Image description
সরজমিন নোয়াখালী

ভোটের জন্য অপেক্ষা ভোটারদের। ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হচ্ছে এমন ঘোষণার পর থেকেই গোটা নোয়াখালীতে চলছে আলোচনা। পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনার মাঝে সময় পেরুচ্ছে। চা স্টল, গলির মোড়, রেস্টুরেন্ট, আড্ডায় এখন একটাই আলোচনা ত্রয়োদশ নির্বাচন। বিশেষ করে নতুন প্রজন্ম নির্বাচনের দিনক্ষণ গুনছেন। তাদের কেউ কেউ ভোটার হয়েও বিগত তিনটি নির্বাচনে ভোট দিতে পারেন নি। আবার কেউ কেউ এবারই নতুন ভোটার হয়েছেন। তাদের যেন দিন শেষ হচ্ছে না। কেউ কেউ বলছেন, ফেব্রুয়ারি কেন দ্রুত আসছে না? আবার অনেকে বলছেন, আসলে কি ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে? এতসব প্রশ্ন নিয়ে তর্ক-বিতর্কেও জড়াচ্ছেন কেউ কেউ। তবে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হচ্ছে- এমনটা বিশ্বাস করেন বেশির ভাগ মানুষ। তাদের কথা-প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস একজন আন্তর্জাতিক সম্মানী ব্যক্তি। তিনি জাতির সামনে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন। পৃথিবী উল্টে গেলেও তিনি তার কথা রাখবেন।

নোয়াখালীর কবিরহাট বাজারের একটি চা স্টল। বেশ ক’জন বসে চা খাচ্ছেন। সেখানে দেখা যায় একই আলোচনা-নির্বাচন। সেখানে বসা বঠৈয়া গ্রামের নুরুল ইসলাম। তিনি বলেন, গত ষোল বছর এক আজাবের মধ্যে ছিলাম। মুখে কোনো কথা বলতে পারিনি। নীরবে দিন কেটেছে। কোথায় কি বলে ফেলি আর আমার ওপর নেমে আসবে গজব? এ ভয়ে থাকতাম সব সময়। গত বছর ৫ই আগস্টের পর গা-ঝাড়া দিয়ে বের হলাম। এবার কথা বলা যাবে। স্বৈরাচারের হাত থেকে দেশ মুক্ত হয়েছে। স্বাধীন মতামত দিতে পারবো। কথা বলতে থাকলাম। কিন্তু এখন দেখি পরিবেশ দিন দিন উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। আগের দিকে মোড় নিচ্ছে সবকিছু। মনে মনে বলি তাহলে এই বিপ্লব কেন করা হলো? কেন গুলিতে হাজারো ছাত্র-জনতার জীবন প্রদীপ নিভে গেল? এ অবস্থায় ভাবি অন্তর্বর্তী সরকার যত তাড়াতাড়ি নির্বাচন দিবে ততই দেশের মঙ্গল হবে। নির্বাচিত সরকার এলে দেশের একটা গতি হবে। তাদের জবাবদিহিতা থাকবে। প্রধান উপদেষ্টা ঘোষণা দিয়েছেন ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে। সে অপেক্ষায় আছি। গত তিনটি নির্বাচনে ভোট দিতে পারিনি। কেন্দ্রের কাছাকাছিও যেতে দেয়া হয়নি। কোনো ভোটারও সাহস করে ভোট দিতে যায়নি। সন্ধ্যায় দেখি বিজয় মিছিল। আজব এক রাজ্য বানানো হয়েছিল দেশটিকে। এবার নির্বাচনে তিনবারের ভোট না দেয়ার দুঃখ ঘোচাবো। নুরুল ইসলামের কথার সঙ্গে সুর মেলান রামস্বপুর গ্রামের রহমত আলী। ষাটোর্ধ্ব রহমত আলী বলেন, আমরা ভোট চাই। যত তাড়াতাড়ি ভোট দেয়া হয় ততই ভালো। দেশকে ঠিক জায়গায় আনতে হলে নির্বাচিত সরকার দরকার। তাছাড়া বহুদিন আমরা ভোট কি জিনিস চোখে দেখেনি। অর্থাৎ ভোট দিতে পারিনি। তাই বলছি, আমার এখন নির্বাচনই শেষ কথা। 
চা স্টল থেকে বেরিয়ে দেখা হয়, পার্শ্ববর্তী মার্কেটের ফারহানা গার্মেন্টসের স্বত্বাধিকারী নাসির উদ্দিনের সঙ্গে। নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নির্বাচন দ্রুত দেয়া ফরজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এলাকার মানুষের সঙ্গে আমিও নির্বাচনের অপেক্ষায় আছি। তাছাড়া এলাকার যে অবস্থা তা থেকে রক্ষা পেতে নির্বাচনই শেষ কথা। তিনি বলেন, এবার মার্কা দেখে নয়, ভালো মানুষ দেখে ভোট দেবো। সবাইকে বলবো, প্রত্যেকেই যেন সেটি করে। তাহলে দেশ পরিচালিত হবে ভালো মানুষের মাধ্যমে। এতে দেশের জনগণ শান্তিতে থাকতে পারবে। 

