রাজউকের পূর্বাচল প্রকল্পে প্লট বরাদ্দে অনিয়ম, ক্ষমতার অপব্যবহার ও প্রতারণার অভিযোগে দায়ের করা তিন মামলার রায় ঘোষণার সময় শক্ত ভাষায় পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মামুন। বিচারক বলেন, ‘শেখ হাসিনা একজন পলিটিক্যাল লিডার, চারবারের প্রধানমন্ত্রী। তার কেন এত টাকা লাগবে, এত সম্পদ লাগবে? তার সম্পদের প্রতি এত লোভ!’
পর্যবেক্ষণে আরও বলেন, রাজউক ও গৃহায়ন মন্ত্রণালয় অন্যায় করেছে। শেখ হাসিনা প্রতারণার সঙ্গে জড়িত। তিনি না পেলে কোনো সৎ লোক হয়তো প্লট পেতেন।
গত বছরের ৫ সেপ্টেম্বর গণমাধ্যমের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে পূর্বাচলে শেখ হাসিনার নামে প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজউকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের যোগসাজশে পূর্বাচলের কূটনৈতিক জোনে নিজের ও পরিবারের সদস্যদের নামে মোট ৬০ কাঠার (প্রতি জনে ১০ কাঠা) ছয়টি প্লট বরাদ্দ নেন। অনুসন্ধান ও তদন্ত শেষে দুদকের পক্ষ থেকে ছয়টি মামলা করা হয়। এর মধ্যে গতকাল তিনটি মামলার রায় হয়।
রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেন, রাজউকের প্লট বরাদ্দ নিয়ে শেখ হাসিনা আইন মানেননি। রাজউকের প্লট বরাদ্দের জন্য নির্ধারিত ফরমে আবেদন করতে হয়। কিন্তু শেখ হাসিনা তা করেননি। ২০২২ সালের ১৮ জুলাই শেখ হাসিনাকে প্লট দেওয়ার জন্য একটি ফাইল খোলা হয়। ২৬ জুলাই রাজউকের বোর্ড সভায় প্রাথমিকভাবে তাকে প্লট বরাদ্দের অনুমোদন দেওয়া হয়। ২৭ জুলাই শেখ হাসিনাকে প্লট অনুমোদনের বিষয়টি জানানো হয়। একই সঙ্গে শেখ হাসিনাকে, তার ও তার পরিবারের নামে রাজধানীর কোথায় সরকারি বা আধাসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়নি মর্মে হলফনামা জমা দিতে বলা হয়।
বিচারক বলেন, শেখ হাসিনা রাজউকে একটি হলফনামা দাখিল করেন। ওই হলফনামায় তিনি তার স্বামীর নামে ১৯৭৩ সালে প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল তা গোপন করে শুধু তার নামে রাজধানীর কোথাও প্লট নেই মর্মে হলফনামা দাখিল করেন। এ ছাড়া ওই হলফনামায় কোনো সাক্ষী, আইনজীবী বা নোটারি করা হয়নি। হলফনামা নোটারি না করলে তার আইনগত কোনো ভিত্তি থাকে না। তিনি সাধারণ কোনো নাগরিক নন। ওনার লিগ্যাল অ্যাডভাইজার, ল মিনিস্টার, অ্যাটর্নি জেনারেল ছিলেন।
বিচারক তার পর্যবেক্ষণে আরও উল্লেখ করেন, ২০২২ সালের ৩ আগস্ট রাজউক শেখ হাসিনার নামে চূড়ান্তভাবে প্লট বরাদ্দ অনুমোদন করে। এরপর তাকে আরেকটি হলফনামা দিতে বলা হয়। এবারও তিনি একইভাবে হলফনামা দাখিল করেন। দাখিল করা দুটো হলফনামার একটিরও আইনগত কোনো ভিত্তি নেই।
বিচারক আরও বলেন, প্লট বরাদ্দের আবেদন না করে এবং আইনানুযায়ী বৈধ হলফনামা দাখিল করা ছাড়া পূর্বাচলের ১৫১১ নম্বর প্লটের দখল বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য ২০২২ সালের ১২ সেপ্টেম্বর ঠিকই আবেদন করেন। এতে বোঝা যায়, শেখ হাসিনার সম্পদের প্রতি লোভ ছিল। প্লট বরাদ্দ পেতে তিনি আইন মানেননি। আদালত প্লট বরাদ্দে কোটা বরাদ্দ বাতিলেরও সুপারিশ করেছেন।