১৯ বছরেরও অধিক সময় পর বাবা সাবেক শহীদ প্রসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারত করলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরস্থ জিয়া উদ্যানের সামনে রাস্তায় বাস থেকে নেমে পায়ে হেঁটে কবরের পাশে যান তিনি। এরপর কবর জিয়ারত করেন। এর আগে ২০০৬ সালের ১ সেপ্টেম্বর বিএনপি প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে বাবা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছিলেন তারেক রহমান। সে সময় তিনি বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব পদে ছিলেন। তারেক রহমানকে একনজর দেখতে জিয়া উদ্যানেও হাজার হাজার মানুষ জড়ো হন। তারেক রহমান কার্যত দেশের রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু এবং মানুষের আশ্রয়স্থলে পরিণত হয়ে গেছেন।
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের কবরে তারেক রহমানের আসা উপলক্ষে সকাল থেকেই ঢাকার শেরে বাংলা নগরের জিয়া উদ্যান ও আশপাশের এলাকায় হাজার হাজার মানুষ ভীড় করেন। প্রিয় নেতা তারেক রহমানকে এক নজর দেখার জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা জিয়া উদ্যান, সংসদ ভবনের আশপাশের রাস্তায় উৎসুক জনতা আপেক্ষা করেন। এ সময় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের কয়েক হাজার নেতা-কর্মীর উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। কারও হাতে ছিলো দলীয় পতাকা, কেউ ব্যানার ও পোস্টার হাতে নিয়ে মিছিল নিয়ে এসে একসঙ্গে জড়ো হোন। এ সময় নেতাকর্মীরা সেøাগান ধরেন- ‘এক জিয়া লোকান্তরে, লক্ষ জিয়া ঘরে ঘরে, আজকের এই দিনে, জিয়া তোমায় মনে পড়ে, তারেক রহমান বীরের বেশে, আসছে ফিরে বাংলাদেশে।’
সরেজমিনে দেখা যায়, দুপুরের আগেই জিয়া উদ্যানসংলগ্ন রাস্তাগুলোতে জনসমাগম বাড়তে থাকে। নিরাপত্তাজনিত কারণে সাধারণ মানুষ ও বিএনপির নেতা-কর্মীদের নির্দিষ্ট স্থানে অবস্থান করার নির্দেশনা দেওয়া হয়। আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী ও স্বেচ্ছাসেবকদের তৎপরতায় পরিস্থিতি ছিল নিয়ন্ত্রিত। তারেক রহমানের আগমন উপলক্ষে শেরে বাংলা নগর এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। জিয়ার কবর ও আশপাশের সড়কে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়। প্রবেশপথগুলোতে তল্লাশিচৌকি বসানো হয়। দলীয় স্বেচ্ছাসেবকেরাও শৃংখলা রক্ষায় দায়িত্বপালন করেন।
তারেক রহমান প্রথমেই বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা ও ২৪-এর গণ অভ্যুত্থানে নিহতদের রুহের শান্তি কামনা করে দোয়া করেন। পরে বাবার কবরের সামনে দাঁড়িয়ে দু›হাত তুলে আল্লাহ- তায়া’লার দরবারে মোনাজাত করেন তারেক রহমান। কবরের সামনে কিছু সময় তিনি নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন।
এর আগে বাদজুম্মা গুলশানের বাসা থেকে বাবার করবের উদ্দেশ্য রওয়ানা দেন তারেক রহমান। লাল সবুজ রঙে সাজানো ‘সবার আগে বাংলাদেশ’ নামক বিশেষ নিরাপত্তা বেষ্টিত বাসে চড়ে তিনি শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারত করতে আসেন। চেয়ারপারসন সিকিউরিটি ফোর্সের সিএসএফ) সদস্যদের পাশাপাশি পুলিশ, র্যাব, আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বাসাটির নিরাপত্তায় ছিল।
এ সময় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদসহ অন্যান্য শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
গণমানুষের নেতা তারেক রহমান গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ বিমানের বিজি-২০২ ফ্লাইটে দেশে ফেরেন। ঢাকা বিমানবন্দর থেকে পূর্বাচলের ৩০০ ফিটে যেতে যানজট না থাকলে আধা ঘণ্টার বেশি সময় লাগে না। রাস্তার দুই ধারে নেতা-কর্মী-সমর্থকদের সারি, মানুষের ঢল নামে। কেবল নেতা-কর্মীর পাশাপাশি অনেকেই হাজির হন ১৭ বছর পর দেশে ফেরা তারেক রহমানকে একপলক দেখার কৌতূহল নিয়ে, কেউবা প্রত্যাবর্তনের একটি স্মরণীয় দিনের সাক্ষী হতে। বিমানবন্দর থেকে পূর্বাচলের সংবর্ধনা মঞ্চ পর্যন্ত সাড়ে ছয় কিলোমিটার পথ লোকারণ্য হয়ে ওঠেছিল।
জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন : বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানেরর পক্ষে মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় মহান জাতীয় স্মৃতিসৌধের বেদীতে এ শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। গতকাল শুক্রবার বিএনপির মিডিয়া সেলের এক পোস্টে এ তথ্য জানানো হয়।
পোস্টে বলা হয়েছে, মহান জাতীয় স্মৃতিসৌধের বেদীতে নিয়ম অনুযায়ী সূর্যাস্তের আগে পৌঁছানো সম্ভব না হওয়ায় বিকাল ৫টা ৬ মিনিটে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষে মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর রায় ও ড. আব্দুল মঈন খান, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমানউল্লাহ আমান ও লুৎফুজ্জামান বাবর, ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু আশফাক এবং সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট নিপুণ রায় চৌধুরী। এছাড়া আররো উপস্থিত ছিলেন ডা. দেওয়ানা মোহাম্মদ সালাউদ্দিন, তমিজউদদীন, ইয়াসিন ফেরদৌস মুরাদ, আইয়ুব খান, মেজর জেনারেল (অব.) ফজলে এলাহী আকবর এবং বিএনপি মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান।