Image description
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২

বর্তমান সময়ে নানা কারণে আলোচিত এক আসনের নাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ-বিজয়নগরের একাংশ)। আর সেখানে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছেন বিএনপি’র সাবেক মহিলা এমপি, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ও গুরুত্বপূর্ণ টকশো ব্যক্তিত্ব ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা। কারণ বিএনপি’র অন্যতম শরিক জমিয়তে ওলামা ইসলামের প্রার্থীকে আসনটি ছেড়ে দেয়ার পরও সেখানে শক্তিশালী স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন তিনি। দলের সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণাকে উপেক্ষা করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন। সঙ্গে রয়েছেন ওয়ার্ড ও ইউনিয়নের বিভিন্ন কমিটির নেতৃবৃন্দ। গত শুক্রবার সন্ধ্যায় গ্রামের বাড়ি বিজয়নগর উপজেলা বুধন্তি ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামে দাদা, দাদিসহ স্বজনদের কবর জিয়ারতের মাধ্যমে সংসদ নির্বাচনের কার্যক্রম শুরু করেছেন। সবশেষে প্রয়াত পিতা অলি আহাদের পথেই হাঁটতে শুরু করেছেন রুমিন ফারহানা। তার পিতাও ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে সংসদ নির্বাচন করেছিলেন। 

রুমিন ফারহানার পিতা ভাষাসৈনিক অলি আহাদ। ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে ‘গাভী’ প্রতীকে নির্বাচন করেছিলেন। তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা তাহের উদ্দিন ঠাকুরের  সঙ্গে। রুমিন ফারহানার দাবি, ওই নির্বাচনে অলি আহাদ প্রায় ৪০ হাজার ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন। আর তাহের উদ্দিন ঠাকুর পেয়েছিলেন ২৮ হাজার ভোট। কিন্তু শেখ মুজিবুর রহমান তথা আওয়ামী লীগ তখন ওই ফলাফলকে ছিনিয়ে নিয়েছিল। কৌশলে শেখ মুজিব তখন ফলাফলটা স্থানীয়ভাবে ঘোষণা না দিয়ে ঢাকায় নিয়ে গিয়েছিলেন। পরের দিন ঢাকা থেকে ফলাফল উল্টিয়ে তাহের উদ্দিনকে ৪০ হাজার ভোট দেখিয়ে জয়ী ঘোষণা করা হয়। আর ২৮ হাজার ভোট দেখিয়ে অলি আহাদকে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ঘোষণা করা হয়। ভাষাসৈনিক অলি আহাদের স্বপ্নকে গভীর ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে কবর দেয়া হয়েছিল। পিতার সেই দুঃখ ব্যথা ও বেদনার ইতিহাস পরবর্তী সময়ে রুমিন ফারহানা জানেন।

কষ্টের সেই ইতিহাস বুকে ধারণ করেই রাজনীতির মাঠে হাটিহাটি পা পা করে চলছিলেন রুমিন। চড়াই উৎরাই ও নানা প্রতিকূলতা পার করে বিএনপিতে রুমিন ফারহানা একটি অবস্থান করে নেন। নিজের মেধা যোগ্যতা ও কর্মদক্ষতা দ্বারা বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদকের পদ পান। দলের জন্য মাঠে ময়দানে রাজপথে ও টিভি টকশোতে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে থাকেন। সরকারের দমনপীড়ন, জুলুম-নির্যাতন সহ্য করেও দলের জন্য থামেনি তার লড়াই সংগ্রাম। পিতার ও নিজের জন্মভূমির মানুষের ম্যান্ডেট নিয়ে সংসদ সদস্য হওয়ার স্বপ্ন দেখছিলেন। স্বপ্ন দেখছিলেন এমপি নির্বাচিত হয়ে নিজের এলাকায় প্রয়াত পিতার ইচ্ছেগুলো পূরণ করার। সেই লক্ষ্যে গত দেড় যুগ আগ থেকেই তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে কাজ শুরু করেন। বাসা ভাড়া নিয়ে নির্বাচনী এলাকার মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে থাকেন। নিয়মিতভাবে দলীয় কর্মসূচি, সভা-সেমিনার, উঠান বৈঠক ও গণসংযোগ করতে থাকেন। নির্বাচনী এলাকার নারী-পুরুষের কাছে হয়ে উঠেন প্রিয়ভাজন। 

এক যুগেরও অধিক সময় চষে বেড়ানো ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসন থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের ঘোষণা দিতে থাকেন। দলীয় নেতাকর্মীরাও আশাবাদী ছিলেন দল এই আসনে তাকেই মনোনীত করবেন। কিন্তু জোটের সঙ্গে আসন ভাগাভাগিতে গণেশ উল্টে গেল। শতভাগ নিশ্চিত ধানের শীষের এই আসনে জোটের প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়ার বিষয়টি চারিদিকে চাউর হতে লাগলো। মন ভেঙে চুপসে গেলেন স্থানীয় বিএনপি ও দলটির অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। মন খারাপ করেননি রুমিন ফারহানা। তিনি বলতে থাকেন, জনগণের ইচ্ছার বাস্তবায়ন করতে এই আসনে আমি নির্বাচন করবোই। উনার এমন সব ইশারা ইঙ্গিতেই সমর্থকরা বুঝেছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার দিকে এগুচ্ছেন তিনি। পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় বিএনপি জমিয়তের মাওলানা জুনাঈদ আল হাবিবকে এই আসনে তাদের জোটের প্রার্থী ঘোষণা দেন। দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি তিনি। উনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার অষ্টগ্রাম ইউনিয়নের অষ্টগ্রামের বাসিন্দা। গত সোমবার তার পক্ষে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে। প্রতীক খেজুরগাছ। এরপর গত বুধবার রুমিন ফারহানার পক্ষে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবুবকর সরকারের কাছ থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন উপজেলা যুবদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আলী হোসেন। 

রুমিন ফারহানা মানবজমিনকে বলেন, গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দাদা-দাদিসহ স্বজনদের কবর জিয়ারতের মাধ্যমে গত বৃহস্পতিবার থেকে নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু করেছি। গত ১৭টি বছর মানুষের অধিকারের জন্য লড়াই করেছি। অনিয়ম অন্যায় অবিচার ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছি। দেশের ও নির্বাচনী এলাকার মানুষের দোয়া চাই। আমার নির্বাচনী কার্যক্রম চলবে। তিনি নির্বাচনী এলাকার মানুষের উদ্দেশ্যে বলেন, ১৭ বছর কে বা কারা তাদের হয়ে সব জায়গায় কথা বলেছে। ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটের মাধ্যমে তারা সেই জবাব দিবেন। মনোনয়নে আমার প্রতি অন্যায় করা হয়েছে। দাবি ছিল আমার একটাই, সেখানে জোটের প্রার্থী দিয়েন না। কিন্তু সেই দাবি বা আকুতির স্থান তাদের কাছে হয়নি। আল্লাহর রহমতে ভোট প্রয়োগের মাধ্যমে মানুষ আমাকে অসম্মানের জবাব দেবেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আমার প্রতীক হতে পারে হাঁস।