Image description
বরিশাল-৫

প্রতিদিনই আটটি ইসলামী দল নিজেদের সুদৃঢ় ঐক্যের বিষয়ে বক্তব্য দিয়ে চলেছেন। কিন্তু গোল বেধেছে বরিশাল-৫ আসন নিয়ে। চরমোনাই পীরের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত এ আসনে জামায়াতেরও রয়েছে বিপুল সমর্থক। চরমোনাই পীরেরও রয়েছে বিপুলসংখ্যক মুরিদ। জামায়াত,  আওয়ামী সরকার আমলে কোনো নির্বাচনে অংশ নেয়নি। তবে বিগত সিটি নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলন পরাজিত হন। এবার বরিশাল সদর আসন থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন দু’টি দলই। এ আসনে ইসলামী আন্দোলনের পক্ষে প্রার্থী হচ্ছেন দলের আমীর পীর সাহেব চরমোনাইয়ের ছোট ভাই এবং নায়েবে আমীর ও প্রভাবশালী নেতা সৈয়দ ফয়জুল করীম।

অপরদিকে, জামায়াত দুই মাস আগ থেকেই প্রার্থিতা ঘোষণা করে ফেলেছে। তৃণমূল পর্যায়ে তাদের প্রচার-প্রচারণা সব দলের চেয়ে বেশি। ইসলামী আন্দোলনের নেতারা জানান, আলোচনা মোতাবেক এ আসনে জামায়াতের প্রার্থী দেয়ার কথা নয়। জামায়াতও এ আসনটি ছাড়বে না বলে জানিয়েছেন। তাদের প্রার্থী সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও বরিশাল সদর আসনে প্রার্থী মোয়াজ্জেম হোসেন হেলাল। তিনি ১৯৯১ ও ’৯৬-এর নির্বাচনে জামায়াতের প্রার্থী ছিলেন। 

২০২৪ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত ছিল জোটবদ্ধ। ২০০১ ও ২০০৭ সালের নির্বাচনে জামায়াত জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করায় সদর আসনটি বিএনপিকে ছেড়ে দেয়। তবে, ১৯৯১ থেকে এ পর্যন্ত বরিশাল সদর আসনে সবক’টি নিরপেক্ষ নির্বাচন ও উপ-নির্বাচনে বিএনপিই বিজয়ী হয়েছে বিপুল ভোটের ব্যবধানে। অপরদিকে, কয়েক বছর আগেও ইসলামী আন্দোলন ছিল জামায়াতের কঠোর সমালোচক। জুলাই অভ্যুত্থানের পরে ইসলামী দলগুলো সমমনা দলগুলোর সঙ্গে একাত্মতার চেষ্টা করে যাচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জামায়াত-ইসলামী আন্দোলনসহ আটটি ইসলামী দল জোট করার ঘোষণা দেয়। কিন্তু গোল বেধেছে বরিশাল-৫ আসনটি নিয়ে। বৃহৎ ঐক্য নিয়ে জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলন এক কাতারে এলেও বরিশাল-৫ আসন নিয়ে রাজনীতিবিদদের মধ্যে একটা হিসাব-নিকাশ চলছিল। কে কাকে ছাড় দেবেন- এ প্রশ্নটি অনেক আগ থেকেই বাতাসে ভাসছিল। দুই মাস আগে জামায়াত বরিশালের আসনগুলোতে তাদের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে। বরিশাল-৫ আসনে প্রার্থী করা হয় জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও বরিশাল সদর আসনে এডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন হেলালকে। তিনি পরিচিত একটি মুখ। বিগত ১৬ বছর আওয়ামী সরকার কর্তৃক নির্যাতিত এবং দলের ত্যাগী এক নেতা। দুই মাস থেকেই তার পক্ষে মাঠে নামেন দলের সব নেতৃবৃন্দ ও তৃণমূল কর্মীরা। বিশেষ করে নারী কর্মীরা এরইমধ্যে ঘরে ঘরে হেলালের পক্ষে ব্যাপক প্রচারণা চালিয়ে অবস্থান তৈরি করেছেন। দাঁড়িপাল্লার পক্ষে প্রতিদিনই সভা সমাবেশ, উঠান বৈঠক এমনকি মিছিল, র‌্যালি হচ্ছে। সর্বশেষ ছিল শুক্রবার মোটরসাইকেল র‌্যালি। সহস্রাধিক মোটরসাইকেলযোগে বিশাল র‌্যালিটি নগরবাসীর দৃষ্টি কাড়ে। 

অপরদিকে, বরিশাল সদর উপজেলায় চরমোনাই গ্রামেই চরমোনাই পীরের আবাসস্থল, মূল ঘাঁটি। বিগত আওয়ামী লীগ সরকার আমলে দলটি সিটি নির্বাচনে অংশ নেয়। সর্বশেষ সিটি নির্বাচনে দলের প্রার্থী ফয়জুল করীম ৩৩ হাজার ৮২৮ ভোট পান। এ নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত অংশ নেয়নি। চরমোনাই পীরের বিপুলসংখ্যক মুরিদ রয়েছেন। এ কারণে এ আসনটি নিয়ে স্বপ্ন দেখছেন দলের নেতারা। কিন্তু জামায়াত ইসলামী আসনে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালালে ইসলামী আন্দোলনের নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ। দলটির সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সিনিয়র নায়েবে আমীর মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল-মাদানী জানান, কথা ছিল বরিশাল সদর ও ঢাকা-৪ আসনে জামায়াত ইসলামী কোনো প্রার্থী দেবে না। খুলনায় জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেলের আসনেও ইসলামী আন্দোলনসহ সমমনা জোটের কোনো দল প্রার্থী দেবে না। কিন্তু বরিশাল-৫ আসনটিতে তাদের নির্বাচন করার পূর্ব প্রস্তুতি চলমান রয়েছে। 

জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও বরিশাল সদর আসনে প্রার্থী মোয়াজ্জেম হোসেন হেলাল বলেন, আমি এ আসনে প্রার্থী হওয়ার লক্ষ্যেই সব প্রচার-প্রচারণায় মাঠে রয়েছি। এখনো কোনো আসনে কাউকে ছাড় দেয়ার কথা হয়নি। দল আমাকে সরে দাঁড়াতেও বলেনি। বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী আমার সঙ্গে রয়েছে। পাশাপাশি বিগত তিনটি সাধারণ নির্বাচনে যারা ভোট দিতে পারেনি, তারাও তাদের মূল্যবান ভোটটি দেয়ার লক্ষ্যে উন্মুখ হয়ে আছে। তাই আমি তাদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই নির্বাচনী মাঠে আছি ও থাকতে চাই। দল যদি সরে দাঁড়াতে বলে, তখন কী করবেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখনো সে ধরনের কোনো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। আমরা তো দলের বাইরে কেউ না। অপরদিকে, বিএনপি’র প্রার্থী এডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার দলগত ঐক্য নিয়ে সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছেন। কোন্দলে জর্জরিত দলটি এবার ধানের শীষকে বিজয়ী করার জন্য এক কাতারে চলে এসেছে। ধারণা করা হচ্ছে, ইসলামী দলগুলো তাদের ঐকমত্যে একক প্রার্থী দিতে পারলে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়তে হতে পারে সরোয়ারকে। তবে সেই প্রার্থী কে হবেন, তা নিয়েই চলছে টানাপড়েন।