকে জানিয়ে দেয়া হবে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাওয়ার জন্য। প্রার্থীকে নিয়ে প্রচারণায় মাঠে নামবে দল। নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পরে দলীয় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী চূড়ান্ত প্রার্থী আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করবে দলটি। ওদিকে ইতিমধ্যে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে ভার্চ্যুয়ালি বৈঠক করে এরকম সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এসব বৈঠকে দলীয় মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাদের নির্দেশনা দিয়েছেন। এই প্রক্রিয়ায় অংশ হিসেবে সারা দেশে পাঁচটি জরিপ করেছে দলটি। প্রতিটি ওয়ার্ড এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে জরিপ চালিয়ে সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করেছে। আন্তর্জাতিক ও বিজ্ঞানসম্মতভাবে এই জরিপ করা হয়েছে। দল এবং জোটের প্রার্থী চূড়ান্ত করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে। এ ছাড়া দলীয় সম্ভাব্য প্রার্থীদের কাছে ম্যাসেজ দিয়েছে দলটি। তাদের ধানের শীষের পক্ষে বক্তব্য দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। যে নেতাকেই ধানের শীষের প্রতীক দেয়া হবে তারপক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করারও নির্দেশনা দিয়েছে বিএনপি’র হাইকমান্ড।
বিএনপি’র নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে প্রার্থী চূড়ান্ত করতে পাঁচটি জরিপ করা হয়েছে। আন্তর্জাতিকভাবে, সরকারি, বেসরকারি, সাংগঠনিক এবং মিডিয়ার মাধ্যমে জরিপ করেছে দলটি। এর মধ্যে একটি বিজ্ঞানসম্মতভাবে জরিপ হয়েছে। জরিপ চলাকালীন সময়ে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন তারেক রহমান। তাদের বলা হয়েছে, নির্বাচনে একক প্রার্থী দেয়া হবে। যারা মনোনয়ন পাবেন না তাদের মনোক্ষুণ্ন্ন না হয়ে দলীয় মনোনীত প্রার্থীকে নির্বাচনে বিজয়ী করে আনার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। দলের এই নির্দেশনা অমান্য করে দলীয় মনোনীত প্রার্থীর বিপক্ষে যারা কাজ করবেন তাদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও মনোনয়নপ্রাত্যাশীদের সতর্ক করেছেন তারেক রহমান।
বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন মানবজমিনকে বলেন, জরিপ হচ্ছে। কমিটি থেকে মতামত নেয়ার প্রক্রিয়া চলছে। এ বিষয়ে দিন-তারিখ বলা যাবে না।
স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রত্যেকটি আসনে বিএনপি’র একাধিক যোগ্য প্রার্থী আছে। প্রত্যেক আসনে পাঁচজন, সাতজন এবং দশজন করে যোগ্য প্রার্থী আছে। আমরা একটা নিয়মতান্ত্রিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মধ্যদিয়ে প্রার্থী সিলেকশনের বিষয়টা দেখছি। এখন কাজটা জেলা এবং বিভাগভিত্তিক করছি। খুব শিগগিরই আসনভিত্তিক একক প্রার্থীকে মাঠে কাজ করার জন্য গ্রিন সিগন্যাল দেয়া হবে।
জানা গেছে, প্রার্থী চূড়ান্তের ক্ষেত্রে আন্দোলন-সংগ্রামে সম্পৃক্ত ত্যাগী, সততার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ, এলাকায় জনপ্রিয় ও ক্লিন ইমেজধারীদের প্রাধান্য দেবে বিএনপি। এই বিবেচনায় মনোনয়নে এবার চমক আসতে পারে। শতাধিক তরুণ প্রার্থীর ভাগ্য সুপ্রসন্ন হতে পারে বলে জানা গেছে। এ ছাড়া নির্বাচনে ফ্যাসিবাদবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের সমমনাদের ৫০টি আসন ছাড়ার চিন্তা করছে দলটি। এ বিষয়ে সমমনাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চলছে। সমমনারাও তাদের দাবি উত্থাপন করছে।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপি‘র একজন শীর্ষ নেতা মানবজমিনকে বলেন, যারা গ্রিন সিগন্যাল পাবেন, তাদের দায়িত্ব হবে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে একসঙ্গে নির্বাচনী মাঠে কাজ করা। যদি তারা না মানে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। কারণ বিএনপি’র রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ জামায়াতে ইসলামী ইতিমধ্যে এককভাবে প্রার্থী ঘোষণা করে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছে। তাদের নেতাকর্মীরা মাঠে ছুটে বেড়াচ্ছেন। তাই আনুষ্ঠানিক নয়, অনানুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থীদের গ্রিন সিগন্যাল দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। এই প্রক্রিয়া নিয়ে কাজ করছে তারা। কয়েকদিনের মধ্যে প্রার্থীদের গ্রিন সিগন্যাল দেবে দলটি।
বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স মানবজমিনকে বলেন, আমাদের নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হয়ে গেছে। এখন পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আমরা কাজ করছি। আর চূড়ান্ত মনোনয়ন দেয়া হবে সনাতন পদ্ধতিতে। বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ক্ষমতা অর্পণ করা হয়েছে। স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এই ক্ষমতা তাকে দেয়া হয়। তিনি যাকে যোগ্য মনে করবেন তাকেই নির্বাচনের টিকিট দেবেন।