
গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা আটক এবং এর ক্রুদের গ্রেপ্তারের ঘটনায় প্রতিক্রিয়া জানিয়ে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মহাসচিব অ্যাগনেস ক্যালামার্ড বলেছেন, গাজার উপকূলে গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার জাহাজগুলোতে ইসরাইলের শক্তি প্রয়োগ ও তাদের ক্রুদের আটক করা সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ মানবিক অভিযানে যুক্ত সংহতি কর্মীদের ওপর নগ্ন আক্রমণ। কয়েক সপ্তাহ ধরে ইসরাইলি কর্মকর্তারা ফ্লোটিলা ও এর অংশগ্রহণকারীদের বিরুদ্ধে হুমকি ও উস্কানি চালিয়েছে এবং একাধিকবার এর কিছু জাহাজ ধ্বংস করারও চেষ্টা করেছে।
তিনি আরও বলেন, ইসরাইল বর্তমানে যাদের ওপর গণহত্যা চালাচ্ছে- সেই জনগোষ্ঠীর কাছে অত্যাবশ্যকীয় খাদ্য ও জীবনরক্ষাকারী সহায়তা পৌঁছানো ঠেকিয়ে দিয়ে এবং তাদের অনাহারে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়ে আবারও দেখালো যে তারা আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতের বাধ্যতামূলক রায় কিংবা দখলদার শক্তি হিসেবে তাদের নিজস্ব দায়িত্বের প্রতি কোনো সম্মান প্রদর্শন করছে না। আটক করা জাহাজগুলোর ক্রুদের অবিলম্বে এবং নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে। তাদের আটক বেআইনি এবং ইসরাইলকে অবশ্যই তাদের নিরাপত্তার পূর্ণ দায়িত্ব নিতে হবে ও মুক্তির আগ পর্যন্ত যেকোনো নির্যাতন থেকে তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, এই হস্তক্ষেপ কেবল ত্রাণ আটকানো নয়; এটি একটি পরিকল্পিত ভয়-ভীতি প্রদর্শন, যার উদ্দেশ্য ইসরাইলের গণহত্যা ও বেআইনি অবরোধের সমালোচকদের শাস্তি দেয়া ও চুপ করিয়ে রাখা। এর আগে যে উস্কানি ও হুমকি দেয়া হয়েছে, সেটিও ছিল শান্তিপূর্ণ সংহতি আন্দোলনগুলোকে নিভিয়ে দেয়ার নির্লজ্জ প্রচেষ্টা। আমরা এখন পর্যন্ত আটক হওয়া সবার নিরাপত্তা নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন, বিশেষত আরব প্রতিনিধি ও সংহতি কর্মীদের জন্য, যাদের বিরুদ্ধে ঘৃণাত্মক প্রচারণা চালানো হয়েছে।
বিবৃতিতে তিনি আরও বলেন, মানবাধিকার রক্ষাকারী, চিকিৎসক, সংসদ সদস্য, কর্মী ও সাংবাদিকসহ ৪০টিরও বেশি দেশের প্রতিনিধিকে নিয়ে গঠিত গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা এবং এর আগের সব শান্তিপূর্ণ উদ্যোগ ইসরাইলের বেআইনি অবরোধ ভাঙার প্রচেষ্টায় গাজায় অবরুদ্ধ, অনাহারে থাকা এবং ভোগান্তিতে থাকা মানুষের সঙ্গে সংহতির এক শক্তিশালী প্রতীক হয়ে উঠেছে। আসলেই, তাদের সমুদ্রে নামতে হওয়াটাই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ব্যর্থতার পরিষ্কার প্রমাণ- যারা ইসরাইলের চলমান গণহত্যা থামাতে এবং গাজায় ত্রাণ প্রবাহ নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে। শুধু নিন্দা জানানোর সময় শেষ হয়ে গেছে। বিশ্ব রাষ্ট্রগুলোকে এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে এবং স্পষ্ট জানাতে হবে যে, তারা আর ইসরাইলের পদ্ধতিগতভাবে গাজাবাসীকে অনাহারে রাখার নীতি কিংবা নিরস্ত্র মানবিক প্রচেষ্টাকে টার্গেট করা বরদাস্ত করবে না। আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের জন্য ইসরাইলকে যে দীর্ঘদিন দায়মুক্তি দেয়া হয়েছে, তা শেষ করতে হবে। কোনো কিছুই গণহত্যার যৌক্তিকতা হতে পারে না। রাষ্ট্রগুলোকে অবশ্যই আটক হওয়া সবার অবিলম্বে ও নিরাপদ প্রত্যাবর্তন দাবি করতে হবে এবং অন্য জাহাজগুলোকে বাধাহীনভাবে গাজায় পৌঁছাতে দিতে হবে। একইসঙ্গে তাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে হবে যেন ইসরাইল তার ১৮ বছরের দমবন্ধ করা অবরোধ তুলে নেয় এবং সব সীমান্ত দিয়ে মানবিক সহায়তা গাজার ভেতরে ও সর্বত্র পৌঁছানো নিশ্চিত করে।