
হিসাব অনেক জটিল। নানা সমীকরণ চলছে। চালে ভুল হলে সব শেষ। এজন্য কেন্দ্র থেকে তৃণমূল সবখানেই চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। অনেক হিসাব সহজ। আবার অনেক হিসাবে গরমিল। একক ভাবে ভোটে জয় চিন্তা করাই যাচ্ছে না। সিলেটের ইসলামী দলগুলোর পরিস্থিতি এরকম। জোটবদ্ধ ভোটের হিসাব মাথায় রেখে সাজানো হচ্ছে ছক। আন্দোলনের শরিকরা হতে পারেন ভোটের শরিক। এমন ভাবনা দিনে দিনে আরও পরিষ্কার হচ্ছে। তবে সিলেটের ভোটের মাঠে ইতিমধ্যে প্রভাব ফেলতে শুরু করেছেন ইসলামী দলের সাত প্রার্থী। এখনো হাঁটছেন একক ভাবে। সবাই সবার প্রতিদ্বন্দ্বী। কে কার চেয়ে এগিয়ে যাবেন সেই চিন্তা মাথায় রেখে কর্মী-সমর্থকরা ভোটের মাঠে নজর কাড়তে ব্যস্ত। ইসলামী দলগুলোর মধ্যে জামায়াতে ইসলামী এবার ভোটের মাঠে মরণ কামড় দিয়েছে। একাধিক আসনে জয় চান দলের প্রার্থীরা। সেজন্য নির্বাচনী প্রস্তুতিতে তারা সবচেয়ে এগিয়ে। শোডাউন নয়, নীরব প্রচারণাকেই তারা অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছেন। বলতে গেলে দলটির নেতারা ঘরে ঘরে যাচ্ছেন।
সিলেট-৬ আসনের জামায়াতের প্রার্থী দলের ঢাকা উত্তর জামায়াতের আমীর সেলিম উদ্দিন। এ আসনে চ্যালেঞ্জ নিতে যাচ্ছে জামায়াত। ইতিমধ্যে তাদের প্রার্থীও নির্বাচনী মাঠে আলোচনায় এসেছেন। তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তোলার আভাস দিয়েছেন। সিলেট-৪ আসনে দলের প্রার্থী জেলার সেক্রেটারি জয়নাল আবেদীন। জৈন্তাপুরের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান। এ কারণে ভোটের মাঠে তিনি শুরু থেকেই আলোচনায়। দিন দিন তার ভোট বাড়ছে বলে কর্মী-সমর্থকরা জানিয়েছেন। সিলেটে জামায়াতের নির্বাচন প্রসঙ্গে দলের সিলেট মহানগর আমীর মো. ফখরুল ইসলাম জানিয়েছেন- সব আসনেই জামায়াতের ভোট ব্যাংক রয়েছে। যোগ্য প্রার্থীদের মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। ভোটাররা তাদের সাদরে গ্রহণ করছেন। ভবিষ্যৎই বলে দেবে কী হয়। দলের জেলার সেক্রেটারি ও সিলেট-৪ আসনের প্রার্থী মো. জয়নাল আবেদীন জানিয়েছেন- মাঠে থাকা প্রার্থীদের ব্যাপারে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। প্রচারণা ও প্রস্তুতিতে যাদের ঘাটতি দেখা যাচ্ছে তাদেরকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য বলা হচ্ছে। এতে করে অনেক প্রার্থীই ভোটের মাঠে গতি বাড়িয়েছেন। সিলেট অঞ্চলে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের শক্তিশালী ভোটব্যাংক রয়েছে। তবে সেটি ছড়িয়ে ছিটিয়ে।
সিলেট-৫ আসনে এবার তাদের প্রার্থী দলের সভাপতি মাওলানা ওবায়দুল্লাহ ফারুক। বলা হয়ে থাকে এ আসনে আলেম-উলামাদের ভোট বেশি। একক নির্বাচন হলে মাওলানা ওবায়দুল্লাহ ফারুককে নিয়ে স্বপ্ন দেখেন দলটির নেতাকর্মীরা। ভোটের মাঠে ওবায়দুল্লাহ ফারুকের পক্ষে নীরব প্রচারণা চলছে। সিলেট-৪ আসনে রয়েছেন দলের গ্রহণযোগ্য প্রার্থী ও সজ্জন ব্যক্তি এডভোকেট মোহাম্মদ আলী। পরিচিত মুখ। মাদ্রাসাকেন্দ্রিক ভোট ব্যাংকই তার ভরসা। অনেক আগে থেকেই ভোটের মাঠে রয়েছেন।
