Image description

জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশে অস্পষ্টতা রয়েছে বলে জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। তবে সরকার এসব অস্পষ্টতা দূর করতে উদ্যোগী হলে বা স্পষ্ট ব্যাখ্যা প্রদান করলে সনদে স্বাক্ষরের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে এনসিপি।

দলটি জানিয়েছে, সনদ বাস্তবায়ন আদেশে চারটি প্রস্তাবের উপর একটি প্রশ্নে গণভোট রাখা হচ্ছে। প্রস্তাব চারটির মধ্যে ক. প্রস্তাবে-নির্বাচনকালীন সময়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার, নির্বাচন কমিশন এবং অন্যান্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান জুলাই সনদে বর্ণিত প্রক্রিয়ার আলোকে গঠন করা হবে। এগুলোর ক্ষেত্রে নোট অব ডিসেন্ট অন্তর্ভুক্ত রাখা হবে কিনা। জুলাই সনদের আলোকে বাস্তবায়ন এটা আসলে কী বোঝানো হচ্ছে, সে বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা দিতে হবে। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কোন কোন প্রতিষ্ঠানকে রাখা হচ্ছে। উদাহরণ হিসেবে দলটি আরও বলছে, বাংলাদেশের বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী দুর্নীতি দমন কমিশন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান না। এই যে ক. প্রশ্নের গণভোটের প্রস্তাবের মধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশনকে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ধরা হয়েছে নাকি হয়নি। স্পষ্ট করে কোনো কিছুই জানানো হয়নি। বিষয়গুলো স্পষ্ট করলে এনসিপি সিদ্ধান্ত নেবে সনদে স্বাক্ষর করবে কিনা। 

গত ১৩ই নভেম্বর জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া এক ভাষণে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ ও গণভোট বিষয়ে জানিয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। নির্বাচনের দিন একই সঙ্গে গণভোট অনুষ্ঠিত হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। এদিকে, জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়নে আদেশ জারি করেছেন রাষ্ট্রপতি। এতে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) সহ প্রায় সব রাজনৈতিক দলের দাবি সমন্বয় করা হয়েছে। আদেশে বলা হয়েছে, সংসদ নির্বাচনে দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে (পিআর) উচ্চকক্ষ, সনদ অনুযায়ী তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনসহ চার বিষয়ে একটি প্রশ্নে গণভোট অনুষ্ঠিত হবে। এতে ‘হ্যাঁ-না’ ভোট দেবেন ভোটাররা। আদেশ জারির পর দলগুলো সতর্ক অবস্থানে থেকে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে স্বাগত জানিয়েছেন। 

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশে বলা হয়েছে, নির্বাচন এবং গণভোট একই দিনে হবে আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে। এর আগে প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের প্রতিক্রিয়ায় এনসিপি’র সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেছেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশে এমন কিছু জায়গায় অস্পষ্টতা রয়ে গেছে, যাতে সনদের পূর্ণ বাস্তবায়ন আদৌ সম্ভব হবে কিনা, সে প্রশ্ন উঠছে।

দলীয় সূত্র জানিয়েছে, এনসিপি জুলাই সনদ বাস্তবায়নের কয়েকটি বিষয়ে সরকারের কাছে স্পষ্ট ব্যাখ্যা চেয়েছে। বিশেষ করে গণভোটে ক. প্রশ্নে বলা হয়েছে- তত্ত্বাবধায়ক সরকার, নির্বাচন কমিশন ও অন্যান্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান সনদের আলোকে গঠিত হবে। কিন্তু কোন প্রতিষ্ঠানগুলোকে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে, তা স্পষ্ট করে বলা হয়নি। নোট অব ডিসেন্ট সংযোজন রাখা হবে কিনা-এ বিষয়েও কোনো স্পষ্ট ব্যাখ্যা নেই। সনদের কোন ব্যাখ্যা অনুসারে প্রতিষ্ঠান গঠিত হবে-এ বিষয়ে আরও স্পষ্ট ব্যাখ্যা চাইছে দলটি। সূত্র বলছে, সরকার এসব প্রশ্নের স্পষ্ট উত্তর না দিলে সনদে স্বাক্ষর করার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি।

দলীয় সূত্র আরও জানিয়েছে, সরকার যদি অস্পষ্টতা দূর করে। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে স্পষ্ট ব্যাখ্যা প্রদান করে। গণভোটের প্রশ্নগুলোর ব্যাখ্যা পরিষ্কার করে। তবেই এনসিপি জুলাই সনদে স্বাক্ষর করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। সরকার এসব স্পষ্ট না করলে এনসিপি’র পক্ষে আগানো সম্ভব নয় বলে স্পষ্ট জানিয়েছে দলটি। অস্পষ্টতা দূর করা হলে সনদে স্বাক্ষর করবে এনসিপি। 

এসব বিষয়ে এনসিপি’র যুগ্ম সদস্য সচিব মুশফিক-উস সালেহীন মানবজমিনকে বলেন, বাস্তবায়নের এসব বিষয়গুলো সরকারের দিক থেকে স্পষ্ট করা উচিত। জনগণকে জানাতে হবে কোন বিষয়গুলোতে গণভোট হচ্ছে। তারা কোন বিষয়ে ভোট দিচ্ছেন। সরকারকে এসব বিষয় স্পষ্ট করতে উদ্যোগী হতে হবে। স্বাক্ষর করার জন্য এসব বিষয়ে সরকারকেই স্পষ্ট করে উদ্যোগ নিতে হবে। 

উল্লেখ্য, গত ১৭ই অক্টোবর জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষর করেছে মোট ২৫টি রাজনৈতিক দল। ৩০টি দলের সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক হলেও আইনি ভিত্তি ও বাস্তবায়ন আদেশ নিশ্চয়তার দাবিতে স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে যায়নি জাতীয় নাগরিক পার্টি। সংবিধানের মূলনীতি সহ কয়েকটি বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে স্বাক্ষর করেনি বামপন্থি চারটি দল।