
সংক্ষিপ্ত স্কোর: বাংলাদেশ ১৮.৪ ওভারে ১৫৩/৬ (রিশাদ ১৪*, সোহান ২৩*; পারভেজ ৫৪, সাইফ ০, তানজিদ ৫১, জাকের ৬, শামীম ০, তানজিম ০)
আফগানিস্তান ২০ ওভারে ১৫১/৯ (শরফুদ্দিন ১৭*; ইব্রাহিম ১৫, অটল ১০, রাসুলি ০, ইশাক ১, ওমরজাই ১৮, গুরবাজ ৪০, নবী ৩৮, রশিদ ৪, নূর ৬)
সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে আফগানিস্তানকে ৪ উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশ। ১৫২ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে শুরুটা দাপুটে ব্যাটিংয়ে করেছিল তারা। শেষ পর্যন্ত সহজ ম্যাচটা জিতেছে কঠিন করে। আফগানদের ৪ উইকেটে হারিয়ে তিন ম্যাচের সিরিজে এগিয়ে গেছে ১-০ ব্যবধানে।
অথচ শুরুটা যেভাবে হয়েছিল তাতে বড় ব্যবধানে জয়ের সম্ভাবনাই দেখা যাচ্ছিলো। ৬ ওভারে বিনা উইকেটে আসে ৫০ রান। দশ ওভারে পারভেজ হোসেন ও তানজিদ হাসানের জুটিতে যোগ হয় ৯৫ রানও! ১২তম ওভারে পারভেজ ফরিদের শিকার হতেই দিশা হারায় তারা। ৯ রানের মধ্যে ৬ উইকেট হারালে পরাজয়ের শঙ্কাও জাগে। ৪ ওভারে প্রয়োজন পড়ে ৩৪ রানের। কিন্তু নুরুল হাসান সোহান ও রিশাদ মিলে ক্যামিও ব্যাটিংয়ে উদ্ধার করেন দলকে।
কঠিন সেই মুহূর্তে নুরুল হাসান সোহান ও রিশাদ হোসেন ডেথে যেমন ব্যাটিংটা প্রয়োজন সেটাই করেছেন। দারুণ সব বাউন্ডারিতে সব চাপ আছড়ে ফেলেন বাউন্ডারিতে। তাদের ১৮ বলে ৩৫ রানের ঝড়ো জুটিতে ৮ বল হাতে রেখে জিতেছে টাইগাররা। সোহান ১৩ বলে ১ চার ও ২ ছক্কায় ২৩ রানে অপরাজিত ছিলেন। ৯ বলে ৩ চারে ১৪ রানে অপরাজিত ছিলেন রিশাদ হোসেন।
১৮ রানে ৪ উইকেট তুলে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন রশিদ খান। একটি করে নেন ফরিদ আহমেদ ও নূর আহমেদ।
রশিদের ঘূর্ণির পর নূরের আঘাতে পড়লো ষষ্ঠ উইকেট
রশিদের ঘূর্ণিতে ৮ রানে পাঁচ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ৯ রানে ষষ্ঠ উইকেট পড়তেও সময় লাগেনি। নূর আহমেদের বলে লেগ বিফোরে ফিরেছেন তানজিম হাসান। তিনি বিদায় নেন শূন্য রানে। তাতে ১১৮ রানে পতন হয় বাংলাদেশের ষষ্ঠ উইকেটের।
রশিদের ঘূর্ণিতে ৫ উইকেট হারালো বাংলাদেশ
১৩তম ওভারে জোড়া আঘাতের পর ১৫তম ওভারে রশিদ খান আবারও জোড়া আঘাত করেছেন। তাতে এলোমেলো হয়ে পড়ে বাংলাদেশের ব্যাটিং। ১৪.২ ওভারে এলবিডাব্লিউতে ফেরেন জাকের আলী (৬)। এক বল পর নতুন ব্যাটার শামীমকেও এলবিডাব্লিউতে শূন্য রানে ফেরান তিনি। তাতে ৮ রানে বাংলাদেশ হারায় পাঁচ উইকেট।
রশিদের জোড়া আঘাতে ফিরলেন সাইফ, তানজিদ
ফরিদের বোলিংয়ে দুর্দান্ত ওপেনিং জুটি ভাঙার পরের ওভারে জোড়া আঘাত হেনেছেন রশিদ খান। ১৩তম ওভারে তুলে নিয়েছেন নতুন ব্যাটার সাইফ হাসান ও সেট ব্যাটার তানজিদের উইকেট। তাতে দ্রুত তৃতীয় উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ। রশিদ খানের ঘূর্ণিতে এলবিডাব্লিউতে শুরুতে ফিরেছেন নতুন ব্যাটার সাইফ। তিনি আউট হন শূন্য রানে। শুরুতে আম্পায়ার আউট দেননি। রশিদ খান রিভিউ নেওয়াতে মেলে সাফল্য। একই ওভারের শেষ বলে তানজিদ গ্লাভসবন্দি হন ৫১ রানে। তার ৩৭ বলের ইনিংসে ছিল ৩টি চার ও ৩টি ছয়।
