Image description
জোট ও একক নির্বাচন

নির্বাচন সামনে রেখে এখনো দ্বিধা-দ্বন্দ্বে জাতীয় নাগরিক পার্টি- এনসিপি। দলটি এককভাবে নির্বাচন করবে নাকি কোনো জোটে যুক্ত হবে এ নিয়ে এখনো অবস্থান পরিষ্কার হয়নি। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে সামনে এ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন নেতারা। দলটির নেতারা এককভাবে নির্বাচন করার কথা বললেও সম্ভাব্য রাজনৈতিক সুবিধা বিবেচনায় কয়েকটি রাজনৈতিক দল নিয়ে জোটবদ্ধ হওয়ার পরিকল্পনাও আছে নেতাদের। এনিয়ে বিভিন্ন সময়ে বৈঠকও করেছে তারা। দলগুলোর মধ্যে রয়েছে- আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি), রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন, ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশসহ আরও বেশ কয়েকটি দল। জোট গঠনের আলোচনায় এরই মধ্যে এবি পার্টি, এনসিপি, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন, ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশ জোট গঠনের তৎপরতা শুরু করেছে বলে জানা গেছে। একইসঙ্গে যেসব দল এই জোট গঠনের বিষয়ে ইতিবাচক, সেই দলগুলোও এসব আলোচনা ও  কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছে। গণঅধিকার পরিষদ, নাগরিক ঐক্য, এবি পার্টি, গণতন্ত্র মঞ্চে থাকা দলগুলোর সঙ্গেও অনানুষ্ঠানিক আলোচনা হচ্ছে।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর ছাত্রনেতাদের নেতৃত্বে গঠিত দল এনসিপি শুরু থেকেই সাংগঠনিক প্রস্তুতিতে জোর দিয়ে আসছে। ইতিমধ্যে ১০ সদস্যবিশিষ্ট নির্বাচন পরিচালনা কমিটি এবং ১৬টি উপ-কমিটি গঠনের মাধ্যমে নির্বাচনী কার্যক্রমে গতি এনেছে দলটি। প্রতীক-সংক্রান্ত জটিলতায় কিছুটা দেরি হলেও মনোনয়ন ফরম বিক্রি ও প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার নিয়ে এখন ব্যস্ত সময় পার করছে এনসিপি’র কেন্দ্রীয় নেতাকর্মীরা। ১ হাজার ৪৮৪ জন মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন- যা নতুন দলের জন্য অভাবনীয় সাড়া।

দলীয় সূত্র বলছে, যে নেতারা আগে থেকেই এলাকায় সক্রিয়, তাদের মনোনয়ন প্রায় নিশ্চিত। অন্যদিকে বিভিন্ন পেশার সৎ, পরিচ্ছন্ন ও জনসম্পৃক্ত ব্যক্তিদেরও গুরুত্ব দিচ্ছে এনসিপি। ১০টি সাংগঠনিক বিভাগে ১০টি আলাদা বোর্ড মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার নিচ্ছে। একই আসনে একাধিক হেভিওয়েট থাকলে আগে সাক্ষাৎকারে ডাকা হচ্ছে। সব ঠিক থাকলে চলতি মাসেই ১০০ থেকে ১৫০ আসনে প্রথম ধাপের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করবে দলটি।

এর আগে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, আমরা এককভাবে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। সে লক্ষ্যে সবক’টি আসনেই শাপলা কলির জন্য প্রার্থী দেয়ার কাজ করছি। সমঝোতা বা জোট রাজনৈতিক বা আদর্শিক জায়গা থেকে হতে পারে। জুলাই সনদ ও আমাদের সংস্কারের দাবিগুলোর সঙ্গে যদি কোনো দল ঐক্যবদ্ধ বা সংহতি প্রকাশ করে, সেক্ষেত্রে জোটের বিষয়টি বিবেচনা করা হতে পারে। কিন্তু আমরা এখন পর্যন্ত এককভাবেই এগোচ্ছি।
সূত্র জানায়, মনোনয়নপ্রত্যাশীদের ক্ষেত্রে অতীত কর্মকাণ্ড, সামাজিক অবস্থান, নির্বাচনী এলাকার পরিকল্পনা ও প্রচারণাসহ কৌশলগতভাবে বিভিন্ন বিষয় যাচাই-বাছাই করছে এনসিপি।

২৪ দফা কর্মসূচিকে সামনে রেখে এনসিপি নির্বাচনী ইশতেহার তৈরি করছে। নতুন সংবিধান, সেকেন্ড রিপাবলিক, জুলাই অভ্যুত্থানের বিচার, গণতন্ত্র পুনর্গঠন, বিচার ও প্রশাসনিক সংস্কার, দুর্নীতি দমন, তারুণ্য কর্মসংস্থান, গণমাধ্যম স্বাধীনতা, শিক্ষা-স্বাস্থ্য অর্থনীতির রূপান্তরসহ একটি পরিবর্তনের ঘোষণার আঙ্গিকে কাজ করেছে দলটি।

নির্বাচনকে সামনে রেখে কূটনীতিকদের সঙ্গেও সক্রিয় যোগাযোগ রেখেছে এনসিপি। আন্তর্জাতিক মিশন বিষয়ক উপ-কমিটি নিয়মিত বিদেশি প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করছে-নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য করতে কী কী প্রয়োজন, সে বিষয়েও তাদেরকে ব্রিফ করছে।
নির্বাচনী মাঠে আরও একটি বিশেষ উদ্যোগ হচ্ছে পোলিং এজেন্ট প্রশিক্ষণ। আন্তর্জাতিক সংস্থা ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের সহায়তায় দলের ২০ জন নেতা প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। তারা সারা দেশে পোলিং এজেন্টদের দায়িত্ব, সতর্কতা ও নির্বাচনের দিনের কাজ নিয়ে প্রশিক্ষণ দেবেন। অসচ্ছল প্রার্থীদের জন্য ক্রাউড ফান্ডিংয়ের উদ্যোগও নিয়েছে দলটি। 

এসব বিষয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম সদস্য সচিব মুশফিক উস সালেহীন মানবজমিনকে বলেন, আমরা ৩০০ আসনে প্রার্থী দেয়ার বিষয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছি। এ লক্ষ্যে আমরা মনোনয়ন ফরম বিক্রি করেছি। গত কয়েকদিন সাক্ষাৎকারও নেয়া হয়েছে মনোয়নপ্রত্যাশীদের। এগুলোর যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। যাচাই-বাছাই শেষ হলে আমরা প্রার্থী ঘোষণার কাজ শুরু করবো। সেভাবেই এগোচ্ছি আমরা। 

তিনি বলেন, জোট গঠন আলোচনার বিষয়। এটি চলমান রয়েছে। আলোচনা ফলপ্রসূ হলে জোট গঠন হবে। এ বিষয়ে এখনো আলোচনা চলমান, যখন সিদ্ধান্ত গ্রহণের মতো জায়গায় যাবে। তখনই আত্মপ্রকাশ করা হবে। এখনই এ বিষয়ে কিছু বলা যাচ্ছে না।