কয়েক দফা ভূমিকম্পের পর হার্ডলাইনে সিলেটের প্রশাসন। ইতিমধ্যে নগরের ২৩টি ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করে তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। এসব ভবনের বিরুদ্ধে শিগগিরই অ্যাকশন শুরু করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে; আইন না মেনে ভবন নির্মাণ করায় সিলেটে অর্ধেক ভবনই ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এজন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন তারা। এ নিয়ে সিলেটের নগর ভবনে বৈঠক হয়েছে। আর ওই বৈঠক থেকে সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশাসনের তরফ থেকে ব্যবস্থা গ্রহণের তাগিদ দেয়া হয়েছে। সিলেটে অতি ঝুঁকিপূর্ণ ২৩টি ভবনের মধ্য রয়েছে; কালেক্টরেট ভবন-৩, সমবায় ব্যাংক ভবন মার্কেট, মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার সাবেক কার্যালয়, সুরমা মার্কেট, সিটি সুপার মার্কেট, মিতালী ম্যানশন, আজমীর হোটেল, মধুবন মার্কেট, মান্নান ভিউ, শুভেচ্ছা-২২৬, চৌকিদেখী ৫১/৩ সরকারি ভবন, নবপুষ্প-২৬/এ, রাজা ম্যানশন, কিবরিয়া লজ, মিতালী-৭৪, মেঘনা-এ-৩৯/২, পাঠানটুলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ওয়ারিছ মঞ্জিল, হোসেইন মঞ্জিল, শাহনাজ রিয়াজ ভিলা, নূরানি-১৪, পৌর বিপণি ও শপিং সেন্টার এবং লেচুবাগান এলাকার প্রভাতী ও শ্রীধরা হাউজ। সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী শাসনের সময় বিশেষজ্ঞদের দিয়ে এই তালিকা করা হয়েছিল। জেলা প্রশাসক সারওয়ার আলম জানান, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোতে অনেকেই এখনো বসবাস বা ব্যবসা করছেন, যা বড় বিপদের আশঙ্কা তৈরি করছে। তিনি বলেন, নাগরিকদের সুরক্ষার স্বার্থেই জরুরিভিত্তিতে ভবনগুলো ভাঙার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সংকীর্ণ রাস্তাগুলোর কারণে দুর্যোগের সময় উদ্ধারকাজ বাধাগ্রস্ত হতে পারে। যা নিয়ে অতিরিক্ত সতর্কতা প্রয়োজন।
এদিকে, ২০১৯ সালের ভূমিকম্পের পর বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে এসব ভবন ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেয়া হলেও অজ্ঞাত কারণে সিলেট সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। সিলেট সিটি করপোরেশনের বৈঠকে শাহ্জালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক মুশতাক আহমেদ বলেন, সিলেটের ৪২ হাজার ভবনের বেশির ভাগই পুরনো ও দুর্বল। মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্পেও বহু স্থাপনা ধসে পড়তে পারে। ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশ ভবনেই নির্মাণ বিধিমালা মানা হয়নি। এদিকে, সিসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রেজাই রাফিন সরকার জানান, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোর বিষয়ে কমিটি কাজ করছে এবং যেসব ভবনে সংস্কারের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল সেগুলোর কাগজপত্র পর্যালোচনা করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেন, খুব শিগগিরই ঝুঁকিপূর্ণ ভবন নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হবে।
কেন ঝুঁকিপূর্ণ সিলেট: ভূমিকম্পের ডেঞ্জার জোনে সিলেটের অবস্থান। পাশেই ডাউকি ফল্ট। এ ফল্ট নড়ে গেলে ভয়ঙ্করভাবে কেঁপে উঠবে সিলেট। এতে নগর পরিণত হতে ধ্বংসস্তূপে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাধারণত বড় ভূমিকম্পের আগে বা পরে এমন দফায় দফায় মৃদু কম্পন হতে পারে। ২০২১ সালের ২৯শে মে একদিনে চারবার এবং ২৪ ঘণ্টায় ৭ বার ভূমিকম্প হয়েছিল সিলেটে। আর সিলেট থেকে খুব বেশি দূরে নয় রাজধানী ঢাকা। ৬ মাত্রার বেশি ভূমিকম্প হলে প্রভাব পড়বে রাজধানীসহ দেশের অনেক অঞ্চলেই। ভূতাত্ত্বিক জরিপ অনুযায়ী; এ অঞ্চলে ১৮৯৭ এবং ১৯৮০ সালে বড় ধরনের ভূ-কম্পন অনুভূত হয়। এ ছাড়াও নিয়মিতই মৃদু ও স্বল্পমাত্রার ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে সিলেট। তবে ২০২১ সালে ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে ৭ বার ভূ-কম্পন সবচেয়ে বেশি আতঙ্ক ছড়িয়েছিল। সিলেট সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, ২০২১ ও ২২ সালে কয়েক দফায় ভূমিকম্পের পর ঝুঁকি মোকাবিলায় কিছু উদ্যোগ নিয়েছিল সিলেট সিটি করপোরেশন। সিডিএমপি জরিপ চালিয়ে ঘোষণা করা হয়- সিলেটে বড় ভূমিকম্প হলে ৩০ হাজারের বেশি ভবন ধসের আশঙ্কা রয়েছে। পাশাপাশি নতুন নির্মিত দুই শতাধিক ভবন নির্মাণে ফায়ার সার্ভিসের ছাড়পত্র না নেয়ায় দুর্যোগ ঝুঁকিতে রয়েছে এগুলো।