হঠাৎ করেই সিলেট-১ আসন চেয়ে বসেছিলেন সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। এ নিয়ে নানা নাটকীয়তা। আরিফের চাওয়ায় যুক্তি ছিল। তিনি নগরের সাবেক দু’বারের মেয়র। এ আসনে ভোট রয়েছে তার। তবে, এ আসনের বিএনপি’র মনোনীত প্রার্থী খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির টলেননি। পরিস্থিতি তার জন্য বিব্রতকর থাকলেও ঠাণ্ডা মাথায় ট্যাকল দিয়েছেন। অবশেষে মত পরিবর্তন হলো আরিফের। সিলেট-৪ আসনে নির্বাচন করার মনস্থির করলেন তিনি। যদিও এ আসনে এখনো তার প্রার্থিতা দলীয়ভাবে ঘোষণা করা হয়নি। মাঠে আছেন আরও কয়েকজন প্রার্থী। বসে নেই আরিফুল হক চৌধুরী। আটঘাট বেঁধেই নেমেছেন ভোটের মাঠে। ইতিমধ্যে তাকে নিয়ে ভোটের মাঠে আবহ তৈরি হয়েছে। সিলেটের বিএনপি’র রাজনীতিতে মুক্তাদির ও আরিফের টানাপড়েন আপাতত কমেছে। কেউ কারও বিরুদ্ধে নয়, ধানের শীষের বিজয়ের জন্য তারা ঝাঁপিয়ে পড়েছেন ভোটের মাঠে। তাদের এই জোরালো প্রচারণায় বিএনপি’র নেতাকর্মীরাও দলে দলে প্রচারণায় নামছেন। বিএনপি’র চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির সিলেট-১ আসনের বিএনপি’র মনোনীত প্রার্থী। নাম ঘোষণার পূর্ব থেকেই মুক্তাদির এ আসনে মনোনয়ন প্রতিযোগিতায় এগিয়ে ছিলেন। এর কারণও ভিন্ন।
মুক্তাদিরের সঙ্গে সিলেট বিএনপি’র সব কমিটির নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ। তার নেতৃত্বেই চলছে জেলা ও নগর বিএনপি’র কার্যক্রম। সবাই তাকে মানেন। ফলে মুক্তাদিরকে ঘিরে ভোটের মাঠে নেতাকর্মীদের উৎসাহ উদ্দীপনার কমতি ছিল না। দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করার আগেই আনুষ্ঠানিকভাবে সিলেটে ধানের শীষের প্রচারণা শুরু করেছিলেন খন্দকার মুক্তাদির। এরপর থেকে মাঠে বিরামহীনভাবে কাজ করছে। প্রতিদিন সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত তাকে প্রচারণায় থাকতে হচ্ছে। বিশেষ করে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ভোটারদের নিয়ে নির্বাচনী সমাবেশ করছেন। এতে মিলছে বিপুল ছাড়া। তার পক্ষে নেতাকর্মীরাও ঘরে ঘরে ধানের শীষের দাওয়াত পৌঁছে দিচ্ছেন। সঙ্গে থাকছে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঘোষিত ৩১ দফার লিফলেট। সিলেটকে নিয়ে মুক্তাদিরের বড় পরিকল্পনা। ভোটের মাঠে হাঁটতে গিয়ে পদে পদে মিলছে বঞ্চনার চিহ্ন। সদর উপজেলায় এখনো লাগেনি কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন। সিলেট নগরের বর্ধিত অংশের ১৫টি ওয়ার্ড গ্রামই রয়েছে। নগরের নানা সমস্যা। যোগাযোগ, পানি সংকটসহ নানা সমস্যায় মানুষ জর্জরিত। বন্যা এলে ডুবে নগর। শুষ্ক মৌসুমে পানির জন্য হাহাকার।
শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ নানা বিষয়ে সিলেটের উন্নয়নের সূচক নিম্নগামী। কী করতে হবে সিলেটকে। এটি এখন জানতে চান তিনি। এজন্য ভোটারদের কাছে প্রশ্ন ছুড়েছেন- ‘কেমন সিলেট চান’। এ প্রশ্নে উত্তর এখন সংগ্রহ করছেন তিনি। তার এই এক থিওরিতে ভোটাররা সম্পৃক্ত হচ্ছেন তার নির্বাচনী বহরে। ভোটের আমেজ ফিরছে সিলেট নগরে। আর সেটি এবার মুক্তাদিরের হাত ধরেই। ইতিমধ্যে তার বিরামহীন প্রচারণায় নজর কেড়েছে সিলেটবাসীর। ঘনিষ্ঠ বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন- তফসিলের আগেই খন্দকার মুক্তাদির এবং বিএনপি’র নেতাকর্মীরা সিলেট-১ আসনের মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে যাচ্ছেন। এতে করে মানুষ নির্বাচনী উৎসবে শরিক হচ্ছে। সিলেট-৪ আসনে এখনো দলীয় মনোনয়ন না পেলেও বিএনপি’র চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বসে নেই। দলের অন্য প্রার্থীরাও মাঠে কাজ করছেন। কিন্তু আরিফের তাতে ভ্রুক্ষেপ নেই। আরিফ হাঁটছেন আরিফের মতোই। ভোটের মাঠে নামার আগেই বলেছিলেন- তিন দিনেই তার নির্বাচনের সুর উঠে যাবে। সেটি তিনি করতে পেরেছেন। নিজে থেকেই চালাচ্ছেন প্রচারণা।
দলের বেশির ভাগ নেতাকর্মীও তার সঙ্গে প্রচারণায় নেমেছেন। এতে দেখা গেছে সীমান্ত জনপদের সবখানেই পৌঁছে গেছে তার নাম। বলা হয়ে থাকে; আরিফ উন্নয়নের প্রতীক। সিলেট নগরকে সাজিয়েছেন নিজের মতো করে। এবার অবহেলিত সিলেট-৪ আসনে উন্নয়নের পালা। ইতিমধ্যে আরিফুল হক চৌধুরী কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুরে সমাবেশ করেছেন। আর এসব সমাবেশে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ ছিল বেশি। এসব সমাবেশে আরিফ তিন উপজেলাকে উন্নত জনপদে রূপান্তর করার কথা বলছেন। জানিয়েছেন- নির্বাচনের মাঠে নামার আগে তিনি এলাকার উন্নয়নের কথা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসনকে জানিয়েছেন। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে এক বছরের মধ্যে তিন উপজেলার চেহারা পাল্টে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন আরিফ। আরিফের সঙ্গে সিলেটের তিন উপজেলার বিএনপি পুরোপুরি ঐক্যবদ্ধ নয়। দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা না করার কারণে নেতাকর্মীরা এখনো বিভক্ত। দলের নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন- প্রার্থীর নাম ঘোষণার পর সেটিও থাকবে না। তখন সবাই ধানের শীষের পক্ষে মাঠে ঐক্যবদ্ধ থাকবেন বলে জানান তারা।