ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে সারা দেশে প্রচারণায় নামার প্রস্তুতি শুরু করেছে বিএনপি। রাষ্ট্রক্ষমতায় গেলে দেশ পুনর্গঠনে কর্মপরিকল্পনা, আগামী দিনে দল কী বাস্তবায়ন করতে চায়, কী পরিবর্তন আনা হবে, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য লিফলেটের মাধ্যমে তুলে ধরবে দলটি। এর আদলে চূড়ান্ত করা হবে ইশতেহার। গত সোমবার বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এমন আলোচনা হয়েছে। এ ছাড়া প্রার্থী পুনর্বিবেচনার ব্যাপারেও বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানিয়েছে এসব তথ্য।
রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সোমবার রাত ৯টার দিকে এই বৈঠক শুরু হয়ে শেষ হয় ১১টার দিকে। এতে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমদ, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, বেগম সেলিমা রহমান, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ (বীরবিক্রম) ও ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন। বৈঠকে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনা করেছেন স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। তবে এ মুহূর্তে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে বিদেশে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে কোনো আলোচনা হয়নি। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রাষ্ট্রক্ষমতায় গেলে দেশ পুনর্গঠনে প্রতিটি সেক্টরে কর্মপরিকল্পনা দেশবাসীর সামনে তুলে ধরবে বিএনপি। লিফলেটে দেশের উন্নয়নে কর্মপরিকল্পনা, নাগরিকদের নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে, রাষ্ট্র মেরামতে ৩১ দফাসহ নানা প্রতিশ্রুতি তুলে ধরা হবে। শিক্ষা খাত, কর্মসংস্থান, স্বাস্থ্য খাত, কৃষি ও খাদ্য, শিল্প খাত, ব্যবসাবাণিজ্য, ক্রীড়া, প্রশাসন, দুর্নীতি প্রতিরোধসহ প্রতিটি সেক্টরকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা আলাদা আলাদা লিফলেট তুলে ধরা হবে। প্রতিটি এলাকার সুবিধা-অসুবিধা, উন্নয়ন এবং জনগণের চাওয়া পাওয়া প্রধান্য পাবে লিফলেটে। কেন্দ্রীয়ভাবে প্রচার ও গণসংযোগে নামার পরিকল্পনা রয়েছে হাইকমান্ডের। তরুণ প্রজন্ম ও নারী ভোটারের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য লিফলেটে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হবে। এসব লিফলেট দেশের প্রতিটি ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়ার জন্যও নেতা-কর্মীদের প্রতি বিশেষ নির্দেশ থাকবে। তফসিল ঘোষণার আগেই লিফলেটের কাজ শেষ করবে দলটি। এরপর শুরু হবে আনুষ্ঠানিক প্রচারণা।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘বিএনপি ক্ষমতায় গেলে বিনামূল্যে প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা চালু করবে। এক কোটি মানুষকে চাকরি দেওয়া হবে- এটি আমরা হোমওয়ার্ক করেই বলেছি। দেশকে নিয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা মানুষের কাছে পৌঁছাতে হবে এবং তা বাস্তবায়ন করতে হবে।’ সূত্র আরও জানায়, এবারের ইশতেহার হবে বিএনপির ঘোষিত ৩১ দফা, জুলাই সনদ এবং সাম্প্রতিক রাজনৈতিক দিকনির্দেশনার সমন্বয়ে। শাসনব্যবস্থা পুনর্গঠন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, প্রশাসনের বিকেন্দ্রীকরণ, মানবাধিকার রক্ষা ও দুর্নীতিবিরোধী কাঠামো শক্তিশালীকরণ ইশতেহারের কেন্দ্রীয় বিষয় হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। দলের নীতিনির্ধারকরা জানিয়েছেন, জনগণকে রাষ্ট্রের মালিকানা ফিরিয়ে দেওয়া এবং দলীয় প্রভাবমুক্ত প্রশাসন গড়ে তোলাই হবে বিএনপির অঙ্গীকার। শিক্ষা খাতে বাজেট বৃদ্ধি এবং স্কুল থেকেই ব্যবহারিক ও কারিগরি শিক্ষা চালু করতে চায় বিএনপি। যেমন স্কুল পর্যায়ে আইটি, খেলাধুলা, আর্ট কালচার, ডেন্টাল হাইজিন, মেডিকেল টেকনিশিয়ান ও অন্যান্য কারিগরি শিক্ষা চালু। প্রাইমারি থেকে ইংরেজি ভাষার পাশাপাশি তৃতীয় ভাষা এবং হাইস্কুল থেকে আরও একটি ভাষা চালুর পরিকল্পনা করছে বিএনপি। দলটি মনে করছে আরবি, জার্মান, ফরাসি, জাপানি ও চীনা ভাষা শেখার সুযোগ পাবেন শিক্ষার্থীরা। এর ফলে বিদেশে গিয়েও কর্মক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারবে।
ক্যাম্পাসে মেধাভিত্তিক ছাত্ররাজনীতির সংস্কৃতি চালু ও নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করা, হলের আবাসনসংকট নিরসন ও বসবাসের উপযোগী করা এবং লাইব্রেরিগুলোকে অনলাইন ও অফলাইনে আধুনিকায়ন করার প্রতিশ্রুতি লিফলেটের মাধ্যমে ভোটারদের সামনে তুলে ধরবে বিএনপি। নারীশিক্ষার প্রসার, দেশবিদেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা ও স্বনির্ভর বাংলাদেশ গড়ে তোলার কথা লিফলেটে তুলা ধরা হতে পারে।
এদিকে অর্ধশতাধিক আসনে মনোনয়নবঞ্চিতদের বিক্ষোভ, মানববন্ধন ও মিছিলের বিষয়টি নিয়েও স্থায়ী কমিটিতে আলোচনা হয়। কোনো কোনো সদস্য বলেন, এত বড় দলে কিছু আসনে এটা হবে স্বাভাবিক। অধিকাংশ আসনেই প্রার্থী এলাকায় গ্রহণযোগ্য ও জনপ্রিয়। তবে কয়েকটি আসনে পুনর্বিবেচনা করা যেতে পারে।