নোয়াখালী জেলা সদরের আজিজুল্লাপুরের সিএনজি চালক বলেন, নির্বাচন চাই। নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করছি। আমি ভোটার হওয়ার পর একবারও ভোট দিতে পারিনি। এ কষ্ট নিয়ে এতদিন পার করেছি। এখন আগামী নির্বাচনে মনের মতো প্রার্থীকে ভোট দেবো। পূর্ব নূরপুর গ্রামে আবদুল আলীম বলেন, নির্বাচন সঠিক সময়ে হবে কি-না এটা একটা বিরাট প্রশ্ন। কারণ একেক সময় একেক কথা শুনছি। সেসব কথায় বিভ্রান্ত হয়ে যাই। আবার বলি প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস কথা দিয়ে কথা রাখবেন না- এমন মানুষ তিনি নন। গোটা বিশ্বে তার পরিচিতি। জাতিসংঘেও তিনি বলে এসেছেন ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের কথা। তাই ভরসা হয়। মনে প্রশ্ন থাকলেও আমি বিশ্বাস করি ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে। তাছাড়া সম্ভাব্য প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ দেখেও মনে হয় নির্বাচন হচ্ছে। আমার কথা দ্রুত নির্বাচন চাই। জেলা সদরের হাসানপুর গ্রামের শিক্ষক মাসুদ আহমেদ বলেন, আমাদের ভোট দেয়া হয় না। নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করতে হয়। গত তিনটি নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করেছি। দেখেছি ইতিহাসের জঘন্যতম নির্বাচন। পিচ্চি পিচ্চি ছেলেরা এসে অর্ডার দিতো। ব্যালট পেপার নিয়ে নিতো। চোখের সামনে সিল মারছে আর বাক্সে ভরছে। নিরুপায় হয়ে দেখা ছাড়া কারও কোনো উপায় ছিল না। তাদের সরাসরি সহায়তা করতো প্রশাসনের লোকেরা। আমরা নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করেছি চাকরের মতো। দত্তেরহাট বাজারের মো. নাসিম বলেন, কোনো কথা নেই। নির্বাচন চাই। নির্বাচন দ্রুত চাই। ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হলে দেশের বর্তমান পরিস্থিতির পরিবর্তন হবে। বিশ্বাস করুন আর না-ই করুন বর্তমান পরিস্থিতিও মানুষ ভালোভাবে নিচ্ছে না। একটি দলের প্রভাব সব জায়গায়। এ থেকে বেরিয়ে আসা দরকার। আর বেরিয়ে আসতে হলে প্রয়োজন নির্বাচন। কারণ নির্বাচিত সরকারের জবাবদিহিতা থাকে। জনগণের কাছে যেতে হয়। আর অনির্বাচিত সরকারের কোনো জবাবদিহিতা নেই। ফলে তাদের ওপর আশা করাও দুরূহ। দত্তের হাট বাজারের ব্যবসায়ী তারেক বলেন, নির্বাচন ছাড়া কোনো গতি নেই। আমি চাই নির্বাচন দ্রুত হলেই মঙ্গল। কিন্তু প্রশ্ন হলো-নির্বাচন সঠিক সময়ে হবে কি?