হত্যাকাণ্ড-হামলা যেন খুলনার নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে। গত বছরের ৫ আগস্টের পর খুলনায় অর্ধশত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। গুলি ও হামলার ঘটনা ঘটেছে শতাধিক। অনেক ঘটনায় পুলিশ অপরাধীদের গ্রেফতার করলেও থামছে না অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড। হামলা, খুন এবং সন্ত্রাস আতঙ্কে খুলনার রাজনৈতিক মহলেও চলছে অস্থিরতা। নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে এলেও খুলনার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখনো নিয়ন্ত্রণে আসেনি। ফলে নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটছে নগরবাসীর।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শনিবার (২২ নভেম্বর) নাইম (২৬) নামের এক যুবককে কুপিয়ে জখম করে দুর্বৃত্তর। তার আগের দিন হরিণটানা এলাকায় রাজু (২৮) নামের একজন গুলিবিদ্ধ হন। ১৬ নভেম্বর লবণচরা এলাকায় নানিসহ দুই নাতির মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ১৬ নভেম্বর খুলনার করিমনগর এলাকায় মো. আলাউদ্দিন নামের এক যুবককে প্রথমে গুলি ও গলা কেটে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। তার স্ত্রীর সামনেই এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
গত ১২ নভেম্বর খুলনা সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। ১৪ অক্টোবর দুর্বৃত্তদের সশস্ত্র হামলায় দুই যুবক গুলিবিদ্ধ হন। ৬ অক্টোবর রাতে নগরীর কাস্টম ঘাট এলাকায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন ইমরান মুন্সি (২৯) নামের এক যুবক। ৯ অক্টোবর হাউজিং বাজারে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয় ব্যবসায়ী সবুজ খানকে। ২৮ অক্টোবর রাতে মহানগরীর দৌলতপুরের মহেশ্বরপাশা খুঠিরঘাট এলাকায় কুয়েট কর্মচারীর বাড়ি লক্ষ্য করে গুলি করে দুর্বৃত্তরা। ৩০ সেপ্টেম্বর খুলনার দৌলতপুরে ঘুমন্ত অবস্থায় তানভীর হোসেন শুভ (২৮) দুর্বৃত্তদের গুলি নিহত হন।
একাধিক মামলার তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত প্রায় এক বছরে খুলনায় ৫০টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। গুলি ও হামলার ঘটনা রয়েছে তার দিগুণেরও বেশি। এসব ঘটনায় বিভিন্ন থানায় ৩০টিরও বেশি মামলা হয়েছে। প্রায় ৭০ শতাংশ হত্যাকাণ্ডের পেছনে রয়েছে মাদক ব্যবসা নিয়ে দ্বন্দ্ব এবং আধিপত্য বিস্তারের লড়াই।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) একজন কর্মকর্তা বলেন, খুলনার দৌলতপুর, ফুলবাড়িগেট ও খালিশপুর এলাকায় হত্যাকাণ্ডের ঘটনার সঙ্গে ‘চরমপন্থি কানেকশন’ রয়েছে। সদর থানা, সোনাডাঙ্গা থানা এবং লবণচরা থানা এলাকায় একাধিক হত্যাকাণ্ডে সন্ত্রাসীদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। প্রায় ২০টি মামলায় পূর্ব শত্রুতার জের খুঁজে পাওয়া গেছে। অন্যান্যগুলো মাদক ব্যবসার দ্বন্দ্ব নিয়ে সংঘটিত।
কেএমপির এই কর্মকর্তা আরও জানান, একাধিক হামলার ঘটনায় ‘গ্রেনেড বাবু’ গ্রুপের নাম উঠে এসেছে। তবে অনেক সন্ত্রাসী গ্রেনেড বাবুর নামও ব্যবহার করেছে। আশিক গ্রুপের আধিপত্য থাকলেও খুনের সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্টতা সরাসরি নেই। নূর আজিম গ্রুপের নূর আজিম দীর্ঘদিন ধরে কারাবন্দি। পুলিশের তালিকায় থাকা পলাশ বাহিনীর পলাশসহ তার গ্রুপের বড় একটি অংশ এখন কারাগারে। এই চার গ্রুপের অনুসারীরাই বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে দাবি তার।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক এবং খুলনা-৬ আসনে এনসিপির মনোনয়নপ্রত্যাশী সাজিদুল ইসলাম বাপ্পি বলেন, খুলনায় সন্ত্রাসীদের তৎপরতা কমানো যাচ্ছে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যর্থতা দেখা যাচ্ছে। তারা অপরাধীদের দেখেও না দেখার ভান করছেন। এমনটি বেশ কিছু ঘটনায় দেখা গেছে। পুলিশের একটি অসাধু অংশ সন্ত্রাসী এবং আওয়ামী ক্যাডারদের তথ্য দিয়ে পালিয়ে যেতে সাহায্য করছে।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতি করা দরকার বলে মনে করেন খুলনা-২ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু।
তিনি বনে, ‘একটা ঝুঁকি রয়েছে। ফ্যাসিবাদরা এখনো সক্রিয়। তারা বিদেশে বসে বিভিন্ন চক্রান্ত করছেন। খুলনাসহ সারাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আনতে সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থাকে একযোগে কাজ করতে হবে।
এ বিষয়ে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম) মোহাম্মদ রাশিদুল ইসলাম খান বলেন, অপরাধ দমন করতে সবাইকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। অপরাধীদের ধরতে পুলিশ সক্রিয় রয়েছে
জানতে চাইলে কেএমপি কমিশনার জুলফিকার আলী হায়দার জাগো নিউজকে বলেন, ‘এসব হত্যাকাণ্ড-হামলার ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির কোনো সম্পর্ক নেই। ৯০ শতাংশই মাদককেন্দ্রিক। এছাড়া ব্যক্তিগত আক্রোশ, স্বার্থের কারণেও এসব ঘটনা ঘটছে।’