Image description

আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলামের ইচ্ছায় দেশের বেশ কয়েকটি সিটি করপোরেশনকে উন্নয়ন সহায়তার নামে একটি করে মেশিন দেয়া হয়। জার্মানি থেকে কেনা উইড হারভেস্টার নামে মেশিনটির দাম ৬ কোটি ২৫ লাখ টাকা। এ ছাড়াও ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০টি মেশিন ইতালি থেকে আনেন ওই মন্ত্রী। এর মধ্যে চসিককে দেয়া হয় তিনটি। সবমিলিয়ে ১১ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি দেয়া হয় দুই দফায়। কিন্তু এগুলো ব্যবহার দূরে থাক কখনো পরীক্ষা করে দেখতে পারেনি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। মন্ত্রণালয় তাজুল ইসলামের সিদ্ধান্তের বাস্তবায়নের জন্য চসিকসহ ১০টি সিটি করপোরেশনকে অনেকটা গছিয়ে দেয় এসব যন্ত্র। এখন এসব শুধুই বোঝা। 

চসিক সূত্রে জানা গেছে, হাসিনার আমলে নগরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমে আরও গতি আনার নামে ওই সময় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এসব যন্ত্রপাতি ক্রয় করে। চসিক নগদ অর্থ নিতে চাইলেও তা দেয়া হয়নি। আড়াই বছর আগে পরীক্ষা চালিয়ে চট্টগ্রাম শহরে এই মেশিনের কোনো দরকার নেই বলে বোঝানো হলেও গেল মার্চে চসিককে একটি উইড হারভেস্টার মেশিন দিয়ে চলে যায় সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান। ভাসমান বর্জ্য পরিষ্কারের কাজে এটি ব্যবহৃত হয়। বর্তমানে সাগরিকার ওয়ার্কশপে এটি ফেলে রাখা হয়েছে। অন্যদিকে তিনটি আধুনিক ভ্যাকুয়াম টাইপ রোড সুইপার ট্রাক দেয়া হয় চসিককে। ইতালি থেকে আনা এসব ট্রাকের একটির মাধ্যমে প্রতিবারে অন্তত ১২ কিলোমিটার সড়ক পরিষ্কার করা সম্ভব। ট্রাকে থাকা পাইপের মাধ্যমে মুহূর্তের মধ্যে ধুলোবালি-বর্জ্য তুলে নেয়া যায়। এসব মেশিন সরবরাহ করেছে নারায়ণগঞ্জ ডকইয়ার্ড।

কিন্তু চট্টগ্রাম শহরের বাস্তবায়তায় এসব যন্ত্র এই শহরে ব্যবহার করা যাবে না বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। এগুলো চট্টগ্রাম চালালে ধুলোবালি কুড়িয়ে উড়িয়ে নাজেহাল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় বলে জানায় তারা। তারা আরও জানান, এগুলো কাপ্তাই লেকে কচুরিপানা পরিষ্কার করার কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে। কিন্তু শহরে এই ধরনের গভীর ও প্রশস্ত কোনো নালা-খাল নেই। অন্তত ৮ ফুট গভীর না হলে এবং যথেষ্ট প্রশস্ততা না থাকলে এ ধরনের যন্ত্র নামানো যাবে না। 

সূত্র মতে সিটি করপোরেশনকে দেয়া ভাসমান বর্জ্য পরিষ্কার করার যন্ত্র ‘উইড হারভেস্টার’ নামে যন্ত্রটির কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হয়েছিল তিন বছর আগে। সে সময় এটি পরীক্ষা করার মতো কোনো খাল নগরে পাওয়া না গেলেও ব্যক্তি মালিকানাধীন একটি পুকুরে সেটি নামানো হয়। কিন্তু আর তোলা যাচ্ছিল না। বহু কষ্টে যন্ত্রটি তুলে চসিক রেখে দেয় সাগরিকার ওয়ার্কশপে। যন্ত্রটি নিতে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন আগ্রহ না দেখালেও চাহিদা ছাড়াই সম্প্রতি (চলতি বছরের মার্চে) দামি এই যন্ত্র চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনকে তুলে দেয় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এখন এই যন্ত্র নিয়ে কোন কাজে লাগানো হবে তাও জানে না সিটি করপোরেশন। অনেকটা বেকায়দায় পড়েছেন কর্মকর্তারা।

সূত্র জানায়, ২০২২ সালে পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে আটটি উইড হারভেস্টার কিনেছিল স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। ওই সময় তাজুল ইসলাম মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক বাজেটের বরাদ্দে এই ক্রয়ের সিদ্ধান্ত দেন। ‘সিটি করপোরেশনের জন্য উন্নয়ন সহায়তা’ খাতের বরাদ্দ দিয়ে এ ধরনের আটটি যন্ত্র কিনে মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ, ঢাকা উত্তর, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, রংপুর ও ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনসহ ১০টি সিটি করপোরেশনকে একটি করে উইড হারভেস্টার দেয়া হয়। আর দুই বছর আগে অর্থাৎ ২০২০ সালে তিনটি রোড সুইপার মেশিন বুঝে পায় চসিক। সে সময় খোরশেদ আলম সুজন চসিকের প্রশাসক ছিলেন।

চসিকের পরিচ্ছন্নতা বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, এগুলো ধুলা পরিষ্কারের পরিবর্তে উল্টো সড়কে আরও ধুলা উড়ায়। সবকিছু অন্ধকার হয়ে পড়ে। আর উইড হারভেস্টার নামানো সম্ভব নয়। বলা হয়েছিল এটি জলে-স্থলে চালানো যাবে। বাস্তবে ঘটেছে উল্টো। কোনো কাজে না আসায় এগুলোর ব্যবহার বন্ধ রেখেছে সিটি করপোরেশনগুলো। অভিযোগ আছে, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে (ডিপিএম) এসব যন্ত্রপাতি কেনাকাটা করে। মন্ত্রী তাজুল ইসলাম তার পছন্দের ঠিকাদার ও সরবরাহকারীদের মাধ্যমে বাড়তি দামে এসব যন্ত্রপাতি কিনেন। এর সঙ্গে প্রভাবশালীরাও জড়িত আছে। বিরাট দুর্নীতি করে এসব কেনা হয়েছে বলে চাউর আছে। তবে সরকার পতনের পরও এসব নিয়ে কোনো তদন্ত হয়নি। এগুলো কিনতে কোনো দরপত্রও হয়নি।

চসিকের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা ইখতিয়ার উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী বলেন, আমাদের তিনটি রোড সুইপার মেশিন রয়েছে, একটি উইড হারভেস্টার মেশিন রয়েছে। কিন্তু এগুলো ওয়ার্কশপে পড়ে আছে। কোনো কাজে আসছে না। কি করবো তাও জানি না।