Image description

কয়েক মাস আগেই দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছিলেন ইসলামী রাজনৈতিক দলের নেতারা। তখন থেকে মাঠে কাজ শুরু করেন প্রার্থীরা। প্রথমে দলের অভ্যন্তর ও পরে মাঠে কাজ শুরু করেন তারা। পিছিয়ে ছিল বিএনপি। একাধিক প্রার্থী মাঠে। ভোটেও বিভক্তি। বিব্রত ছিলেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা। কার পক্ষ নেবেন- সে নিয়ে ছিল প্রশ্নও। অনেকেই মাঠে ছিলেন কৌশলী। সেই অবস্থার অবসান দল থেকেই হয়েছে। প্রার্থী ঘোষণার পর ভোটের মাঠ হঠাৎ করেই নীরব। একাধিক প্রার্থীর দৌড়ঝাঁপ নেই। আছেন কেবল দলীয় প্রার্থী।

তিনি প্রস্তুতি নিচ্ছেন, একই সঙ্গে দলের নেতাকর্মীদেরও একীভূত করছেন। কোথাও এটি সহজ হচ্ছে আবার কোথায়ও আছে ক্ষোভ। তবে সেটির প্রকাশ সিলেটে প্রকাশ্যে হচ্ছে না।  ঘোষিত প্রার্থীদের মধ্যে অনেকেই আছে যারা ভোটের মাঠে একেবারেই নবাগত।  দেশের আন্দোলনে ছিলেন না। কেউ কেউ দেশে থাকলেও রহস্যময় ভূমিকায় ছিলেন। সব মিলিয়ে এখন প্রার্থীদের কাঁধেই সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করার দায়িত্ব পড়েছে। আর সেটি তিনি না করতে পারলে ভোটের মাঠে জয় পাওয়া সহজও হবে না।

সিলেট-১ আসনে বিএনপি’র প্রার্থী দলটির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির। সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ছিলেন তার ভোটের বাধা। দল থেকে প্রার্থী ঘোষণার পর তিনি নির্ভার হয়েছেন। তার মাঠ সাজানোই রয়েছে। ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর থেকে তিনি মাঠে রয়েছেন। সিলেট বিএনপি’র বেশির ভাগ নেতাকর্মী তার পক্ষে একাট্টা। এ কারণে ভোটেও পড়েছে প্রভাব। পারিবারিক খ্যাতির কারণে অনেক বেশি এগিয়ে তিনি। আপাতদৃষ্টিতে মনে করা হচ্ছে তার সঙ্গে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা কেউ গড়ে তুলতে পারবেন না। দল থেকে প্রার্থী ঘোষণার আগেই সিলেটে মাজার জিয়ারত করে প্রচারণায় নেমেছিলেন। ওই দিন থেকেই এবারের নির্বাচনে তার আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু।

সিলেট-২ আসনে বিএনপি ঐক্যবদ্ধ। দলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলী গুম হওয়ার পর থেকে মাঠে তার স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনা। তিনি একক প্রার্থী। মাঝখানে দলটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক (যুগ্ম মহাসচিব পদমর্যাদা) হুমায়ূন কবির এসে ভাগ বসিয়েছিলেন। পরবর্তীতে দলের পদ পাওয়ায় তিনি নীরব হন। প্রার্থী ঘোষণার পর লুনার পক্ষেই ঐক্যবদ্ধ বিশ্বনাথ ও ওসমানীনগরের বিএনপি’র কর্মী-সমর্থকরা। স্থানীয় নির্বাচন করে যারা দল থেকে বহিষ্কার হয়েছিলেন বা যারা দল ছেড়েছিলেন তারা এখন দলে ফেরার অপেক্ষায় রয়েছেন। দলীয় প্রার্থী হিসেবে তার নাম ঘোষণা করার পরদিনই তিনি হযরত শাহজালাল রহমাতুল্লাহির মাজার জিয়ারত করে প্রচারণা শুরু করেছেন। এখন প্রতিদিনই এলাকায় লুনার পক্ষে নির্বাচনী কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। নিজে মাঠে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। বড় ছেলে ব্যারিস্টার আবরার ইলিয়াসও ইতিমধ্যে ভোটের মাঠে নেমেছেন। 