পারভেজের বিদায়ে ভাঙলো ১০৯ রানের জুটি
ঝড়ো ব্যাটিংয়ে ওপেনিং জুটিতেই ১০৯ রান যোগ করেছে বাংলাদেশ। যার পেছনে অবদান পারভেজ হোসেন ও তানজিদ হাসানের। ১১.৪ ওভারে শুরুর জুটি ভেঙেছেন ফরিদ আহমেদ। পারভেজকে ৫৪ রানে লেগ বিফোরে ফিরিয়েছেন তিনি। পারভেজ অবশ্য রিভিউ নিয়েও রক্ষা পাননি। তার ৩৭ বলের ইনিংসে ছিল ৪টি চার ও ৩টি ছয়।
তানজিদ-পারভেজের ফিফটিতে ছুটছে বাংলাদেশ
ঝড়ো ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের স্কোরবোর্ড সচল রেখেছিলেন ওপেনার পারভেজ হোসেন ও তানজিদ হাসান। দুবার জীবন পেলেও ৩৫ বলে ক্যারিয়ারের তৃতীয় ফিফটি তুলে নেন পারভেজ। তার পর ফিফটি তুলে নেন আরেক ওপেনার তানজিদ হাসানও। তিনি ফিফটির দেখ পান ৩৪ বলে। এটা তানজিদের অষ্টম ফিফটি।
পাওয়ার প্লেতেই বিনা উইকেটে বাংলাদেশের ৫০ রান
দুই ওপেনারে মিলে ঝড়ো সূচনা হয়েছে বাংলাদেশের। পাওয়ার প্লেতেই তুলেছে বিনা উইকেটে ৫০ রান। অবশ্য পঞ্চম ওভারে দুবার জীবন পেয়েছেন ওপেনার পারভেজ হোসেন। দুবারই তার ক্যাচ নিতে পারেনি আফগানিস্তান। আগ্রাসীও বেশি ছিলেন তিনি। পাওয়ার প্লে শেষে পারভেজ অপরাজিত ছিলেন ৩৩ রানে। তানজিদ ১৭ রানে।
বাংলাদেশকে ১৫২ রানের লক্ষ্য দিয়েছে আফগানিস্তান
শারজায় সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশকে ১৫২ রানের লক্ষ্য দিয়েছে আফগানিস্তান। ৯ উইকেট হারিয়ে তারা সংগ্রহ করেছে ১৫১।
নিয়মিত বিরতিতে উইকেট তুলে বেশিরভাগ সময়ই আফগানিস্তানকে চাপে রেখেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু শেষ দিকে কয়েক ওভারেই ম্যাচের গতিপথ ঘুরিয়ে দেন মোহাম্মদ নবী। ঝড়ো ব্যাটিংয়ে ২৫ বলে করেন ৩৮। তার আগে ৩১ বলে গুরুত্বপূর্ণ ৪০ রানের ইনিংস খেলেন রহমানউল্লাহ গুরবাজও। শুরুর দিকের ধাক্কায় সতর্ক হয়ে খেলতে হয় আফগান ব্যাটারদের।
১৩২ রানে ৮ উইকেট পতনের পর স্কোরটা দেড়শ পার হয় শরফুদ্দিন আশরাফের শেষ দিকের ক্যামিওতে। ১২ বলে ১ চার ও ১ ছক্কায় ১৭ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। শেষ বলে নবম উইকেট হিসেবে রান আউটে কাটা পড়েন নূর আহমেদ।
বল হাতে সবচেয়ে কার্যকর ছিলেন নাসুম আহমেদ। মোস্তাফিজুর রহমানও চমৎকার বল করেছেন, দিয়েছেন কাটার আর স্লোয়ার। শেষ দিকে কিছুটা খরুচে হলেও নতুন বলে দারুণ স্পেল করেছেন তাসকিন আহমেদ। ৩৩ রানে রিশাদ নেন দুটি উইকেট। ৩৪ রানে দুটি নেন তাসজিম হাসানও। একটি করে নেন তাসকিন, নাসুম ও মোস্তাফিজ।
রশিদকে টিকতে দেননি মোস্তাফিজ
নবীকে তাসকিন আউট করলে নতুন ব্যাটার রশিদ খান মেরে খেলার লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নেমেছিলেন। কিন্তু ১৯তম ওভারেই নতুন ব্যাটারকে গ্লাভসবন্দি করান মোস্তাফিজ। তাতে রশিদ আউট হন ৪ রানে।
নবীকে থামালেন তাসকিন
