ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে আসন সমঝোতা নিয়ে ৮ দলের টানাপড়েনের গুঞ্জন বেশ চাউর হয়েছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। বিশেষ করে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নির্বাচনী জোট তথা আসন সমঝোতা নিয়ে আলোচনাকে কেন্দ্র করে রাজনীতিতে শুরু হয়েছে নতুন মেরূকরণ। এ নিয়ে মিলানো হচ্ছে নানা সমীকরণ। তবে জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নেতৃত্বে পরিচালিত সমমনা আট দলের দায়িত্বশীল নেতারা এ গুঞ্জন মানতে নারাজ। তারা বলেন, হঠাৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ছড়ানো হচ্ছে এসব তথ্য। টানাপড়েন কতিপয় সংবাদমাধ্যমে থাকতে পারে, ৮ দলে নয়।
ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন বলেন, দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর আমরা সমমনা দলগুলো একটা পর্যায়ে উপনীত হয়েছি। দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে ওঠার চেষ্টা করছি। সেক্ষেত্রে আসন সংখ্যা নিয়ে বিরোধ হওয়ার কারণ নেই। তিনি বলেন, এনসিপি’র সঙ্গে আসন সমঝোতার চেষ্টা করা হচ্ছে। সেটা হলে আট দলের পরিধি আরও বাড়বে।
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা জালাল উদ্দীন আহমদ বলেন, আসন সমঝোতার আলোচনায় আমরা অনেক দূর এগিয়েছি। তবে বণ্টনের ক্ষেত্রে খানিকটা আটকে আছি। শীর্ষ নেতাদের আলোচনা সাপেক্ষে অল্প সময়ের মধ্যে সেটার সমাধান হবে।
এনসিপিকে সঙ্গে নেয়ার বিষয়টিকে ইতিবাচক মন্তব্য করে মাওলানা জালাল বলেন, তারা আসলে আমাদের কিছু আসন ছাড়তে হলে ছাড়া হবে। বৃহৎ স্বার্থে সেটা করতে সবাই রাজি আছে।
এদিকে এনসিপি’র সঙ্গে আলোচনা প্রসঙ্গে জামায়াতের নায়েবে আমীর ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো: তাহের বলেন, আমরা অনেক কাছাকাছি পৌঁছেছি। অতিশিগগিরই আলোচনা চূড়ান্ত পর্যায়ে যাবে। তিনি বলেন, ইসলামী আন্দোলনসহ আমাদের রাজপথের আন্দোলনের সঙ্গী সমমনা দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার অগ্রগতি সন্তোষজনক।
তবে আসন সমঝোতা নিয়ে খানিকটা দরকষাকষির সত্যতা স্বীকার করে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, দলের শীর্ষ নেতৃত্বের মাঝে ক্ষোভ আছে। তবে তা জোট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর্যায়ে নয়। বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের অন্য একটি সূত্র জানায়, বুধবার জামায়াতের সঙ্গে মজলিসের প্রতিনিধিদলের বৈঠক হয়েছে। এতে আরও কয়েকটি দলের নেতারা ছিলেন। বৈঠকে খেলাফত মজলিসের পক্ষ থেকে আসনবণ্টন, এনসিপি’র সঙ্গে জোট করলে কী পরিস্থিতি হতে পারে, তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। ওই নেতার মতে, জামায়াত এককভাবে ১৮০ থেকে ২০০টি আসনে নির্বাচন করতে চায়। ইসলামী আন্দোলন চায় ১২০টি আসন। বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস অন্তত ত্রিশটি আসনে নির্বাচন করার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সমমনা ইসলামী দলগুলোর মধ্যে আসন সমঝোতা দু’-একদিনের মধ্যেই চূড়ান্ত হতে পারে বলে লিয়াজোঁ কমিটির দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে। তবে শরিক দলগুলোর জন্য জামায়াতে ইসলামী ঠিক কতটি আসনে ছাড় দিতে চায়, সেটা এখনো জানানো হয়নি।
ওদিকে জামায়াতের সঙ্গে থাকা ৮ দলের আসন সমঝোতায় আরও একাধিক ইসলামী দলের যোগ দেয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। নতুন করে যুক্ত হতে আগ্রহী দলগুলোরও বেশ কিছু আসনের দাবি রয়েছে। সবমিলিয়ে জামায়াতের শরিক দলগুলো মোট ৩৪৮টি আসনের দাবি তুলেছে বলে নিশ্চিত করেছে জামায়াতের দায়িত্বশীল সূত্র। যদিও জাতীয় সংসদের মোট আসন সংখ্যা ৩০০।
প্রায় এক বছর আগে জামায়াত ৩০০ আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে। প্রায় সব প্রার্থী নিজ নিজ আসনে সক্রিয় রয়েছে। তবে নির্বাচনে ওয়ান বক্স পলিসি এবং পাঁচ দফার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সাতটি ইসলামী দল জামায়াতের সঙ্গে এক মঞ্চে আসে। তবে আসন বণ্টনের ক্ষেত্রে মাঠ জরিপকে গুরুত্ব দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সে অনুযায়ী প্রতিটি দলকে নিজ নিজ এলাকায় জনপ্রিয়তা যাচাই করে মূল্যায়ন প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়। ইতিমধ্যে এসব মাঠ জরিপের রিপোর্ট জমা দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
মাঠ জরিপের ভিত্তিতে ইসলামী আন্দোলন ১২০ আসন দাবি করেছে। অন্য ছয় শরিক দল খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত আন্দোলন, নেজামে ইসলাম পার্টি, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপা এবং বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি-বিডিপি মিলে দাবি করেছে ১০০ আসন। সবমিলিয়ে সাত শরিক দল ২২০ আসনের দাবি তোলে। তবে এ দাবির বিষয়ে জামায়াত আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেনি।
জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ড. এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, আসন সমঝোতার ভিত্তিতে নির্বাচনের উদ্যোগের সঙ্গে একমত হয়ে সমমনা একাধিক ইসলামী দল তাদের সঙ্গে যুক্ত হতে চাচ্ছে। তাদেরও কিছু আসনের দাবি রয়েছে। তিনি বলেন, আগের সাত দল ও নতুন তিন দল মিলিয়ে মোট দাবি দাঁড়িয়েছে ৩৪৮টি আসন, যা সংসদের মোট আসন সংখ্যার চেয়েও বেশি। অথচ জামায়াতেরও নিজস্ব প্রার্থী রয়েছে। তিনি জানান, এসব দাবি মূলত প্রত্যাশার জায়গা থেকে তোলা হয়েছে। আসন সমঝোতা নিয়ে আলোচনা অব্যাহত আছে এবং উদার মন নিয়ে সবাই কাজ করছে।