সিলেট-৩ আসনে বিএনপি’র প্রার্থী এবার নবাগত এমএ মালিক। তিনি যুক্তরাজ্য বিএনপি’র সভাপতি। এর আগে তিনি নির্বাচন করেননি কিংবা ভোটের মাঠে ছিলেন না। এ আসনে প্রার্থী ছিলেন অনেকেই। তার মধ্যে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার এমএ সালাম, জেলা বিএনপি’র সভাপতি আব্দুল কাইয়ূম চৌধুরী ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক দল আহ্বায়ক আব্দুল আহাদ খান জামাল ছিলেন অন্যতম। প্রার্থী ঘোষণার পর নিজের নির্বাচনী কাজ ছেড়ে ধানের শীষের প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন খান জামাল। অন্যরা এখনো স্বতন্ত্র অবস্থায় আছেন। যতই দিন যাবে সবাই ভোটের মাঠে ধানের শীষের পক্ষে ঝাঁপিয়ে পড়বেন বলে আশা করছেন এমএ মালিকের কর্মী-সমর্থকরা। দূরত্ব কমাতে মালিক নিজেও কাজ করছেন। ইতিমধ্যে তিনি তৃণমূল থেকে বিএনপি’র নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।

সিলেট-৪ আসনে বিএনপি’র প্রার্থী ঘোষণা না করলেও সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী মাঠে নামায় বদলে যাচ্ছে দৃশ্যপট। দলীয় চেয়ারপারসন ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসনের নির্দেশে তিনি মাঠে নেমেছেন বলে জানিয়েছেন। আরিফ নেমেই মাঠ সাজাতে শুরু করেছেন। তার পক্ষে বিএনপি’র পদবিধারী নেতারা অবস্থান নিয়ে ভোটের মাঠে সক্রিয় হচ্ছেন। প্রার্থী ঘোষণা না করায় এ আসনে ভোটের মাঠে এখনো আছেন দলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকী, সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা এডভোকেট শামসুজ্জামান জামান, জেলা বিএনপি’র উপদেষ্টা আব্দুল হাকিম চৌধুরী সহ কয়েকজন নেতা। এ আসনে প্রার্থী ঘোষণা না হওয়ায় তারা এখনো দলের কাছে মনোনয়নের ব্যাপারে আশাবাদী। শুক্রবার এ আসনের সাবেক এমপি দিলদার হোসেন সেলিমের কবর জিয়ারতের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছেন আরিফ। কয়েকদিন আগে সিলেটে মাজার জিয়ারতের মাধ্যমে ধানের শীষের পক্ষে প্রচারণা শুরু করেছিলেন তিনি। আরিফুল হক চৌধুরী জানিয়েছেন-- তিনি ভোটের মাঠে নামায় দলের নেতাকর্মীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে ধানের শীষের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন। এবার তিন উপজেলার মানুষও ধানের শীষের পক্ষে রায় দেবেন। হাটে-মাঠে সবখানেই মিলছে সাড়া।

সিলেট-৫ আসনে বিএনপি’র তরফ থেকে এখনো প্রার্থী ঘোষণা হয়নি। মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন জেলা বিএনপি’র প্রথম সহ- সভাপতি মামুনুর রশীদ চাকসু মামুন, জেলা বিএনপি’র যুগ্ম সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান পাপলু ও ইইউ বিএনপি’র সভাপতি জাকির হোসাইন। এ আসন নিয়ে বিএনপি’র হাইকমান্ড এবারো বিকল্প ভাবনায় রয়েছে বলে জানা গেছে। তবে এ আসনে ধানের শীষ ফেরাতে বিএনপি’র নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ রয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রার্থীরা।

সিলেট-৬ আসনে জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরীর নাম প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। প্রার্থী ঘোষণার দিনই এমরান তার সঙ্গে মাঠে থাকা প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের বাসায় ছুটে গেছেন। তাদের সঙ্গে দূরত্ব কমানোর চেষ্টা করছেন। আসনের গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজারে দলের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করার কাজ করছেন বলে জানিয়েছেন নেতাকর্মীরা।