Image description
 

সিলেট-১ (মহানগর-সদর) নির্বাচনি আসনটি জাতীয় রাজনীতিতে মর্যাদাপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হয়। প্রচলিত মিথ হচ্ছে- সংসদ নির্বাচনে এ আসনটিতে যে দলের প্রার্থী জিতেন সেই দল সরকার গঠন করে।

 

স্বাধীনতার পর প্রায় সব জাতীয় নির্বাচনে ভোটের ফলাফলে এ মিথের প্রতিফলন হওয়ায় মর্যাদার আসনটিতে আগামী নির্বাচনে বিএনপির ‘ভিআইপি’ কোনো প্রার্থী ঘোষণার প্রস্তাব করেছিলেন সিলেট সিটি করপোরেশনের টানা দুইবার নির্বাচিত সাবেক মেয়র ও বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরী।

তিনি লন্ডন গিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাকে প্রার্থী হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। এ প্রস্তাবের বিকল্প হিসেবে জিয়া পরিবারের কোনো সদস্যকে প্রার্থী করার কথাও বলেছিলেন। সেই সাক্ষাতের প্রায় পাঁচ মাস পর কাঙ্ক্ষিত সাড়া না পেয়ে এবার সিলেট-১ আসনে বিএনপি দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশার বিষয়টি আনুষ্ঠানিক প্রকাশ করেছেন আরিফুল হক চৌধুরী।

বুধবার (২২ অক্টোবর) হযরত শাহজালালের (রহ.) দরগাহে জোহরের নামাজ আদায় করে আরিফুল হক চৌধুরী সিলেট-১ আসনে বিএনপি দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশার বিষয়টি আনুষ্ঠানিক প্রকাশ করেন। এ সময় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের ৩১ দফা সংবলিত প্রচারপত্র বিলি করা হয়।

পাশাপাশি আরিফুল হক চৌধুরীর ‘নির্বাচনি প্রচার পদযাত্রা’ শীর্ষক বিশেষ প্রচারপত্রও বিলি করা হয়। নির্বাচনি পদযাত্রায় বিএনপির নেতাকর্মী-সমর্থকসহ সাধারণ মানুষজন অংশ নেন। ‘এই সিলেটের মাটি/আরিফ ভাইয়ের ঘাঁটি...’ স্লোগানে পদযাত্রা হয়।

পদযাত্রার শুরুতে আরিফুল হক বলেন, ‘এই সিলেটে যে কোনো নির্বাচনি প্রচারণা হযরত শাহজালালের (রহ.) দরগাহ থেকে শুরু হয়। আমার দল থেকে আগামী জাতীয় নির্বাচনে একজন প্রার্থী হিসেবে সিলেট-১ আসনে ধানের শীষের প্রচারণায় নেমেছি।’

দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশায় কতটুকু আশাবাদী? এ প্রশ্নে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘দলীয় নমিনেশন লাভে আমি হান্ড্রেড পার্সেন্ট আশাবাদী।’

নির্বাচনি পদযাত্রা শেষে আরিফুল হক চৌধুরী কোর্ট পয়েন্টে বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, রাষ্ট্রকাঠামো ৩১ দফা প্রচারের মাধ্যমে আমি আনুষ্ঠানিকভাবে সিলেট-১ আসনের একজন প্রার্থী হিসেবে আজকে সাধারণ জনগণের কাছে দাবি তুলছি এবং আমার দলের কাছে নমিনেশন পাওয়ার জন্য আবেদন করছি। সিলেটের আপামর জনগণকে আহবান করেছিলাম আজকে আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানের পক্ষে সিলেট-১ আসনে আমি একজন প্রার্থী হিসেবে প্রচার অভিযান করব। আজকে আপনারা দেখেন শুধুমাত্র প্রচার অভিযানে হাজার হাজার মানুষ এসেছেন।’

সিলেট-১ আসনে নিজের মনোনয়ন শতভাগ নিশ্চিত দাবি করে আরিফুল হক বলেন, ‘আমাদের নেতা (তারেক রহমান) বলেছেন সবকিছু বিবেচনা করে আমাদের দল চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিবে। আমরা দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাজ করব। আমি সবসময় দলের ডিসিপ্লিন মেনে আসছি। আমি কখনো দলের সিদ্ধান্তের বাইরে যাইনি। ৪৭ বছর আমি এই সংগঠনের সঙ্গে আছি। আমাদের নেতা বলেছেন- জনগণের সম্পৃক্ততা জনগণের ভালোবাসা যার সঙ্গে থাকবে তিনি তাকে নমিনেশন দেবেন। আমার সঙ্গে জনসম্পৃক্ততা কতটুকু আছে সেটা আজকের প্রচার অভিযানে মানুষের ঢল দেখলে বুঝবেন। আমি মনে করি আমার দল যে সিদ্ধান্ত দেবে সেটা মেনে নেব। কারণ আমরা সবাই ধানের ছড়ার।’

সিলেটের সঙ্গে উন্নয়নবৈষম্য ও বঞ্চনা সব সীমা ছাড়িয়ে গেছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, সবাই দেখছেন সিলেটের সঙ্গে কী বৈষম্য হচ্ছে। গতকালকেও যে একনেকে বাজেট পাশ হয়েছে সেখানেও সিলেটের নাম নেই। বর্তমানে যে বৈষম্য হচ্ছে সেটা থেকে বাঁচতে হলে ধানের ছড়ার বিকল্প নেই। কারণ যখন বিএনপি ক্ষমতায় গেছে তখনই সিলেটের উন্নয়ন হয়েছে।

পদযাত্রায় বিএনপির বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষও অংশ নেন।

বিএনপি সূত্র জানায়, ২০১৮ সালে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে আরিফুল হক চৌধুরী ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হলেও জাতীয় নির্বাচনে ধানের শীষ হেরে যাওয়াকে প্রার্থিতার দুর্বলতা বলে প্রকাশ হয়। এ নিয়ে দলীয় অভ্যন্তরে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছিল। সেই নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর ব্যর্থতার বিষয়টি তুলে ধরে আগামী জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী বদলেরও দাবি ছিল।

মর্যাদার আসন হিসেবে সিলেট-১ নির্বাচনি এলাকায় বিএনপি দলীয় প্রার্থীর নিশ্চিত বিজয়ে আরিফুল হক চৌধুরী গত মে মাসে যুক্তরাজ্য সফর করে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে এ দাবিটি তুলে ধরে ‘ভিআইপি’ প্রার্থীকে সিলেটে মনোনয়ন দেওয়ার প্রস্তাব করেন।

এ প্রস্তাবে তিনি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান অথবা জিয়া পরিবার থেকে সিলেটের সন্তান হিসেবে ডা. জুবাইদা রহমানকে (তারেক রহমানের স্ত্রী) সিলেট-১ আসনে প্রার্থী হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। প্রায় পাঁচ মাস অপেক্ষার পর এ প্রস্তাবটি গত রোববার অনুষ্ঠিত সিলেট বিভাগের সম্ভাব্য প্রার্থীদের সাক্ষাৎকারে আরিফুল হক চৌধুরী উপস্থিত হয়ে সিলেট-১ আসনে তার প্রার্থিতার বিষয়টি উপস্থাপন করেন।