ডেথে এসে হাত খুলেছিলেন মোহাম্মদ নবী। তার ব্যাটেই স্কোরটা বড় করার স্বপ্ন দেখছিল আফগানিস্তান। ২৫ বলে ৩৮ রান করা নবীকে ফিরিয়েছেন তাসকিন আহমেদ। অবশ্য আউট হওয়ার আগে একই ওভারে দুটি ছক্কা মারেন নবী। তার ইনিংসে ছিল ১টি চার ও ৪টি ছক্কা।
গুরবাজকে ফেরালেন তানজিম
সতীর্থদের ব্যর্থতার দিনে একপ্রান্ত আগলে রানের চাকা সচল রেখেছিলেন গুরবাজ। শুরু থেকে চড়াও হওয়ার চেষ্টায় ছিলেন তিনি। ওমরজাইয়ের সঙ্গে জুটি গড়ার পর নবীর সঙ্গে মিলে যোগ করেন আরও ২২ রান। ১৪.৫ ওভারে গুরবাজকে ক্যাচ আউট করেছেন তানজিম হাসান। তাতে ৯৫ রানে পড়েছে ষষ্ঠ উইকেট। গুরবাজ ৩১ বলে ২ চার ও ৩ ছক্কায় করেছেন ৪০ রান।
৩৩ রানের জুটি ভেঙেছেন রিশাদ
৪০ রানে ৪ উইকেট হারানোর পর আফগানদের ব্যাটিংকে গতিময় করার চেষ্টা করেন রহমানউল্লাহ গুরবাজ ও আজমতউল্লাহ ওমরজাই। পঞ্চম উইকেটে ৩৩ রান যোগ করেন তারা। দলের ৭৩ রানে ওমরজাইকে তালুবন্দি করিয়ে এই জুটি ভেঙেছেন রিশাদ হোসেন। ওমরজাই ১৮ বলে করেছেন ১৮ রান।
রিশাদের আঘাতে পড়লো চতুর্থ উইকেট
আফগানদের শুরুতেই চেপে ধরা বাংলাদেশের চতুর্থ উইকেট পেতেও সময় লাগেনি। পাওয়ার প্লের পরের ওভারে আক্রমণে এসেই উইকেট তুলে নিয়েছেন রিশাদ হোসেন। তার ঘূর্ণিতে ১ রানে ক্যাচ দেন নতুন ব্যাটার মোহাম্মদ ইশাক।
পাওয়ার প্লেতেই আফগানদের তিন উইকেট তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ
পাওয়ার প্লেতেই আফগানদের চেপে ধরেছে বাংলাদেশ। দুই ওপেনারকে দুই ওভারে ফেরানোর পর ষষ্ঠ ওভারে নতুন ব্যাটার রাসুলিকেও রানআউটে ফিরিয়েছে তারা। তাতে ৩১ রানে তৃতীয় উইকেটের পতনে চাপে পড়েছে আফগান দল। পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে আফগান দল ৩ উইকেট হারিয়ে তুলতে পেরেছে ৩৩ রান।
তানজিমের আঘাতে ফিরলেন অটল
নাসুমের আঘাতের পরের ওভারে টিকতে পারেননি আরেক ওপেনার সেদিকুল্লাহ অটলও। ১০ রানে তানজিম হাসান সাকিবের বলে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন তিনি। তাতে পাওয়ার প্লেতেই ৩১ রানে পড়ে দ্বিতীয় উইকেট।
নাসুমের ঘূর্ণিতে বোল্ড ইব্রাহিম
টস জিতে ব্যাটিং নিয়ে আগ্রাসী ব্যাটিং করছিলেন দুই ওপেনার ইব্রাহিম জাদরান ও সেদিকুল্লাহ অটল। চতুর্থ ওভারে ২৫ রানের শুরুর জুটি ভাঙেন নাসুম আহমেদ। তার দারুণ ঘূর্ণিতে ১৫ রানে বোল্ড হন ইব্রাহিম। তার ১০ বলের ইনিংসে ছিল ৩টি চার।
টস হেরে ফিল্ডিংয়ে বাংলাদেশ
শারজায় প্রথম টি-টোয়েন্টিতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে টস হেরে ফিল্ডিয়ে বাংলাদেশ। শুরুতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে আফগানিস্তান।
একাদশে কারা
বাংলাদেশ একাদশ: জাকের আলী (অধিনায়ক), তানজিদ হাসান, পারভেজ হোসেন, সাইফ হাসান, নুরুল হাসান, শামীম হোসেন, তাসকিন আহমেদ, মোস্তাফিজুর রহমান, রিশাদ হোসেন, নাসুম আহমেদ ও তানজিম হাসান সাকিব।
আফগানিস্তান একাদশ: রহমানউল্লাহ গুরবাজ, ইব্রাহিম জাদরান, সেদিকুল্লাহ অটল, দারউইশ রাসুলি, আজমতউল্লাহ ওমরজাই, রশিদ খান (অধিনায়ক), মোহাম্মদ নবী, শরফুদ্দিন আশরাফ, নূর আহমেদ, মোহাম্মদ ইশাক ও ফরিদ আহমেদ।