Image description
► পেতে পারে ২০ থেকে ২৫ আসন ► বেরিয়ে যাচ্ছে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি) এবং বাংলাদেশ রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনকে নিয়ে গঠিত হয়েছিল ‘গণতান্ত্রিক সংস্কার জোট’। তবে নীতিগত সিদ্ধান্তের সমন্বয়হীনতা,   আন্দোলনের কর্মসূচি না থাকা ও লিডারশিপের মতো গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা না হওয়ায় জোট থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন।

জোটের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এনসিপি আসন সমঝোতা নিয়ে দরকষাকষি করছে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে। এ ক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক সংস্কার জোটের অন্য শরিক দল রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন আপত্তি জানালেও জোটের অন্য দল এবি পার্টির পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। তাতেই জোটটির মধ্যে ফাটল ধরেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনসিপির কয়েকজন নেতার সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়। তাঁরা জানান, জামায়াতের সঙ্গে ৫০টি আসন নিয়ে দরকষাকষি হচ্ছে। তবে জামায়াতের পক্ষ থেকে এনসিপিসহ শরিকদের ২০ থেকে ২৫টি আসন দেওয়ার বিষয়ে প্রাথমিক সম্মতি জানানো হয়েছে। এ ক্ষেত্রে এনসিপির চাওয়ার ভিত্তিতে আসন ছাড়ের বিষয়ে দুই দলের কয়েকবার বৈঠক হলেও এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি উভয় দল। তবে রাষ্ট্র সংস্কারের পক্ষের দুই দলের মত এক হওয়ায় ‘এনসিপি-জামায়াত জোট’ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছেন।

কিন্তু জামায়াতের থেকে প্রস্তাবিত ২০-২৫ আসনের বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত নয় বলে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার। তিনি বলেন, ‘জামায়াতের সঙ্গে আসন সমঝোতা ও জোটের বিষয়ে আলোচনা এখনো প্রক্রিয়াধীন। চূড়ান্ত ফলাফল পেতে আরও দুই দিন অপেক্ষা করতে হবে।’

এদিকে জামায়াত-এনসিপি জোট নিয়ে আলোচনা-সমালোচনায় সরগরম রাজনৈতিক পাড়া। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়করা সমালোচনা করে লিখছেন, ‘জামায়াতের সঙ্গে এনসিপির জোট হলে তরুণদের রাজনীতির কবর রচিত হবে।’

সাবেক সমন্বয়ক আবদুল কাদের তাঁর ফেসবুকে স্ট্যাটাসে লিখেন, ‘তারুণ্যের রাজনীতির কবর রচিত হতে যাচ্ছে। এনসিপি অবশেষে জামায়াতের সাথেই সরাসরি জোট বাঁধতেছে। সারা দেশে মানুষের, নেতা-কর্মীদের আশা-আকাক্সক্ষা জলাঞ্জলি দিয়ে গুটিকয় নেতার স্বার্থ হাসিল করতেই এমন আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামীকাল এ জোটের ঘোষণা আসতে পারে। আর এর মধ্য দিয়ে কার্যত এনসিপি জামায়াতের গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।’

এদিকে এনসিপির জোট থেকে বেরিয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বাংলাদেশ যেভাবে বিভাজিত হচ্ছে তাতে সংস্কারমূলক নতুন একটি কাঠামো দাঁড় করাতে চেয়েছি। জামায়াত-বিএনপির বাইরে একটি স্বাধীন রাজনৈতিক শক্তি দাঁড় করাতে আমরা কাজ করছিলাম। তাতে সমর্থন জানিয়ে এনসিপি, এবি পার্টি আমাদের সঙ্গে জোটে যাওয়ার প্রস্তাব দেয়। আমরা জোটেও গিয়েছিলাম।

তবে এটি ঘোষণা পর্যন্ত সীমাবদ্ধ ছিল। এখন পর্যন্ত জোটর কোনো ফাংশনও হয়নি। এর মধ্যে শুনতে পাচ্ছি এনসিপি জামায়াতের সঙ্গে আসন সমঝোতা করতে যাচ্ছে। এমন হলে আমরা কখনোই এ আসন সমঝোতার সঙ্গে থাকব না।’ তিনি আরও বলেন, ‘চাইলে শুরু থেকেই আমরা বিএনপির সঙ্গে জোটে থাকতে পারতাম। কিন্তু আমরা চাই দেশে এমন একটি রাজনৈতিক বলয় গড়ে উঠুক, যেটি দলের ঊর্ধ্বে গিয়ে মানুষের কথা বলবে। এ যাত্রায় যারা আমাদের সঙ্গে থাকবে আমরা তাদের নিয়ে এগিয়ে যাব। আর যদি কাউকে না পাই, তাহলে আমরা একাই হাঁটতে থাকব।’ অন্যদিকে জামায়াতের এক সূত্র বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, ‘এনসিপির সঙ্গে এখনো আসন সমঝোতা চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুই দলের জোট হওয়া প্রক্রিয়াধীন।’