
ফিলিস্তিনের গাজাবাসীর জন্য ত্রাণ নিয়ে যাওয়া ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’ নৌবহরের প্রায় সব জাহাজই আটক করেছে ইসরায়েল। বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) প্রায় ৪০টি নৌকা আটক করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। এছাড়া নৌকাগুলোতে থাকা সুইডিশ মানবাধিকার কর্মী গ্রেটা থানবার্গসহ অন্তত চার শতাধিক বেশি বিদেশি কর্মীকে আটক করে তারা। এরপর পরই আন্তর্জাতিক নিন্দা এবং বিক্ষোভের মুখে পড়ে ইসরায়েল। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
রয়টার্সের যাচাই করা নৌকাগুলো থেকে সরাসরি সম্প্রচারিত ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে, হেলমেট ও নাইটভিশন গগলস পরা সশস্ত্র ইসরায়েলি সেনারা জাহাজগুলোতে ওঠে। এসময় যাত্রীরা লাইফ ভেস্ট পরে হাত উঁচু করে দাঁড়িয়ে ছিলেন।
ইসরায়েলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত এক ভিডিওতে দেখা যায়, থানবার্গ ডেকে বসে আছেন, সেনারা তাকে ঘিরে রেখেছে। পরিবেশ আন্দোলনের জন্য সর্বাধিক পরিচিত ২২ বছর বয়সি থানবার্গ আটকের আগ মুহূর্তে রেকর্ড করা একটি ভিডিও প্রকাশ করেন। সেখানে তিনি বলেন, ‘আপনি যদি এই ভিডিওটি দেখে থাকেন, তবে আমি ইসরায়েলি বাহিনী দ্বারা অপহৃত হয়েছি এবং আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আমাদের মানবিক মিশন ছিল অহিংস এবং আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলা।’
ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্তোনিও তাজানি বলেন, তিনি আশা করছেন বহরের সদস্যদের সোম ও মঙ্গলবার ইসরায়েল থেকে বের করা হবে এবং চার্টার ফ্লাইটে ইউরোপীয় রাজধানীগুলোতে পাঠানো হবে।
কর্মীদের আশদোদে তীরে নিয়ে আসার পর, ইসরায়েলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক্সে জানায়, ‘সব যাত্রী নিরাপদে এবং সুস্থ আছেন।’
নৌবহর নিয়ে গাজা যাত্রার আয়োজক গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা (জিএসএফ) জানায়, প্রায় ৪৪৩ স্বেচ্ছাসেবক আটক হয়েছেন। তাদের মধ্যে কিছু লোককে এক বৃহৎ কার্গো জাহাজে স্থানান্তর করার পর তীরে আনা হয়েছে।
গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা সমুদ্রপথে গাজায় ত্রাণ নিয়ে যাওয়ার একটি বৈশ্বিক প্রচেষ্টা। এই নৌবহরে রয়েছে ৪০টির বেশি বেসামরিক নৌযান। বহরে প্রায় ৪৪টি দেশের ৫০০ মানুষের মধ্যে রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র, স্পেন, আয়ারল্যান্ড, ফ্রান্স, বেলজিয়ামসহ ইউরোপীয় পার্লামেন্টের নির্বাচিত প্রতিনিধি, আইনজীবী, অধিকারকর্মী, চিকিৎসক ও সাংবাদিকেরা।
গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার প্রথম বহর ৩১ আগস্ট স্পেনের বার্সেলোনা থেকে যাত্রা শুরু করে। এরপর ১৩ থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর তিউনিসিয়া ও ইতালির সিসিলি দ্বীপ থেকে আরও নৌযান বহরটিতে যুক্ত হয়। এ ছাড়া গ্রিসের সাইরাস দ্বীপ থেকে পরে আরও কিছু নৌযান ত্রাণ নিয়ে বহরে যুক্ত হয়।
এই মিশনকে বারবার ‘নাটক’ হিসেবে অভিহিত করেছেন ইসরায়েলি কর্মকর্তারা।
বৃহস্পতিবার তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেপ এরদোয়ান ইসরায়েলি আগ্রাসনের তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, এটি দেখায় ইসরায়েলি সরকার শান্তির আশা জাগাতে কোনো ইচ্ছা রাখে না।
আঙ্কারায় তার একে পার্টির কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে দেওয়া বক্তৃতায় তিনি বলেন, ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার বিরুদ্ধে পরিচালিত সন্ত্রাসী আচরণের নিন্দা জানাই, যা গাজার ক্ষুধায় মারা যাওয়া শিশুদের বর্বরতার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করতে এবং নিপীড়িত ফিলিস্তিনিদের কাছে মানবিক সাহায্য পৌঁছে দিতে যাত্রা শুরু করেছিল।’
ফ্লোটিলায় থাকা দক্ষিণ আফ্রিকানদের অবিলম্বে মুক্তি দিতে ইসরায়েলকে আহ্বান জানান দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা। ওই বহরে সাবেক প্রেসিডেন্ট নেলসন ম্যান্ডেলার নাতি এনকোসি জওলিভেলিলে ম্যান্ডেলাও রয়েছেন।
আদালাহ নামের ইসরায়েলের একটি মানবাধিকার সংগঠন ও আইনকেন্দ্রের পরিচালক সুহাদ বিশারা বলেন, কর্মীদের আশদোদে পৌঁছানোর পর অভিবাসন কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হবে। সেখান থেকে তাদের দক্ষিণ ইসরায়েলের কেতসিওত কারাগারে পাঠানোর পর নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে।
ফ্লোটিলা আটক করার পর ইতালি ও কলম্বিয়ায় বিক্ষোভ হয়, পাশাপাশি গ্রিস, আয়ারল্যান্ড ও তুরস্কেও বিক্ষোভের ডাক দেওয়া হয়। ইতালির শ্রমিক ইউনিয়নগুলো শুক্রবার সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে।
ফ্লোটিলা হলো গাজার অবরোধ ভাঙার সর্বশেষ সমুদ্রপথে প্রচেষ্টা, যার বেশিরভাগই প্রায় দুই বছরের যুদ্ধের কারণে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।