এবার একক নির্বাচনের জন্য আগে থেকেই প্রস্তুতি শুরু করেছেন তিনি। দিনে দিনে তার অবস্থান ভালো হচ্ছে। জমিয়ত নেতারা জানিয়েছেন- সিলেটে এবার ঐক্যবদ্ধভাবে জমিয়ত ভোটের মাঠে নামছে। ফলে পূর্ণশক্তি নিয়ে দলটির নেতারা মাঠে কাজ করছেন। সিলেট অঞ্চলে খেলাফত মজলিসেরও ভোট ব্যাংক শক্তিশালী। দলটি আমীর, মহাসচিব, যুগ্ম মহাসচিব সহ কয়েকজন সিনিয়র নেতার বাড়ি বৃহত্তর সিলেটে। ফলে এবার চমক দেখাতে চূড়ান্ত হিসাব করছেন দলটির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা। চ্যালেঞ্জ নেয়ার প্রস্তুতিও নিচ্ছেন।
সিলেট-২ আসনে খেলাফত মজলিসের প্রার্থী কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মো. মুনতাসির আলী। ইসলামী আন্দোলনের মাঠের পরিচিত মুখ। সিলেট থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত রয়েছে তার আধিপত্য। অনেক আগে থেকেই নিজের নির্বাচনী এলাকায় ভোটের মাঠে রয়েছেন। তাকে ঘিরে এবার স্বপ্ন দেখছেন নেতাকর্মীরা। সিলেট-৪ আসনে খেলাফত মজলিসের প্রার্থী তুখোড় বক্তা ও জনপ্রিয় ওয়াজি মুফতি আলী হাসান উসামা। নতুন প্রার্থী হিসেবে তিনি ভোটের মাঠে আলোচনায় এসেছেন। তার সভা-সমাবেশে তরুণ ভোটারের উপস্থিতি লক্ষণীয়। খেলাফত মজলিস জেলার সাধারণ সম্পাদক ও সিলেট-৩ আসনের প্রার্থী মো. দিলওয়ার হোসেন জানিয়েছেন- খেলাফত মজলিসের প্রার্থীরা ভোটের মাঠে নজর কাড়ছেন। যারা প্রার্থী হয়েছেন সবাই পরিচিত মুখ। ফলে ভোটারের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠছেন তারা। এদিকে- এক সময় সিলেট অঞ্চলে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের প্রার্থীরা ফ্যাক্টর হতেন।
প্রিন্সিপাল মাওলানা হাবিবুর রহমান ছিলেন ভোটের মাঠে হিসেবী নেতা। তার মৃত্যুর পর দলের শক্তি কমেছে। তবে আগের চেয়ে ভোট বেড়েছে বলে জানিয়েছেন দলটির মহানগর সাধারণ সম্পাদক মাওলানা এমরান আলম। তিনি বলেন- বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস সিলেটে অনেক পরিচিত নেতাদেরকে প্রার্থী দিয়েছে। তারা মাঠে কাজ করছেন। অন্যদিকে সিলেটে ধীরে ধীরে ভোট ব্যাংক বাড়ছে ইসলামী আন্দোলনেরও। দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা মাহমুদুল হাসান জানিয়েছেন- সিলেট-৫, সিলেট-৪ ও সিলেট-২ আসনে তাদের ভোট ব্যাংক রয়েছে। অন্যান্য আসনেও ভোট বাড়ছে। সিলেট-৫ আসনে দলের প্রার্থী ইসলামী আন্দোলনের পরিচিত মুখ ও ওয়াজি মুফতি রেজাউল করিম আবরার। ইতিমধ্যে তিনি কানাইঘাটে সমাবেশ করেছেন। এতে বিপুল সংখ্যক ভোটারের উপস্থিতি ছিল। ভোটের মাঠে তার পদচারণা কম হলেও আলোচনায় তাকে এগিয়ে রাখা হচ্ছে। সিলেট-৪ আসনে তাদের প্রার্থী জেলার সভাপতি মুফতি সাঈদ আহমদ। তিনিও প্রচারণার মাধ্যমে ভোটারের নজর কাড়ছেন। সিলেটের ইসলামী দলগুলোর একাধিক নেতা জানিয়েছেন- এককভাবে নির্বাচনের মাধ্যমে জয়ের প্রেক্ষাপট এখনো তৈরি হয়নি। আগামীতে সম্ভব হবে কি-না- এ নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। ফলে এককভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতির পাশাপাশি জোটগত নির্বাচনের দিকে মনোযোগ বেশি দিচ্ছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। আর জোট হলেই একাধিক আসনে জয়ের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন দলগুলোর শীর্ষ নেতারা।